ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার আহ্বান যুদ্ধাপরাধী নেতানিয়াহু'র
(last modified Tue, 08 Jul 2025 10:48:11 GMT )
জুলাই ০৮, ২০২৫ ১৬:৪৮ Asia/Dhaka
  • ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়নের চিঠি হস্তান্তর করেন নেতানিয়াহু
    ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়নের চিঠি হস্তান্তর করেন নেতানিয়াহু

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেফতারি পরোয়ানার মুখে থাকা ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গাজা উপত্যকায় চলমান গণহত্যা ও অবরোধের মধ্যেই ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের এক যৌথ সামরিক আগ্রাসন চালানোর পর এই আহ্বান জানালেন যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহু।

সোমবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় নেতানিয়াহু এই ঘোষণা দেন এবং ট্রাম্পকে নোবেল কমিটিতে পাঠানো একটি মনোনয়ন চিঠি হস্তান্তর করেন। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তিনি দাবি করেন, "আমি শুধু ইসরাইলিদের নয়, ইহুদি সম্প্রদায় এবং বিশ্বজুড়ে আপনার অগণিত ভক্তদের পক্ষ থেকে আপনার নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা জানাতে চাই... ন্যায়ের পক্ষে, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আপনার এই নেতৃত্ব, যা আপনি বিশ্বের বহু জায়গায় দিচ্ছেন—বিশেষত এখন মধ্যপ্রাচ্যে।"

নেতানিয়াহু আরও যোগ করেন, "প্রেসিডেন্টের একটি অসাধারণ টিম আছে এবং আমি মনে করি আমাদের টিমগুলো একত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য একটি অনন্য সমন্বয় গড়ে তুলেছে... তাই, মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আমি আপনাকে নোবেল কমিটিতে পাঠানো আমার সেই চিঠিটি উপস্থাপন করতে চাই, যেখানে আপনাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এটি আপনার প্রাপ্য, এবং আপনি এটি পাবেন।"

মনোনয়ন চিঠি গ্রহণ করে ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বলেন, "আপনার কাছ থেকে বিশেষভাবে এটি পাওয়া খুবই অর্থবহ। আমরা দীর্ঘদিন ধরে একসাথে কাজ করেছি এবং ভালো ফল পেয়েছি। সম্প্রতি আমাদের একটি বড় সাফল্য এসেছে এবং আরও অনেক বড় সাফল্য আসবে।"

এই মনোনয়নের পেছনে রয়েছে ইসরাইলি সরকারের দীর্ঘদিনের চাপ—যাতে ট্রাম্প ও তার পূর্বসূরিরা ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়। ২২ জুন ট্রাম্প মার্কিন বাহিনীকে ইরানের নাতাঞ্জ, ফোর্দো ও ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বাঙ্কার-বাস্টার বোমা ও টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। এর আগে ইসরাইল এক সপ্তাহ ধরে ইরানের সামরিক ও বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালিয়ে শতাধিক সাধারণ নাগরিক, নারী-শিশু ও এক ডজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করে।

জবাবে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষত ইসলামিক রেভ্যুলিউশনারি গার্ডস কর্পস (আইআরজিসি), ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে 'অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩' নামে একটি অভূতপূর্ব জবাবি হামলা চালায়। এতে ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক, গোয়েন্দা, শিল্প, শক্তি ও গবেষণা স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তু হয়। ২৪ জুন ইসরাইল একতরফাভাবে তাদের আগ্রাসন বন্ধ করতে বাধ্য হয়, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়।

'ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা'

সোমবার হোয়াইট হাউসের ব্লু রুমে ডিনার আলোচনায় ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধ ও ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। নেতানিয়াহু দাবি করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল অন্যান্য দেশের সাথে কাজ করছে যাতে গাজাবাসীদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে সরিয়ে নিয়ে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি 'ভালো ভবিষ্যৎ' নিশ্চিত করা যায়।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, "যারা থাকতে চায়, তারা থাকতে পারবে। কিন্তু যারা চলে যেতে চায়, তাদের যাওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি এমন দেশ খুঁজে বের করতে, যারা ফিলিস্তিনিদের একটি উন্নত ভবিষ্যৎ দিতে চায়। আমরা কয়েকটি দেশ পেতে যাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে।"

মানবাধিকার সংগঠন ও ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা এই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতিকে সমষ্টিগত শাস্তি ও গাজায় ইসরাইলের চলমান গণহত্যার অংশ বলে নিন্দা জানিয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজার ৯০% জনগণ অন্তত একবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ইসরাইলি দখলদার বাহিনী এ পর্যন্ত ৫৭,৫০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি) গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।#

পার্সটুডে/এমএআর/৮