বন্ধ হলো ফরাসি সামরিক ঘাঁটি
'আর না!'- অব্যাহত ফরাসি সামরিক উপস্থিতিতে চাদের প্রতিক্রিয়া
-
চাদে ফরাসি সামরিক উপস্থিতির সমাপ্তি
পার্সটুড - চাদ সরকার ঘোষণা করেছে যে তারা ফ্রান্সের সাথে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি বাতিল করেছে এবং ফরাসি বাহিনীকে চাদ ছেড়ে যেতে বলেছে।
পার্সটুডে জানিয়েছে, চাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী "আব্দুর রহমান গোলামুল্লাহ", সামাজিক নেটওয়ার্কে এক বিবৃতিতে লিখেছেন: চাদ প্রজাতন্ত্র ফ্রান্সের সাথে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই বিবৃতিতে, চাদে ফ্রান্সের সামরিক উপস্থিতির সমাপ্তিকে একটি "ঐতিহাসিক বাঁক" হিসাবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে: প্রকৃতপক্ষে, চাদ প্রজাতন্ত্রের স্বাধীনতার ৬৬ বছর পর এই দেশটির পূর্ণ সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করার সময় এসেছে এবং একইসাথে জাতীয় স্বার্থের উপর ভিত্তি করে কৌশলগত শরিক পুনর্নির্ধারণ করারও সময় এসেছে।
চাদের আগে মালি, নাইজার, গ্যাবন এবং বুরকিনা ফাসোসহ আরও কয়েকটি আফ্রিকান দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের দেশে ফরাসি সৈন্যের উপস্থিতি বন্ধ করে দিয়েছে এবং সেনেগালও ঘোষণা করেছে সেদেশেও ফরাসি সামরিক ঘাঁটিগুলো শীঘ্রই উৎখাত করা হবে।
যদিও পূর্ববর্তী দশকগুলোতে আলজেরিয়ার মতো বিভিন্ন আফ্রিকান দেশে ফরাসি ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের কারণে ফ্রান্স এই মহাদেশের বেশ কিছু দেশ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছিল এবং তাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্রান্স আবারও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং এই দেশগুলোতে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সহায়তার কথা বলে ফের তাদের সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মালি, নাইজার, চাদ এবং অন্যান্য আফ্রিকান দেশে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অজুহাতে কয়েকশ ফরাসি সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু ফরাসিদের কাজকর্মের বিষয়ে আফ্রিকান দেশগুলো সন্তুষ্ট ছিল না।
আফ্রিকান দেশগুলো মনে করে, ফরাসি সামরিক বাহিনীর মূল উদ্দেশ্য আসলে চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেয়া এবং আফ্রিকায় প্যারিসের ঘাঁটি টিকিয়ে রাখা। মালিতে ফরাসি সামরিক ঘাঁটির কাছে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পাশাপাশি আফ্রিকা মহাদেশের বেশিরভাগ দেশে, বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলা বৃদ্ধির কারণে ফ্রান্সের সামরিক উপস্থিতির ব্যাপারে আফ্রিকান দেশগুলোর ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে।
পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হওয়ায় গত কয়েক বছরে আফ্রিকার অনেক দেশে আবারও ফরাসি বিরোধী মনোভাব জোরদার হয়েছে। বেশ কিছু দেশে একের পর এক অভ্যুত্থানই এর প্রমাণ।
অভ্যুত্থানকারীদের প্রতি জনগণের সমর্থন, ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং দুর্নীতিবাজদের প্রতি প্যারিসের সমর্থনের কারণে আফ্রিকা মহাদেশে ফরাসি ঔপনিবেশিকতার অবসানে এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।
কিছুদিন আগে ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছেন যে, অনেক আগেই আফ্রিকায় দেশটির ঔপনিবেশিক যুগের অবসান ঘটেছে এবং আফ্রিকায় ফরাসি বিরোধী জনমত তীব্রতর হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে, সাম্প্রতিক দশকগুলোয় আফ্রিকান দেশগুলোতে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই তারা আনুষ্ঠানিকভাবে যে কোনো অজুহাতে বাইরের রাজনৈতিক ও সামরিক হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবিতে সোচ্চার।
চাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেমনটি জোর দিয়ে বলেছেন: "ফ্রান্সকে এখন এটা মেনে নিতে হবে যে চাদ অনেক স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং পরিপক্ক হয়েছে।"
এই অবস্থা শুধু ফ্রান্সের জন্য নয়, আমেরিকার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এর আগে চাদ আমেরিকাকে চাদে তাদের সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করতে বলেছিল। এই আহ্বানের ফলে ওয়াশিংটনকে চাদ থেকে তাদের সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিল। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে আফ্রিকান দেশগুলো এখন আর উপনিবেশবাদীদের উপস্থিতি মেনে নিতে প্রস্তুত নয় এবং তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সক্রিয় ও শক্তিশালী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।