পশ্চিমাদের আধিপত্যের দিন ফুরিয়ে আসছে: জোসেফ বোরেলের স্বীকারোক্তি
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা জোসেপ বোরেল তার ব্লগে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে লিখেছেন, "বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণকারী নিয়মগুলি ভেঙ্গে পড়ছে এবং বিশ্বের দক্ষিণে অবস্থিত উন্নয়নশীল দেশগুলো এখন পশ্চিমাদের বিকল্প খুঁজছে।"
বোরেল তার নিবন্ধে স্বীকার করেছেন, আজ লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং অবশ্যই এশিয়ার প্রায় সবাই মনে করে যে পশ্চিমাদের নির্ভরযোগ্য বিকল্প রয়েছে তা কেবলমাত্র অর্থনৈতিকভাবে নয় বরং প্রযুক্তিগত, সামরিক এবং আদর্শগতভাবেও তা রয়েছে।
পশ্চিমাদের বিকল্প খোঁজার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রচেষ্টার ব্যাপারে জোসেফ বোরেলের স্বীকৃতির মাধ্যমে তিনি বিশ্বের বর্তমান সাধারণ পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করেছেন যেখানে বিশ্ব এখন মূলত বহু-মেরুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং একই সাথে পশ্চিমের আধিপত্য ও প্রভাব হ্রাস পাচ্ছে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর পশ্চিমা বিকল্পের দিকে ঝোকে পড়ার বিষয়টি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরনের মতো শীর্ষস্থানীয় পশ্চিমা কর্মকর্তারাও উত্থাপন করেছেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে দেয়া বক্তৃতায় ম্যাকরণ বৈশ্বিক রাজৈনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অঙ্গনে পশ্চিমাদের ভূমিকা দুর্বল হয়ে পড়ার ওপর জোর দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে বিশ্বে ক্ষমতার ভারসাম্যের পরিবর্তনে স্বীকৃত নতুন শক্তির উত্থান নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। ম্যকরন আরো বলেছিলেন, “আমরা পশ্চিমের কিছু নির্দিষ্ট দুর্বলতা দেখতে পাচ্ছি। মূল্যবোধ পরিবর্তিত হয়েছে এবং নতুন শক্তির উদ্ভব হয়েছে।"
বর্তমানে বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রভাবশালী পশ্চিমা শক্তি ও প্রতিদ্বন্দ্বি মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। কয়েক শতাব্দী ধরে পশ্চিমারা বিশ্ব পরিমণ্ডলে আধিপত্য বিস্তার করেছে। বিশেষ করে ঔপনিবেশিক যুগে এবং সাম্রাজ্যবাদের সময়কালে সর্বদা অন্যান্য জাতি ও জনগোষ্ঠীকে শোষণের শিকার করেছে। যাইহোক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এখন একটা মৌলিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এখন পশ্চিমা নেতারাই এখন পশ্চিমা আধিপত্যের সময়কালের সমাপ্তি কথা স্বীকার করেছেন।
ঠান্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে পশ্চিমের নেতা হিসাবে আমেরিকার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ইউনিপোলার সিস্টেম বা এক কেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য এবং বিশ্বজুড়ে পশ্চিমাদের আধিপত্য বজায় রাখলেও বৈশ্বিক অঙ্গনে বিভিন্ন মাত্রায় রাশিয়া, চীন, ভারতের মতো অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তির উত্থান ঘটিয়েছে। বর্তমানে এসব দেশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আকারে যেমন ব্রিকস, সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন বা ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য ও অর্থায়নে নতুন ধারা তৈরি করার চেষ্টা করছে।
এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা চীন এবং রাশিয়ার মতো প্রতিযোগীদের মুখোমুখি হচ্ছে। চীন যেটি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তি ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রথম অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। চীনের এ উত্থান পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক আধিপত্যের জন্য বিরাট সমস্যা সৃষ্টি করবে এবং এতে আমেরিকার প্রভাব ও শক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। রাশিয়া ১৯৯০-এর দশকে পতনের পর ২০০০ সাল থেকে ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির ক্ষমতা গ্রহণের নিজের ক্ষমতা পুনর্গঠন ও পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এখন এটি কেবল ইউরোপে নয় বরং পশ্চিম এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকায় পশ্চিমাদের জন্য বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রধান রাজনৈতিক ও সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। #
পার্সটুডে/এমবিএ/২৫