ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে মার্কিন হস্তক্ষেপের ইতিহাস ও আজকের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন
মধ্য আমেরিকায় অবস্থিত ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে ডান ও বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন ও গোষ্ঠী এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত বেড়ে যাওয়ার পর ১৯৬৫ সালে সেদেশে সামরিক হস্তক্ষেপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৬৫ সালের ২৮ এপ্রিল মার্কিন সামরিক বাহিনী ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে প্রবেশ করে এবং নিজেদের নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার অজুহাতে দেশটি দখল করে নেয়। এখানেই শেষ নয়।
আমেরিকা অল্প সময়ের মধ্যে তার মেরিন সেনার সংখ্যা এক হাজার পাঁচশ' থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজারে উন্নীত করে। একইসঙ্গে ৩৭টি রণতরী মোতায়েন করে। এভাবে দেশটিকে পুরোপুরি ঘিরে ফেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৬৫ সালের এপ্রিলের প্রথম দিকে সম্প্রচারিত এক টেলিভিশন ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন স্বীকার করেন, ভিয়েতনাম যুদ্ধ ছিল নোংরা, নৃশংস এবং কঠিন। কিন্তু এর কয়েক দিন পরই ২৮ এপ্রিল এই একই ব্যক্তি নিজের নীতিবাক্যগুলো ভুলে গিয়ে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে দমন করার লক্ষ্যে দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর সান্তো দোমিঙ্গোতে সেনা মোতায়েন করেন। বৃহৎ আমেরিকা অঞ্চলে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরেকটি কিউবা হয়ে উঠতে পারে এই আশঙ্কায় ছোট্ট এই দেশটিতে সামরিক হামলা শুরু করে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জনসন এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আমেরিকা অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত জোটের ঘোষণাপত্র সরাসরি লঙ্ঘন করেন এবং এই জোটের ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে জোটের কোনো সদস্য দেশের ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপ পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কিন্তু নিজের অশুভ লক্ষ্য হাসিলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ঐসবে তোয়াক্কা না করে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে মেরিন সেনাদের বিশাল বহর এবং ৮২তম এয়ারবর্ন ডিভিশনকে প্রেরণ করে।
যুক্তরাষ্ট্র একটি রাষ্ট্র দখলের জন্য সেখানে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের রক্ষার হাস্যকর অজুহাত দাঁড় করিয়েছিল। কিন্তু এই অজুহাতটি ছিল কেবলি প্রতারণার জন্য। আসলে অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা এবং ভূ-রাজনৈতিক কর্তৃত্ব অটুট রাখাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।
ইতিহাসবিদ এবং প্রাক্তন বিপ্লবী যোদ্ধা রবার্তো কাসার মতে, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে ১৯৬৫ সালে অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক বিপ্লব এবং জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম ছিল বিংশ শতাব্দীতে সেদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
সে সময় ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের জনগণও ভিয়েতনামের মানুষের মতো প্রতিরোধ গড়ার মাধ্যমে ইতিহাসে বীরপুরুষদের তালিকায় নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছেন। তারা প্রমাণ করেছেন সামরিক ক্ষেত্রে দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও ঐক্যবদ্ধভাবে আগ্রাসীদের মোকাবেলায় কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। যেমনিভাবে আজ ইয়েমেনের জনগণ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আগ্রাসনের মোকাবেলায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে এবং অন্যায়ের কাছে মাথানত না করে বীরত্বগাথার জন্ম দিচ্ছে। সে সময় ডোমিনিকান কমান্ডো নামে পরিচিত গেরিলা বাহিনীতে বহু মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়া মার্কিন সামরিক হামলার কারণে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল।
যদিও এটা ঠিক যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জনপ্রিয় এই প্রতিরোধ সংগ্রামকে দমন করে সেখানে একটি পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা এবং নিজেদের অশুভ স্বার্থ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু ১৯৬৫ সালে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে যে বিপ্লব ও সংগ্রামের বীজ বপন হয়েছে তা আজকের প্রজন্মের জন্যও উত্তরাধিকার হিসেবে রয়ে গেছে। আজও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে সেই সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস।#
পার্সটুডে/এসএ/২৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।