পশ্চিমাদের প্রতি রাশিয়ার সতর্কবার্তা: আগুন নিয়ে খেলবেন না
রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনকে ব্রিটেনের দূরপাল্লার স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুমতি দেওয়া 'আগুন নিয়ে খেলার সামিল' বলে মন্তব্য করেছে মস্কো। ২৭ আগস্ট এক বিবৃতিতে আমেরিকা ও তার মিত্রদের সতর্ক করে রাশিয়া বলেছে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তা কেবল ইউরোপে সীমাবদ্ধ থাকবে না।
পার্স টুডে জানিয়েছে, সম্প্রতি ব্রিটিশ কর্মকর্তারা রাশিয়ার অভ্যন্তরে আক্রমণ করার জন্য "শ্যাডো অফ দ্য স্টর্ম" ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার জন্য কিয়েভকে অনুমতি প্রদানের বিষয়ে পরস্পরবিরোধী বিবৃতি দিয়েছেন।
পশ্চিমা গণমাধ্যমের মতে, রুশ ভূখণ্ডের ভেতরে হামলা চালানোর জন্য ইউক্রেনকে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া কিংবা না দেওয়ার বিষয়ে সত্য গোপন রাখতে ব্রিটিশরা ইচ্ছাকৃতভাবে এই বিবৃতি দিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।
এ প্রসঙ্গে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে পশ্চিমারা আগুন নিয়ে খেলা করছে। মস্কো ইতোমধ্যেই পশ্চিমা দেশগুলোকে ইউক্রেনকে অস্ত্র প্রদান এবং উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে।
তিনি বলেন, মিত্রদের সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহারে ইউক্রেনকে শিথিলতা দেখিয়ে ওয়াশিংটন মূলত 'খাল কেটে কুমির' এনেছে। তাদের কার্যকলাপে ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
৬ আগস্ট রাশিয়ায় অনুপ্রবেশ করে কুরস্ক অঞ্চলে হামলা চালায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রুশ ভূখণ্ডে এটিই কোনও বিদেশি শক্তির বৃহত্তম হামলার ঘটনা। এই হামলার সমুচিত জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
কুরস্ক হামলায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ব্রিটিশ ট্যাংক ও মার্কিন রকেটসহ অন্যান্য পশ্চিমা অস্ত্রের ব্যবহার করেছে বলে রাশিয়া অভিযোগ করেছে। অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছে কিয়েভ।
এদিকে, ওয়াশিংটন দাবি করেছে, কুরস্কে আকস্মিক হামলার বিষয়ে তাদেরকে কিছু জানায়নি কিয়েভ। হামলায় আমেরিকার কোনও সম্পৃক্ততা ছিল না বলেও জানিয়েছে তারা।
তবে, পুতিনের বৈদেশিক গোয়েন্দা প্রধান সের্গেই নারিশকিন মঙ্গলবার বলেছেন, ওয়াশিংটনের এই দাবি তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। আর দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেছেন, আমেরিকার সম্পৃক্ততা দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হামলার পর কিয়েভকে কুরস্কের স্যাটেলাইট ছবি ও অন্যান্য তথ্য সরবরাহ করেছিল আমেরিকা ও ব্রিটেন। রুশ বাহিনীর গতিবিধি বুঝতে সহায়তা করতে এসব তথ্য দেওয়া হয় বলে দাবি সংবাদমাধ্যমটির।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে যে, ইউক্রেনের নেতা ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার ভূখণ্ডে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করে হামলার জন্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পশ্চিমা সমর্থকদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ বলেন, "এটি প্রতারণা। এর মধ্যদিয়ে এমন একটি ধারণা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে যে, পশ্চিমা দেশগুলো অত্যধিক উত্তেজনা এড়াতে চায়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি কারসাজি।"
ল্যাভরভ জোর দিয়ে বলেন, "পশ্চিমা দেশগুলো সংঘাতের বিস্তার এড়াতে চায় না। তারা চায় সংকট গভীর হোক। আমি মনে করি বিষয়টি এরইমধ্যে সবার কাছে স্পষ্ট।"
সাংবাদিকদের ল্যাভরভ বলেছেন, ‘পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর শিশুদের মতো আগুন নিয়ে খেলা উচিত নয়। মার্কিনীদের বক্তব্য শুনলে মনে হয় বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে গেলে তা কেবল ইউরোপকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’
রাশিয়া তাদের পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের নীতিমালাতে এখনও দৃঢ় অবস্থানে আছে বলে নিশ্চিত করেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রাশিয়ার ২০২০ সালের পারমাণবিক নীতিমালায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, পারমাণবিক বা গণবিধ্বংসী অস্ত্রের হামলার শিকার হলে, কোনও হামলায় দেশের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হলেই কেবল পাল্টা পারমাণবিক হামলা চালাবে।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৯