ফ্রান্স ও ইরানে দাঙ্গা ও সহিংসতা: বিক্ষোভকারীদের প্রতি ফরাসি সরকারের দ্বিমুখী আচরণ
(last modified Tue, 04 Jul 2023 07:10:07 GMT )
জুলাই ০৪, ২০২৩ ১৩:১০ Asia/Dhaka

গত মঙ্গলবার প্যারিসের উপকণ্ঠে অবস্থিত নান্তেরে এলাকায় মরক্কো বংশোদ্ভূত ফরাসি-আলজেরিয়ান কিশোর নাহেল মারজুককে বিনা প্ররোচনায় হত্যার পর ফ্রান্সেজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ এবং দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।

গত কয়েকদিন ধরে ফ্রান্সের রাজধানী এবং দেশটির অন্যান্য শহর যেমন মার্সেই, লিওন, স্ট্রাসবার্গ, টুলুস এবং লিলে বিক্ষোভের আগুনে পুড়ছে এবং বিক্ষোভকারীরা নজিরবিহীন তাণ্ডব চালিয়েছে। এমনি বিক্ষোভকারীরা মার্সেই শহরে একটি পাবলিক পতিতালয় পুড়িয়ে দিয়েছে। এসব বিক্ষোভ এবং দাঙ্গার জেরে পুলিশ প্রথম চার দিনে ১,৮৬৯ জনকে আটক করেছে। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে শনিবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত সারা দেশে ১০১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যার মধ্যে ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাজধানী থেকে। এই ভয়াবহ দাঙ্গার বিষয়ে এক পরিসংখ্যান তথ্য জানিয়েছে যে আহত পুলিশ সদস্যের সংখ্যাও ৩০০ জনে পৌঁছেছে। ফরাসি সরকার বিক্ষোভ সামলাতে সারা দেশে ৪৫ হাজারের  বেশি পুলিশ ও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী পাঠাতে বাধ্য হয়েছে।

এরই মধ্যে যে বিষয়টি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে তা হল ইরানে গত বছর এই ধরনের বিক্ষোভ ও সহিংসতার প্রতি ফ্রান্সের দ্বিমুখী নীতি। ফরাসি সরকার এখন যেখানে নিজ দেশের সহিংস কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছে এবং জড়িতদের শাস্তি দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। কিন্তু গত বছর ইরানে দাঙ্গাকারীদের মাধ্যমে সৃষ্ট সহিংসতা এবং তাণ্ডবের প্রতি ফরাসি সরকার সমর্থন জানিয়েছিল।

এ ব্যাপারে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাাকরন তার দেশের বর্তমান সঙ্কট ও ব্যাপক দাঙ্গার জন্য সামাজিক নেটওয়ার্ক গুলোর ভূমিকাকে দায়ী করার চেষ্টা করেছেন।ম্যাকরন বলেন, সামাজিক নেটওয়ার্কগুলো ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং জোর দিয়ে বলেন যে আমরা সামাজিক নেটওয়ার্কগুলিতে উস্কানিমূলক বিষয়বস্তু মুছে ফেলার জন্য বিধিনিষেধমূলক ব্যবস্থা প্রয়োগ করব এবং এই নেটওয়ার্কগুলিকে অবশ্যই সংবেদনশীল বা স্পর্ষকাতর বিষয়বস্তু সরিয়ে ফেলতে হবে এবং তাদেরকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

ফ্রান্সের মার্সেই শহরে বিক্ষোভকারীদের দমনে ব্যস্ত ফরাসি পুলিশ। 

অথচ ইরানে গত বছরের দাঙ্গায় বাক ও সমাবেশের স্বাধীনতার অজুহাতে ম্যাকরান ইরানে সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোর ওপর বিধিনিষেধ করা বা সেগুলোকে ফিল্টারিং করার বিরোধিতা করেছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে ফ্রান্সের বর্তমান বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী কিশোর ও যুবকদের পিতামাতার জন্য কঠোর শাস্তির ঘোষণা। ফ্রান্সের বিচারমন্ত্রী এরিক ডুপন্ট মোরেটি শনিবার বলেছেন যে ১৭ বছরের কম বয়সী শিশু যারা  ফ্রান্সে পুলিশের হাতে এক কিশোরকে হত্যার কারণে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন তাদের অভিভাবককে দায়ী করা যেতে পারে। যেসব পিতামাতা তাদের সন্তানদের ঠিকভাবে দেখাশোনা করতে পারেন না বা রাতের বেলা বাইরে যা ঘটছে তা জেনেও তারা তাদের শিশুদেরকে সেখানে পাঠাচ্ছেন তাদেরকে দুই বছরের জেল এবং ৩০ হাজার ইউরো জরিমানা করা হবে। 

অন্যদিকে ফরাসি কর্তৃপক্ষ এবং দেশটির সংসদ বারবার ইরানে দাঙ্গাকারীদের উৎসাহিত করেছিল এবং তাদের পিতামাতাদেরকে এই দাঙ্গায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ উপেক্ষা করেছিল। একইসঙ্গে তারা ইরানি সরকার এবং ইরানি পুলিশ বাহিনীর আচরণের  ব্যাপক সমালোচনা করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর কোনোটিই বিরোধী মত ও বিক্ষোভকারীদের নাশকতামূলক পদক্ষেপ নিতে বা সমাজে নিরাপত্তাহীনতা ও অশান্তি সৃষ্টির অনুমতি দেয় না তবুও ফরাসি সরকার বারবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের দমন করে সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে নিয়োজিত ইরানি পুলিশ বাহিনীর ভূমিকার সমালোচনা করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ করেছে। অন্যদিকে, ইরানে অস্থিরতা বাড়াতে মানবাধিকার ইস্যুকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে ফ্রান্স অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে একত্রিত হয়ে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নতুন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়েছে।#

পার্সটুডে/বাবুল আখতার/৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।