কুরস্কে ইউক্রেনের হামলা: রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনে জার্মানির উচ্চাভিলাষী চিন্তা
পার্সটুডে- কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে রাশিয়ার ভূখণ্ডে আক্রমণ করার সাহস ইউক্রেনের ছিল না এবং আমেরিকার মতো বাইরের শক্তির উস্কানিতে এ দুঃশাহস দেখাতে পেরেছে।
গত কয়েক দিনে যে ঘটনাটি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা হচ্ছে, আমেরিকা ও জার্মানির সহযোগিতায় রাশিয়ার ভূখণ্ডের একটি অংশে ইউক্রেনীয় বাহিনীর হামলা। পার্সটুডের প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানি সংবাদপত্র খোরাসান লিখেছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি সোমবার রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে সাম্প্রতিক অভিযানের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, "রাশিয়া অন্যদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। "এখন যুদ্ধ তার নিজ ঘরে [রাশিয়ায়] ফিরে এসেছে।"
জেলেনস্কি আরো বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন "দৃঢ়ভাবে যুদ্ধ চান" এবং মস্কোকে শুধুমাত্র "শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে" শান্তি মেনে নিতে বাধ্য করা যেতে পারে।
অন্যদিকে, পুতিন রাশিয়ার ঊর্ধ্বতন প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে যুদ্ধক্ষেত্রের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন যে "রাশিয়ার মাটিতে অভিযান চালানোর পেছনে ইউক্রেনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভবিষ্যত শান্তি আলোচনায় নিজের শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তোলা। পুতিন আরো বলেছেন, "কিয়েভ ভেবেছিল যে এই অভিযান রাশিয়াকে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার দিকে নিয়ে যাবে, কিন্তু তা ঘটেনি।"
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ইউক্রেনের সাম্প্রতিক হামলার পর স্বেচ্ছায় যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নেওয়া রুশ নাগরিকের সংখ্যা বেড়েছে। তিনি জোর দিয়েছেন যে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী পূর্ব ইউক্রেনে তাদের অভিযান অব্যাহত রাখবে।
বেশিরভাগ বিশ্লেষক মনে করেন যে রাশিয়া খুব শীঘ্রই ইউক্রেনীয় বাহিনীকে তার ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করবে, তবে তা সত্ত্বেও, ইউক্রেনীয়রা সম্প্রতি রুশ ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে ক্রেমলিন নেতাদের কাছে বার্তা পাঠাতে চেয়েছিল যে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে, রাশিয়ার সীমান্তেও নিরাপত্তাহীনতার বিস্তার ঘটবে।
ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ সাময়িক বলে মনে হচ্ছে,কারণ ইউক্রেনের কাছে দীর্ঘ সময়ে যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় বাহিনী নেই এবং শুধুমাত্র দোনবাস ফ্রন্ট লাইন থেকে রাশিয়ান বাহিনীকে পিছু হটার এবং রাশিয়ান সৈন্যদের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ওই হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।
মার্কিন উস্কানি
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে রাশিয়ার ভূখণ্ডে আক্রমণ করার সাহস ইউক্রেনের ছিল না। কিন্তু মার্কিন সরকারের মতো একটি বিদেশী শক্তির উস্কানিতে ইউক্রেন রুশ ভূখণ্ডে ওই হামলা চালায়। এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে সেদেশের জনগণকে এটা দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, ইউক্রেন ইস্যুতে তাদের নীতি কার্যকর হয়েছে। এই কারণে,পেন্টাগনের মুখপাত্র সাবরিনা সিং রাশিয়ার কুরস্ক এলাকায় ইউক্রেনের হামলার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং দাবি করেছেন যে, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর হামলা মার্কিন নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একই সাথে তিনি দাবি করেছেন আমরা ওই অঞ্চলে উত্তেজনা সৃষ্টি করিনি এবং এখন উত্তেজনা কমিয়ে আনার দায়িত্ব ভ্লাদিমির পুতিনের।
ক্রেমলিনের অভিযোগের তালিকায় প্রথম রয়েছে জার্মানি
যেহেতু ইউক্রেন রাশিয়ার উপর আক্রমণে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করেছে,তাই মস্কোর নেতারা অস্ত্রের যোগানদাতাদের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। কুরস্কে হামলায় ইউক্রেনীয় বাহিনীর জার্মান ট্যাঙ্ক ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে, রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি দিমিত্রি মেদভেদেভ এক্স সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বার্তায় লিখেছেন, "জার্মান সংবাদপত্র বিল্ড একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে যাতে তারা গর্বের সাথে জানিয়েছে রাশিয়ান ভূমিতে জার্মান ট্যাংক ফিরে এসেছে। এ ব্যাপারে রাশিয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, মস্কো বার্লিনে সবচেয়ে অত্যাধুনিক রাশিয়ান ট্যাঙ্ক পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে।
কুরস্কে জার্মান ট্যাঙ্কের উপস্থিতি এমন সময় ঘটলো যখন কিছুদিন আগে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো এক বৈঠকে কিয়েভকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালানোর জন্য পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেয়। রাশিয়াকে পিছু হটানোর জন্য ন্যাটোর এই পদক্ষেপ ন্যাটো ও মস্কোর মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। সে কারণে জার্মানির কিছু কর্মকর্তা বার্লিনের পরিণতি সম্পর্কেও সতর্ক করে দিয়েছেন।
এই বিষয়ে, জার্মান ফেডারেল রাজ্য স্যাক্সনির প্রধানমন্ত্রী মাইকেল কারচমার জোর দিয়ে বলেছেন, "যদি কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণে জার্মান ট্যাঙ্ক ব্যবহার করা হয় তবে তা হবে রেডলাইন অতিক্রম। দুই বছর ধরে, আমরা দেখছি যে জার্মান কর্তৃপক্ষ যা বলছে তা বাস্তবে বাস্তবায়িত হয় না। আমরা ইউক্রেন সংঘাতে একটি পক্ষ হয়ে ওঠার কাছাকাছি চলে গেছি এবং জনগণ এটা নিয়ে চিন্তিত।"
স্যাক্সনি রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, বার্লিনের উচিত ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে সামরিক সহায়তা পাঠানো বন্ধ করা। ন্যাটোর ধাপে ধাপে রাশিয়ার রেডলাইন অতিক্রম করা সংকট সমাধানে সহায়তা করবে না বরং তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করতে পারে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।