কেন ইউরোপ মার্কিন রাজনীতির ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহৃত হয়?
(last modified Wed, 23 Oct 2024 14:56:25 GMT )
অক্টোবর ২৩, ২০২৪ ২০:৫৬ Asia/Dhaka
  • কেন ইউরোপ মার্কিন রাজনীতির ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহৃত হয়?

পার্সটুডে: একজন বিশেষজ্ঞের মতে ইউক্রেনের যুদ্ধের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ইউরোপীয়রা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কবল থেকে বেরিয়ে স্বাধীনভাবে কোনো নীতি গ্রহণ করতে পারে না। তাই তারা ওয়াশিংটনের অনুরূপ পদ্ধতিতে তেহরানের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করছে।

গাজায় দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের শাসক গোষ্ঠীর গণহত্যা থেকে বিশ্বের দৃষ্টি অন্য দিকে সরানোর লক্ষ্যে তেহরানের বিরুদ্ধে "দখল" শব্দটি ব্যবহার করে তিনটি দ্বীপ সম্পর্কে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দাবির প্রতি সমর্থন এবং ইরানের বিমান সংস্থার উপর ইইউ'র নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে এটা দেখায় যে ইউরোপ ইরান-বিরোধী একটি নতুন উত্তেজনা তৈরি পায়তারা করছে। কিন্তু পশ্চিম এশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউরোপ কেন ইরানবিরোধী এই নীতি গ্রহণ করছে তার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ইউরোপ বিষয়ে সিনিয়র বিশ্লেষক আলি রেজওয়ানপুর। ইরানের সার্গ পত্রিকাকে দেয়া এই সাক্ষাৎকারটি পার্সটুডে তুলে ধরেছে।

মনে হচ্ছে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমরা ইউরোপীয়দের পক্ষ থেকে ইরান-বিরোধী নীতি জোরদার করার প্রচেষ্টা প্রত্যক্ষ করছি। একদিকে তারা ইরানের বিমান সংস্থা ইরান এয়ারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং অন্যদিকে ইরানের তিনটি দ্বীপের ওপর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে এ অঞ্চলে নতুন উত্তেজনা  তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। ইউরোপীয়দের এই ইরান-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি এমন তীব্র যে  তারা ইরানের জন্য "দখলকারী" শব্দটি ব্যবহার করেছিল। আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইউরোপ মহাদেশে ইরানবিরোধী এই নীতি বৃদ্ধির কারণ কী? বিষয়টি কি কেবল ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর প্রতি তেহরানের সমর্থনের কারণে নাকি অন্য কারণ রয়েছে?  

আমার মতে, ইউরোপের এই ইরানবিরোধী নীতি গ্রহণের মূল কারণ রাজনৈতিক স্বাধীনতার অভাবের মধ্যে নিহিত। আপনি দেখুন, বাস্তবতা হ্চ্ছে যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একা অন্য দেশের প্রতি তার স্বার্থের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন নীতি গ্রহণ করতে সক্ষম নয়। ১৯৯০এর দশকে বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক আইস্কেনস যিনি পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিও ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নকে একটি অর্থনৈতিক দৈত্য এবং একটি রাজনৈতিক বামনের সাথে তুলনা করেছিলেন। অর্থনৈতিক দৈত্য কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং চীনের পরে একটি অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে বিবেচিত হলেও পররাষ্ট্রনীতি এবং কূটনীতির ক্ষেত্রে এই ইউনিয়নটি সম্পূর্ণরূপে যুক্তরাষ্ট্রের পিছনে রয়েছে। অতএব, সংবেদনশীলতা জড়িত বিষয়গুলোতে এই ইউনিয়ন কিছু বিবৃতি এবং অবস্থানসহ আমেরিকা থেকে একটি স্বাধীন নীতি আছে তা দেখানোর চেষ্টা করে। সাম্প্রতিক সপ্তাহ ও মাসগুলিতে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সম্পর্কে বারবার দাবি যেমন তেহরান মস্কোতে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে ইত্যাদি ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্বে ইরানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। রাশিয়ার কাছে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র পাঠোনোর ইস্যুটি কোনওভাবে তিনটি দ্বীপের উপর ইরানের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করেছে যা ইরানের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করে। বিষয়টির সত্যতা হল যে ইউরোপীয়রা ইউক্রেনের যুদ্ধের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বাধীনভাবে নীতি গ্রহণ করতে পারে না, তাই তারা ওয়াশিংটনের মতো একই পদ্ধতিতে তেহরানের সাথে সংঘর্ষের চেষ্টা করছে।

পেজেশকিয়ানের সরকার কি ইরান ও ইউরোপের মধ্যে সম্পর্কের ত্রুটি বিচ্ছতি আরও বাড়িয়ে তুলবে?

উত্তেজনা ইরানের দোষে নয় কারণ জনাব পেজেশনকিয়ান তার নির্বাচনী স্লোগানে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এবং তার পরে বহুবার সভা-সমাবেশে বলেছিলেন যে ১৪ তম সরকারের পররাষ্ট্র নীতি  তিনটি নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে যেটি সর্বোচ্চ নেতা অনুমোদন করেছেন। সম্মান, প্রজ্ঞা এবং কল্যাণ এই তিনটি  বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে নতুন সরকার সমস্ত আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নেতাদের সাথে সম্পর্ক গড়তে চান। তাই জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা রক্ষার লক্ষ্যে ১৪তম সরকার যেখানে প্রয়োজন সেখানে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু আমি যা বলেছি তা সম্পূর্ণ করার জন্য মনে হচ্ছে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর ইরানবিরোধী নীতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাকমেল উভয় কারণে ইউরোপীয়দের ইরানের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন নীতি অনুসরণ করতে অক্ষম করেছে।

কেন?

কারণ এটি তেহরান নয় যে জেসিপিওএ থেকে সে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল এবং এই বিষয়ে আমেরিকানরা নিজেরাই স্পষ্টভাবে স্বীকার করে যে "ডোনাল্ড ট্রাম্প" যুগের পররাষ্ট্রনীতিতে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ছিল জেসিপিওএ থেকে আমেরিকাকে প্রত্যাহার করে নেয়া। মার্কিন  মিডিয়া জোর দিয়ে বলে থাকে যে ইব্রাহিম চুক্তি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান এবং মরক্কোর সঙ্গে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরির প্রচেষ্টা ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প এর সবচেয়ে বড় অর্জন। আমেরিকার প্রত্যাহারের পর ইউরোপীয়রা জেসিপিওএর অধীনে তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে টালবাহানা করতে থাকে  এবং এর কারণে এখন পর্যন্ত ইউরোপীয়রা তাদের প্রতিশ্রুতি তো পূরণ করেই নি প্রকৃতপক্ষে তারা এটির বিরুদ্ধে কাজ করেছিল। এটি আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে জেসিপিওএ এবং অন্যান্য সংবেদনশীল ইস্যুতে ইউরোপীয়রা স্বাধীনভাবে আমেরিকা থেকে আলাদা নীতি অনুসরণ করতে পারে না।#

পার্সটুডে/এমবিএ/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে  লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন

ট্যাগ