মার্কিন নিউজউইক ম্যাগাজিনের দাবি:
'ইরান আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের দেশগুলোকে শক্তিশালী করার চেষ্টা চালাচ্ছে'
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনের প্রভাবিত অন্যান্য মিডিয়া বা প্রচারযন্ত্রের মত মার্কিন নিউজউইক ম্যাগাজিনও আফ্রিকার সাহেল বা উপকূলীয় অঞ্চলের সংকটের জন্য ইসলামী ইরানকে দায়ী করছে।
সম্প্রতি নিউজউইকে ছাপানো ইহুদিবাদী ইসরাইলের ওপর নির্ভরশীল একদল লেখকের লেখা একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল লেবানন থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত বিস্তৃত ইরানের সঙ্গে সম্পর্কিত স্থানীয় শক্তিগুলোর হুমকির দিকে মনোযোগ জোরদার করেছে তখন তেহরান নীরবে আরও কিছু স্থানীয় শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে যেসব শক্তি শিগগিরই মার্কিন স্বার্থের প্রতি মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করবে। এই শক্তিগুলো আফ্রিকার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় তথা সাহেল অঞ্চলের। আর ইরান আধিপত্যকামী পশ্চিমা শক্তিগুলোর দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে যাতে এ অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতাগুলোকে শক্তিশালী করা যায়।
অনেক দেরি হওয়ার আগেই এই প্রক্রিয়া ঠেকাতে কিছু সাহসী পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মার্কিন সরকার ও ইসরাইলি দখলদার গোষ্ঠীকে পরামর্শ দিয়েছে এই সাপ্তাহিকী। আঞ্চলিক বা ঘরোয়া শক্তিগুলোর অনুপস্থিতির কারণে এবং এ অঞ্চলে পশ্চিমা উপনিবেশবাদী শক্তিগুলোর উপস্থিতি ও মার্কিন হস্তক্ষেপের কারণে ২০২০ সাল থেকে অনেক অশান্তি ও অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে।
মালি, বুর্কিনাফাসো, গিনি, নাইজার, গ্যাবন, চাদ ও সুদান –এর মত দেশগুলোতে হয় সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে কিংবা সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আর এই প্রক্রিয়া আসলে উপনিবেশবাদের আর্থ-রাজনৈতিক প্রভাবের ফল তথা উত্তরাধিকার। এইসব কারণে নানা হুমকি সৃষ্টি হওয়া ছাড়াও ইসলামী নাম ও পরিচিতির লেবেল লাগিয়ে নানা ধরনের উগ্র ভুয়া গোষ্ঠী বা সন্ত্রাসী দল গড়ার সুযোগ করে দিয়েছে ওই একই কর্তৃত্বকামী শক্তিগুলো। যেমন, এর আগে ইসরাইল সুদানে হস্তক্ষেপ করেছিল পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। ফলে আলাদা হয়ে গেছে দক্ষিণ সুদান। অথচ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনের প্রভাবিত অন্যান্য মিডিয়া বা প্রচারযন্ত্রের মত মার্কিন নিউজউইক ম্যাগাজিনও আফ্রিকার সাহেল বা উপকূলীয় অঞ্চলের সংকটের জন্য ইসলামী ইরানকে দায়ী করছে।
এই সাময়িকীর একই নিবন্ধ অনুযায়ী সুদানের সার্বভৌম পরিষদের বর্তমান প্রধান আবদুল ফাত্তাহ আল বুরহানের নেতৃত্বে কথিত আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষর করে খার্তুম ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে। মার্কিন সহায়তার প্রতিশ্রুতির মুলা ঝুলানো হয়েছিল এর বিনিময়ে। কিন্তু ২০২১ সালে বুরহান সুদানের ওই সরকারকে ভেঙ্গে দিলে মার্কিন সরকার খার্তুমের সঙ্গে সম্পর্ক নবায়ন না করার জন্য চাপ দেয় তেলআবিবকে। আর এরপরই ২০২৩ সনে সুদানে বিস্ময়করভাবে দেখা দেয় ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধ।
ওই নিবন্ধের বক্তব্য অনুযায়ী সুদানের সঙ্গে পাশ্চাত্যের এই ব্যবহারের অভিজ্ঞতার কারণে বুরহান একান্তই বাধ্য হয়ে নিরাপত্তাগত সহায়তাসহ নানা সহায়তা পেতে তেহরানের শরণাপন্ন হয়েছেন। নিউজউইকের ওই নিবন্ধে আরও দাবি করা হয়েছে যে ইরান নাইজারকে ইউরেনিয়াম উৎপাদন জোরদারে নিয়োজিত করে এর মাধ্যমে নিজের পরমাণু কর্মসূচির জন্য ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে! ওই নিবন্ধের দাবি ইরান মালি, বুর্কি নাফাসো ও সাহেল অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার চেষ্টা করছে যা বেশ বিপজ্জনক। এ বিষয়টি পশ্চিমা কর্তৃত্বকামী শক্তিগুলোর জন্য মোটেই প্রত্যাশিত নয়। চাদ ও মৌরিতানিয়ার অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি ইরানের সমর্থনের ব্যাপারে
শহীদ প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসির শাহাদাতের পর ইরান সৌদি আরব ও মিশরের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের জোরালো চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
ইরান, চীন ও রাশিয়ার মত অপশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে যাতে আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের দেশগুলোর সম্পর্ক দুর্বল করা যায় সে জন্য গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মত বিষয়গুলোকে ব্যবহার করে এইসব দেশের ওপর চাপ সৃষ্টিসহ সম্ভাব্য নানা পন্থা প্রয়োগের আহ্বানও জানানো হয়েছে এই নিবন্ধে। আর এইসব আহ্বান জানানো হয়েছে মার্কিন সরকার ও ইসরাইলসহ এ সরকারের অন্যান্য মিত্রদের প্রতি।
উল্লেখ্য, নিবন্ধটির অন্যতম লেখক রনেন লেভি হলেন ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক ডিজি বা মহাপরিচালক এবং মিসগ্যাভ জাতীয় নিরাপত্তা ইন্সটিটিউটের একজন সিনিয়র সদস্য। আর অন্য আরেক লেখক অ্যাশের ফ্রেডম্যান হলেন মিসগ্যাভ জাতীয় নিরাপত্তা ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/০২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।