আগস্ট ০৮, ২০২৩ ১৮:২০ Asia/Dhaka

ইউরোপের কয়েকটি দেশে বার বার পবিত্র কুরআনের অবমাননার ঘটনা ঘটার প্রেক্ষাপটে এর বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন মুসলিম ও অমুসলিম বিশ্বের কোনো কোনো নেতৃবৃন্দ।

অমুসলিম বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও পোপ ফ্রান্সিসের পর এ বিষয়ে সরব হয়েছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো।

পুতিন বলেছিলেন রাশিয়ায় কুরআনের অবমাননা গুরুতর অপরাধ। ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্ম গুরু পোপ ফ্রান্সিসও কুরআন পোড়ানোর ঘটনাকে বর্বরতা বলে নিন্দা জানিয়েছেন। তবে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ এসব ঘটনায় নিন্দা জানাননি। তাদের কেউ কেউ এ বিষয়ে নিরব রয়েছেন অথবা বাক-স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে অবমাননার পক্ষে সাফাই দিয়ে যাচ্ছেন।

এ অবস্থায় সম্প্রতি ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো কুরআন অবমাননার বিষয়ে নিন্দা জানাতে ব্যর্থ অথবা নিরব হয়ে থাকা ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দের গভীর নিরবতায় তিনি দুঃখিত বলে উল্লেখ করেছেন। নিকোলাস মাদুরো আরও বলেছেন, যারা এই অপরাধের বিষয়ে নিরব থেকে এই অপরাধের শরিক হয়েছেন আমি তাদের নিন্দা জানাচ্ছি ঠিক যেমনটি আমি দেখতে পাচ্ছি ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে নিরব রয়েছেন।

মাদুরো আরও বলেছেন, আমি বিশ্বের খ্রিস্টানদের প্রশ্ন করছি, সুইডেন অথবা ডেনমার্কে অথবা অন্যান্য দেশে যদি খ্রিস্টানদের পবিত্র বই পোড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয় তাহলে আপনাদের অনুভূতি কেমন হবে? আমি একজন খ্রিস্টান হিসেবে আমাকেও প্রশ্ন করছি, যদি কেউ খ্রিস্টানদের পবিত্র বই বাইবেল পোড়ানোর পদক্ষেপ নেয় তাহলে আমাদের কাছে তথা খ্রিস্টানদের কাছে কেমন লাগবে?- আমরা খুবই ক্ষুব্ধ হব; কেউ পবিত্র গ্রন্থ পোড়ালে তা হবে বড় ধরনের অবমাননা।

তিনি আরও বলেছেন, বিশ্বের মুসলমানরা যখন দেখছেন যে পবিত্র কুরআন পোড়ানো হচ্ছে তখন তাদের মধ্যে যে ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে আমি তা হৃদয়ের গভীর থেকে অনুভব করছি।

আসলে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট পশ্চিমা আধিপত্যবাদ ও পশ্চিমা অপসংস্কৃতি বা কথিত পশ্চিমা নীতিমালা তথা বস্তাপচা মূল্যবোধগুলোর বিরোধী বলেই কুরআন অবমাননা তাঁর কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়নি। অন্যদিকে সুইডেন ও ডেনমার্কের নেতৃবৃন্দ মুখে বাক স্বাধীনতার কথা বললেও বাক-স্বাধীনতার অপপ্রয়োগের নীতিতে বিশ্বাসী বলেই ২০০ কোটিরও বেশি মুসলমানের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের এমন বর্বরোচিত অবমাননাকে গ্রহণযোগ্য বলে পরোক্ষভাবে মদদ যুগিয়ে যাচ্ছেন।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে কুরআন অবমাননার নিন্দা জানানো সত্ত্বেও এবং এমনকি এ জাতীয় পদক্ষেপগুলো ভবিষ্যতে ঠেকানো হবে বলে সুইডিশ ও ডেনিশ নেতৃবৃন্দ প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও এখনও মূলত তাদেরই সবুজ সংকেতে ইসলাম-বিদ্বেষী মহল পবিত্র কুরআন অবমাননার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ কারণেই মাদুরো এইসব উগ্র ডানপন্থী, বর্ণবাদী ও চরমপন্থী গ্রুপগুলোর কুরআন বিদ্বেষী তৎপরতার নিন্দা জানিয়েছেন।

 জাতিসংঘের বিবৃতিতেও কুরবানির ঈদের দিনে 'সভ্য ইউরোপের' কোনো দেশের মসজিদের সামনে কুরআনের কপি পোড়ানোর ঘটনাকে নোংরা ও অপছন্দনীয় কাজ এবং মুসলমানদের প্রতি অবমাননা বলে নিন্দা জানানো হয়েছে। বাক-স্বাধীনতার অপপ্রয়োগ করে ধর্ম-বিশ্বাসীদের পবিত্র বিষয়ের অবমাননা কখনও যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

বিস্ময়ের বিষয় হল এই পাশ্চাত্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সংঘটিত কথিত ইহুদি-নিধনযজ্ঞ বা হলোকাস্টের প্রশ্নবিদ্ধ সত্যতা বা অতিরঞ্জন সম্পর্কে কথা বলা কিংবা গবেষণা করা আইনত নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ! এমনকি এইসব দেশের কেউ ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষেও কথা বলতে গিয়েও বিচার বিভাগের শাস্তি বা বাধার শিকার হচ্ছেন। আর এ থেকেই বাক-স্বাধীনতার বিষয়ে পশ্চিমা নেতাদের দ্বিমুখী নীতি তথা ভণ্ডামির রূপ ফুটে উঠছে এবং ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্টও তার নিন্দা জানিয়ে সৎ-সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।    

 

ট্যাগ