ফিফা বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম ও উন্নত প্রযুক্তির বল 'আল রিহলা'
https://parstoday.ir/bn/news/world-i115960-ফিফা_বিশ্বকাপ_ইতিহাসের_সবচেয়ে_দ্রুততম_ও_উন্নত_প্রযুক্তির_বল_'আল_রিহলা'
ফিফা বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে এবার সবচেয়ে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির বল দিয়ে খেলা হবে।  'আল রিহলা' নামে দুর্দান্ত এই বলটি বিশ্বকাপের ১৪ তম ম্যাচ বল। ইতিহাস এবং আধুনিকতার মেলবন্ধনে তৈরি করা হয়েছে এই ফুটবলটি।
(last modified 2025-09-11T14:06:22+00:00 )
নভেম্বর ১৬, ২০২২ ১৫:৪৫ Asia/Dhaka
  • আল রিহলা বলের উন্মোচন করেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি ও দক্ষিণ কোরিয়ার তারকা ফরোয়ার্ড সন হিউং-মিন
    আল রিহলা বলের উন্মোচন করেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি ও দক্ষিণ কোরিয়ার তারকা ফরোয়ার্ড সন হিউং-মিন

ফিফা বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে এবার সবচেয়ে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির বল দিয়ে খেলা হবে।  'আল রিহলা' নামে দুর্দান্ত এই বলটি বিশ্বকাপের ১৪ তম ম্যাচ বল। ইতিহাস এবং আধুনিকতার মেলবন্ধনে তৈরি করা হয়েছে এই ফুটবলটি।

আরবী 'আল রিহলা' শব্দের অর্থ 'ভ্রমণ'। সংস্কৃতি, স্থাপত্য, কাতারের জাতীয় পতাকা আইকনিক বোট- সব কিছু এই বলের গায়ে রাখা হয়েছে। কাতারের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয় ‘আল রিহলা’কে। বলটির গঠন, আকৃতি ও রঙ নির্ধারণ করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে। সাদা ধবধবে বলটির মধ্যে আছে গোলাপির আভা, সঙ্গে নিয়ন হলুদ ও নীল রঙের ছোঁয়া।

এই ম্যাচ বলে একাধিক অত্যাধুনিক প্রযুক্তিও ব্যবহার করেছে ফিফা। ভিএআর প্রযুক্তি ও অফসাইড বুঝতেও সাহায্য করবে এই বল। প্রত্যেক বিশ্বকাপে অফিসিয়াল ম্যাচ বলের নাম পাল্টানো হয়। বলে একাধিক সুবিধাও রাখা হয়।  

ম্যাচের গতি বাড়িয়ে দেবে এই বল। বিগত বিশ্বকাপগুলোর ম্যাচ বলের থেকে এই বল হাওয়ার অনেক দ্রুত এগোবে। তাই বিশ্বকাপে খেলার গতি আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কার প্রতিবেদন অনুসারে, এই নিয়ে টানা ১৪টি আসরে বলের প্রস্তুতকারক হিসেবে নাম থাকছে অ্যাডিডাসের।

অ্যাডিডাস জানিয়েছে, এই প্রথম ম্যাচের রিয়েল টাইম ডেটা পাওয়া যাবে বলটি থেকে। সেমি-অটোমেটেল অফসাইড টেকনোলজি ও ভিএআর সিস্টেমের তথ্যের মাধ্যমে রেফারিদের সিদ্ধান্ত নেওয়া আরও সহজ হবে।

বলটি তৈরি হয়েছে পাকিস্তানে। বলগুলো তৈরি হয়েছে দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর শিয়ালকোটের একটি কারখানায়।  সেখানে ফরওয়ার্ড স্পোর্টস নামের প্রতিষ্ঠানের কারখানায় তৈরি হয়েছে বল। প্রতি মাসে এই কোম্পানি ৭ লাখ ফুটবল বানায়।

 রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্যবহৃত বল ‘টেলস্টার ১৮’

বিশ্বকাপ বলের ইতিহাস:

১৯৩০ সাল থেকে শুরু হয় ফুটবল বিশ্বকাপ। ফুটবল তখন খেলত গুটি কয়েক দেশ। এক দেশেরই একাধিক দল অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল তখন। তা ছাড়া ফুটবলের বল কিংবা অন্যান্য দিক নিয়ে তেমন আলোড়ন তখন সৃষ্টি হয়নি।

কিন্তু দ্রুতই রূপ বদলাতে থাকে ফুটবলের এই বৈশ্বিক আয়োজন। একটা সময় 'গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ' বলা হতো অলিম্পিককে। সেই তকমাটা নিজের করে নেয় ফুটবল বিশ্বকাপ। পরিবর্তন আসতে শুরু করে আকার, আয়োজন, জনপ্রিয়তা সবক্ষেত্রে। তবে বলের দিকটি ভাবনায় আসে আরও অনেক পরে। সেটা আসে ১৯৭০ সালের পর থেকে।

১৯৩০ সালে উরুগুয়ে বিশ্বকাপে ব্যবহৃত বল

১৯৭০ সালের আগ পর্যন্ত স্বাগতিক দেশই বল প্রস্তুত করতো। তখন কোনো অফিশিয়াল বল ছিল না। টি-মডেল দিয়ে শুরু হয়েছিল প্রথম বিশ্বকাপ। পরের আসরে ইতালির বল ফেদেরালে ১০২ দিয়ে খেলা হয়েছিল। ১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপ হয়েছিল ফ্রান্সে। সেই আসরে  অ্যালেন দিয়ে খেলা হয়েছিল।

১৯৭৪ সালে জার্মানি বিশ্বকাপে ব্যবহৃত বল

১৯৫০ সাল থেকে চামড়ার বল ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়। যার নাম দেওয়া হয় দুপলো টি। এরপর ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে বল নিয়ে চমক দেখায় খেলাধুলার সামগ্রী প্রস্তুতকারী জার্মান প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস।

বল প্রস্তুতকরণে তাদের আগমন পুরোনো সংস্কৃতি বদলে দেয়। ১৯৭০ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে টেলস্টার বলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় অ্যাডিডাস। যাতে প্রথমবার ব্যবহৃত হয় সাদা-কালো রং। পরের আসরে জার্মানিতে ১৯৭৪ সালেও একই ডিজাইনের বল দিয়ে খেলা হয়। যেটার নাম ছিল টেলস্টার ড্যুরলাস্ট। এভাবেই চলে পরের কয়েকটি বিশ্বকাপ।

এরপর ১৯৯৮ সালের ফ্রান্স আসরে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ বলে তিন রংয়ের ব্যবহার করা হয়। যেটির নাম ছিল ট্রাইকালার। ২০০২ সালের বিশ্বকাপে ব্যবহৃত হয় ফিবারনোভা। পরের আসরে জার্মানিতে টিমগাইস্ট দিয়ে খেলা হয়।

২০১০ সালের বিশ্বকাপে বল

২০১০ সালের বিশ্বকাপে বল নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় অ্যাডিডাসকে। ওই আসরে তারা বলের আকৃতিতে বেশ পরিবর্তন আনে। বলের প্যানেল ১৪ থেকে ৮-এ নামিয়ে আনে তারা। তখন এই বল আরও মসৃণ হয়ে ওঠে। কিন্তু বেশ সমালোচনা শুনতে হয়। এই সমালোচনার জন্যই বলটি নাম দেওয়া হয় জাবুলানি। ব্রাজিলের গোলরক্ষক হুলিও বলটিকে সুপার মার্কেটে বিক্রি হওয়া সস্তা বলের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। এ ছাড়া ইকার ক্যাসিয়াস বলটিকে বলেছিলেন ‘ভয়ঙ্কর’। অ্যাডিডাসের দাবি ছিল, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই তারা জাবুলানিকে মাঠে ছেড়েছে।

২০১০ সালের সমালোচনার পর ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে ব্রাজুকা পরিচয় করিয়ে দেয় অ্যাডিডাস। ওই বলটিতে ব্রাজিলিয়ান উইশ ব্যান্ডের অনুকরণে এর প্যানেলগুলোকে বহু রঙের ফিতার মতো রাঙানো হয়। এই বলে প্যানেল কমিয়ে আট থেকে ছয়টিতে নামানো হয়। এর জন্য ব্যাখাও দেয় তারা।

আল রিহলা বল

সবশেষ রাশিয়া বিশ্বকাপে অ্যাডিডাস আবার চমকে দেয়। তারা ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপের কথা স্মরণ করে ফের মাঠে আনে টেলস্টার। বলটির ডিজাইনও করা হয়ে ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপের আদলে। তবে সেটি নিয়ে কোনো সমালোচনা হয়নি। এবারের ম্যাচ বল 'আল রিহলা' নিয়েও কোনো সমালোচনা শোনা যায়নি। চলতি বছরের মার্চের শেষে এ বলের উন্মোচন করেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি ও দক্ষিণ কোরিয়ার তারকা ফরোয়ার্ড সন হিউং-মিন।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।