ইউক্রেন যুদ্ধে মার্কিন কোম্পানিগুলোর বিপুল মুনাফা
https://parstoday.ir/bn/news/world-i152286-ইউক্রেন_যুদ্ধে_মার্কিন_কোম্পানিগুলোর_বিপুল_মুনাফা
পার্সটুডে-২০২২ সালে শুরু-হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এনেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
(last modified 2025-09-24T13:52:55+00:00 )
সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫ ১৭:০১ Asia/Dhaka
  • ইউক্রেনের জন্য মার্কিন অস্ত্র সামগ্রি
    ইউক্রেনের জন্য মার্কিন অস্ত্র সামগ্রি

পার্সটুডে-২০২২ সালে শুরু-হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এনেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

ইউক্রেন যুদ্ধ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা প্রভাব ফেলার পাশাপাশি অস্ত্র-ব্যবসা ও সামরিক রপ্তানি খাতেও সৃষ্টি করেছে ব্যাপক চাহিদা। বিশেষ করে মার্কিন অস্ত্র কোম্পানিগুলো এ যুদ্ধের কারণে বিপুল মুনাফার অধিকারী হয়েছে। 

অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক সাজ-সরঞ্জামের চাহিদা বৃদ্ধি 

ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন সরকার সব সময়ই অস্ত্র যুগিয়ে এসেছে কিয়েভকে। অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক সাজ-সরঞ্জামের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে মার্কিন সরকার ইউক্রেনকে অনেক উন্নত অস্ত্র দিয়ে আসছে। এইসব অস্ত্র সাহায্যের মধ্যে রয়েছে বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, হালকা ও আধা-হালকা অস্ত্র এবং অন্যান্য উন্নত সামরিক গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম সহ বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র। এই প্রবণতা আমেরিকান অস্ত্র কোম্পানিগুলোর আয় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়িয়েছে। যেমন, লকহিড মার্টিন, রেথিয়ন, বোয়িং, জেনারেল ডাইনামিক্স এবং নর্থরোপ গ্রুমম্যানের মতো কোম্পানিগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম অস্ত্র প্রস্তুতকারক হিসেব এই সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে।

ইউক্রেনে মার্কিন সাহায্য এবং প্রতিরক্ষা শিল্পের উপর প্রভাব

ইউক্রেনীয় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে প্রায় ১৬০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক ও আর্থিক সহায়তা পাঠিয়েছে। এই সাহায্যের মধ্যে রয়েছে উন্নত অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং বেসামরিক সরঞ্জাম, যার বেশিরভাগই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। এই নীতি আমেরিকান অস্ত্র কোম্পানিগুলোর জন্য বিশেষভাবে লাভজনক হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্যাট্রিয়টের মতো বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি প্রধান নির্মাতা রেথিয়ন, ইউক্রেনে এই ব্যবস্থা সরবরাহের জন্য মার্কিন সরকারের সাথে নতুন চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও, জ্যাভলিন অ্যান্টি-আর্মর মিসাইল এবং HIMARS রকেট সিস্টেমের প্রস্তুতকারক হিসেবে লকহিড মার্টিন এই সময়ের মধ্যে তাদের পণ্যের বিক্রিতে অভূতপূর্ব বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছে। এই কোম্পানিগুলো কেবল ইউক্রেনের কাছে অস্ত্র বিক্রি করেই লাভবান হয় না, বরং অন্যান্য মার্কিন মিত্রদের কাছেও এই অস্ত্র বিক্রি করে লাভবান হয় যারা তাদের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা শক্তিশালী করছে।

অস্ত্র কোম্পানিগুলির রাজস্ব ও শেয়ার বৃদ্ধি

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে অস্ত্র কোম্পানিগুলোর লাভ সরাসরি অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির সাথে সম্পর্কিত, তবুও শেয়ার বাজারে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবও উল্লেখযোগ্য। অস্ত্র বিক্রি বৃদ্ধি এবং রাশিয়ার হুমকির বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোকে রক্ষা করার জন্য অস্ত্র চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এই অস্ত্র কোম্পানিগুলোর রাজস্ব ও শেয়ারের দাম বেড়েছে। অন্যান্য কোম্পানিগুলোতেও একই রকম প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।

মার্কিন নীতিনির্ধারণে অস্ত্র লবিস্টদের ভূমিকা

অস্ত্র কোম্পানিগুলোর মুনাফা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবদান রাখার একটি বড় চালিকা-শক্তি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প লবিগুলোর ক্ষমতা ও ভূমিকা। মার্কিন প্রতিরক্ষা নীতি পরিচালনায় অস্ত্র লবিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এইসব লবি সরকারি সিদ্ধান্তগুলোকে প্রভাবিত করে বড় বড় অস্ত্র চুক্তির সুরক্ষায় সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, AIPAC-এর মতো লবিস্ট সংস্থাগুলি, যা বিশেষভাবে ইসরায়েলি স্বার্থকে সমর্থন করে, প্রায়ই ইউক্রেনের মতো দেশগুলোতে আমেরিকান অস্ত্র বিক্রিকে সমর্থন করে। এই লবিগুলো ইউক্রেনে প্রতিরক্ষা ব্যয় ও সামরিক সহায়তা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখার জন্যও চাপ দিতে সক্ষম।

চ্যালেঞ্জ এবং উদ্বেগ

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে অস্ত্র কোম্পানিগুলোর লাভ উল্লেখযোগ্য, তবুও এই প্রক্রিয়াটি চ্যালেঞ্জমুক্ত নয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও বিশ্ব নিরাপত্তার উপর এই মুনাফাখোরির নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ রয়েছে। যুদ্ধ দীর্ঘ হতে পারে এইসব কোম্পানির মুনাফাকামিতা অব্যাহত থাকলে এবং বিশ্বে আরও বাড়তে পারে যুদ্ধ, অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও নিরাপত্তার সংকট। #

পার্স টুডে/এমএএইচ/২৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।