কেন ব্রিটেন মধ্যম শক্তির দেশে পরিণত হয়েছে?
ব্রিটেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড মিলিব্যান্ড সম্প্রতি বলেছেন, ব্রিক্সেটের পর তার দেশ বিশ্বে তার প্রভাব হারিয়েছে এবং বিশ্বের কয়েক ডজন মধ্যম মানের শক্তির মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির সভাপতি এবং প্রধান নির্বাহী মিলিব্যান্ড বলেছেন, ক্রমবর্ধমান পতন ঠেকাতে ব্রিটেনের উচিত পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে নতুন কাঠামো ও প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা।
তিনি বলেন, ন্যাটোর সাথে আমাদের সম্পর্ক খুবই দৃঢ় ও মজবুত কিন্তু, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই বললেই চলে। মিলিব্যান্ড আরও বলেছেন, এই বছরের শেষে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হলে ব্রিটেনের পতন আরো ত্বরান্বিত হতে পারে।
তিনি বিশ্বাস করেন যে, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বচনে জো বাইডেন দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ী হলেও সক্রিয় ও টেকসই বৈশ্বিক কৌশলগত নেতৃত্ব প্রদানে আমেরিকার সদিচ্ছা ও ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ আছে।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ব্রিটেনের এই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড মিলিব্যান্ড আরো বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনকে অস্ত্র দিচ্ছে, ৬০ লাখ ইউক্রেনিয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, জি-২০গ্রুপের সক্রিয় সদস্য এবং সেই সাথে বাণিজ্য, জলবায়ু ও ডিজিটাল দুনিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই আমাদের অর্থাৎ ব্রিটেনের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাদ দিয়ে রাশিয়ার ব্যাপারে ব্রিটিশ নীতি দুর্বল এবং কম কার্যকর হবে। চীনের ক্ষেত্রেও তাই।
অতএব, ২০১৯ সালে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আলাদা রাজনৈতিক ও পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করেছে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। বৈদেশিক নীতি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের স্বার্থে ইউরোপের সাথে সহযোগিতা গড়ে তোলা উচিত।
মিলিব্যান্ড, যিনি টনি ব্লেয়ার এবং গর্ডন ব্রাউনের অধীনে ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন, তিনি বলেছেন ব্রেক্সিটের ব্যাপারে একটি ধারণা এমন ছিল যে অন্য দেশের সাথে আলোচনা কিংবা দর কষাকষি না করে বরং নিজের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে ব্রিটেনের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার ব্রিটিশ নীতিনির্ধারকদের জন্য বিদ্যমান বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক ঝুঁকি এবং নিজেদের দুর্বলতা বিষয়টি বুঝতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের ক্ষমতার বাস্তবতা বুঝতে হবে এবং আমাদের অবস্থাটা অতীতের মতো নয়।
আমাদের কাছে সৌদি আরবের মতো বিশাল বাজেট বা অর্থ সম্পদ, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফ্রান্সে শক্তিশালী প্রভাব, তুরস্কের আঞ্চলিক প্রভাব, ভারত বা ইন্দোনেশিয়ার মতো বিশাল জনশক্তিও নেই। এ কারণে বিশ্বব্যবস্থায় আমরা ‘মধ্যম শক্তির’ দেশে পরিণত হয়েছি।
আমাদের সম্পদ, সামরিক সম্পদ এবং অন্যদের তুলনায় খ্যাতি গত এক দশকে হ্রাস পেয়েছে। অর্থনীতি থেকে শুরু করে জলবায়ু সংকট, জাতীয় নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান আরো দুর্বল হবে যদি না আমরা এখন থেকেই কাজ না করি। কারণটি সহজ: বিশ্ব একটি অস্বাস্থ্যকর ভারসাম্যহীনতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং যুক্তরাজ্য বেশ কিছু ভুল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৯