দাঙ্গায় দায়ী মুসলিমবিদ্বেষী উগ্র হিন্দু, শিয়াবিদ্বেষী পাকিস্তানি সন্ত্রাসী ও ইসলামাবাদ সরকার
(last modified Tue, 30 Jul 2024 03:51:02 GMT )
জুলাই ৩০, ২০২৪ ০৯:৫১ Asia/Dhaka
  • দাঙ্গায় দায়ী মুসলিমবিদ্বেষী উগ্র হিন্দু, শিয়াবিদ্বেষী পাকিস্তানি সন্ত্রাসী ও ইসলামাবাদ সরকার

পার্সটুডে- পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পাঁচ দিনব্যাপী শিয়াবিদ্বেষী সশস্ত্র দাঙ্গায় ৩৫ জন নিহত ও ১৬০ জনের বেশি আহত হয়েছে। পাকিস্তানের শিয়া সংগঠনগুলো বলছে, সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় উগ্র তাকফিরিরা এই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।

আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পারাচিনার এলাকায় আবারো আহলে বায়েতের অনুসারী শিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। পার্সটুডে ফার্সি জানাচ্ছে, গত কয়েকদিনে তাকফিরিদের ভয়াবহ হামলায় ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি চরম সংকটময় হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলেছে, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান ও লশকরে জাঙ্গুই গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে যার শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষকসহ স্থানীয় অধিবাসীরা।

আরব নিউজের রিপোর্টে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পাঁচ দিনব্যাপী সশস্ত্র দাঙ্গায় ৩৫ জন নিহত ও ১৬০ জনের বেশি আহত হয়েছে।

পাকিস্তানের শিয়া সংগঠনগুলো বলছে, সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় উগ্র তাকফিরিরা কৃষিজমি নিয়ে মতবিরোধকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে পারাচিনারে বসবাসরত শিয়াদেরকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।

আহলে বায়েতের অনুসারীদের প্রতি পাকিস্তান সরকারের ভ্রুক্ষেপহীনতার ফসল

পাকিস্তানের মজলিশে ওয়াহদাতে মুসলিমিন দলের প্রেসিডেন্ট, সিনেটর আল্লামা নাসির আব্বাস জাফরি এই হত্যাকাণ্ডের হোতাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিয়াদের নিরাপত্তা রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পাকিস্তান সরকার ও দেশটির সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সরকার যদি এক্ষেত্রে তার দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে পারাচিনারের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে সারা পাকিস্তান থেকে মানুষ এখানে ছুটে আসবে।

এদিকে, পাকিস্তান সরকার পারাচিনার এলাকার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পাশাপাশি সেখানকার নাগরিকদের মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক কেটে দিয়েছে যাতে সেখানকার ভয়াবহ হত্যাযেজ্ঞের খবরাখবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে না পারে। এ ঘটনায় শিয়াদের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষা করার ব্যাপারে পাক সরকারের ভ্রুক্ষেপহীনতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় পাওয়া যায়।

অন্যদিকে, পারাচিনারের শিয়াদের দুঃখ-কষ্টের অবসান ঘটানোর দিকে পাক সরকারের মনযোগ আকর্ষণ করে দেশটির ইসলামাবাদ, লাহোর ও করাচিসহ বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

তাকফিরিদের উদ্দেশ্য আহলে বায়েতের অনুসারীদের বাস্তুহারা করা

পাকিস্তানের পারাচিনারে বসবাসরত শিয়াদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা ও হত্যাযজ্ঞ বহুকাল ধরে চলে আসছে। এখানকার বিভিন্ন মাজহাবের অনুসারীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ইতিহাস দীর্ঘদিনের এবং এসব সংঘর্ষে শত শত শিয়া মুসলমানের প্রাণহানি হয়েছে।

পারাচিনারে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ও দীর্ঘমেয়াদি সংঘর্ষ হয় ২০০৭ সালে। সে সময় তাকফিরি গোষ্ঠীগুলো ওই এলাকাকে অবরোধ করে সেখানে গণহত্যা চালায়।

এছাড়া, ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র এক বছরে পারাচিনার এলাকায় ৭৭টি সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। সেব হামলায় ৬৩৫ জন শিয়া শাহাদাতবরণ করেন এবং আরো শত শত মানুষ আহত হন।

পারাচিনারের অধিবাসীরা শুধুমাত্র শিয়া হওয়ার কারণেই তাকফিরি গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণের শিকার হন। দীর্ঘকাল ধরে সন্ত্রাসী হামলার শিকার এই মানুষগুলো এখন আত্মরক্ষার জন্য নিজেরাই অস্ত্রধারণ করতে বাধ্য হয়েছেন। পারাচিনারের বহু যুবক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে বিদেশ গমন করেছেন এবং প্রবাসী এসব যুবকেরে কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সের একটি অংশ আগ্নেয়াস্ত্র কেনার কাজে ব্যয় করতে হচ্ছে।

মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দুদের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের দ্বৈত আচরণ

নিজ দেশের শিয়া মুসলমানদের রক্ষা করতে পাকিস্তান সরকার এমন সময় ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে যখন এই ইসলামাবাদ সরকারই ভারতে উগ্র হিন্দুদের হাতে মুসলমানদের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল ধরে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।

পাকিস্তানে যেমন শিয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড পরিচালিত হয় ভারতে তেমনি উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের সঙ্গে চরম বিদ্বেষী আচরণ করে।

ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো মসজিদ ধ্বংস করাসহ মুসলমানদের গতিবিধির ওপর চরম বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে। এসব গোষ্ঠী এখন পর্যন্ত ভারতের অন্তত ৩,০০০ মসজিদ ধ্বংস করে সেগুলোর জায়গায় মন্দির স্থাপন করেছে।

দুই দেশের এই চিত্র প্রমাণ করছে, দক্ষিণ এশিয়ার ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা চরম চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের সংখ্যালঘুরা চরম নিরাপত্তাগত চাপে বসবাস করছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত সহিংসতা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।

দুঃখজনকভাবে প্রাপ্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান বলছে, ভারত ও পাকিস্তান সরকার প্রায়ই নির্বিকার থেকে এই সহিংসতাকে উস্কে দেয়ার পাশাপাশি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার লঙ্ঘনে প্ররোচনা দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন

পাকিস্তানের পারাচিনারের শিয়া এবং ভারতের মুসলমানদের এই সংকটময় পরিস্থিতির দিকে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক সমাজের মনোনিবেশ করা উচিত। এই সংকটের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নীরবতা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দুর্ভোগ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে এবং এসব অসহায় মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার খর্ব করছে। #

পার্সটুডে/এমএমআই/৩০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

ট্যাগ