দক্ষিণ আমেরিকা ও ব্রিটেন
মালভিনাস নিয়ে ব্রিটেন-আর্জেন্টিনা নতুন আলোচনা: কূটনীতি না উপনিবেশবাদ?
-
আর্জেন্টিনা ও মালভিনাস দ্বীপপুঞ্জ
পার্স টুডে - বিতর্কিত মালভিনাস দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে ব্রিটেন এবং আর্জেন্টিনার মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।
৬ জুলাই, ২০২৫ তারিখের ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিন থেকে পার্স টুডে জানিয়েছে , আর্জেন্টিনা ও ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মধ্যে গোপন আলোচনা পুনরায় শুরু হয়েছে, যদিও আপাতদৃষ্টিতে এটি সক্রিয় কূটনীতির লক্ষণ, তবুও গভীরভাবে এটি অব্যাহত উপনিবেশবাদ এবং এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতারণামূলক শোষণের লক্ষণ।
আর্জেন্টিনার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের আগ্রহ এবং দক্ষিণ আটলান্টিকে অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের প্রভাব সুসংহত করার প্রচেষ্টার প্রভাবে এই আলোচনা শুরু হয়েছিল।
যদিও আর্জেন্টিনা মালভিনাস দ্বীপপুঞ্জের মালিকানার উপর জোর দিয়ে চলেছে, কিন্তু তারা ব্রিটেনের আরোপিত অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার চেষ্টা করছে। এই পদক্ষেপটি কূটনৈতিক বাস্তবতা বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এটিকে ব্রিটিশ দখলদারিত্বের প্রতি নীরব স্বীকৃতি হিসাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
দ্য ইকোনমিস্টের মতে, এই চুক্তির অন্যতম লক্ষ্য হতে পারে চীনা প্রভাব বিস্তারের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং মার্কিন সন্তুষ্টি অর্জন করা; এমন একটি লক্ষ্য যার জন্য দক্ষ ব্রিটিশ কূটনীতির প্রয়োজন হবে, আর্জেন্টিনার বৈধ দাবির প্রতি সাড়া নয়। মালভিনাস দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিরোধের ছায়ায় এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা কয়েক দশক ধরে চলে আসছে এবং এখনও সমাধান হয়নি। ডানপন্থী আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি জাভিয়ের মিলির ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার কৌশলগত মিত্র ব্রিটেনের সাথে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রবণতা এই প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করেছে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা আলোচনা পুনরায় শুরু করাকে যদিও উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, বাস্তবে এটি এই অঞ্চলে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক ভূমিকা সুসংহত করার একটি প্ল্যাটফর্ম। ব্রিটেন নীরবে দক্ষিণ আটলান্টিকে আর্জেন্টিনার উপস্থিতির স্বীকৃতি চাইছে। এই সমীকরণে আর্জেন্টিনাকেও সতর্ক থাকতে হবে যাতে তার কূটনৈতিক বাস্তববাদ তার পররাষ্ট্র নীতির মৌলিক নীতিমালাকে নষ্ট না করে।
আঞ্চলিক পর্যায়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো, বিশেষ করে মার্কোসুর সদস্যরা আর্জেন্টিনার দাবিকে সমর্থন করেছে। তবে, ব্রিটেনের সহযোগিতার অস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি এই ফ্রন্টে বিভক্তি তৈরি করতে পারে। আর্জেন্টিনা বারবার জাতিসংঘকে অনুরোধ করেছে যাতে এ বিশ্ব সংস্থা লন্ডনকে আলোচনায় উৎসাহিত করে কিন্তু ব্রিটেন এ বিষয়টি উপেক্ষা করে যাচ্ছে।
আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলো হয়ত সরাসরি সংঘাত রোধ করবে এবং গোয়েন্দা সহযোগিতা বৃদ্ধি ও সামুদ্রিক চোরাচালানের মতো অভিন্ন হুমকি মোকাবেলায় নেতৃত্ব দিতে পারে। তবে, ব্রিটেনের সাথে আর্জেন্টিনার অত্যধিক নৈকট্য আর্জেন্টিনার দাবিকে সমর্থনকারী অন্যান্য দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলির সাথে সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
মোটকথা সার্বভৌমত্বের বিষয়ে দুই পক্ষের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের উপর জোর দেয়া, মালভিনাসের আশেপাশের জলসীমায় তেল সম্পদের গুরুত্ব এবং আন্তরিক আলোচনায় ব্রিটেনের অনীহার মতো বিষয়গুলো গুরুতর বাধা হিসেবে রয়ে গেছে। এই ধরনের পরিবেশে যেকোনো চুক্তি লন্ডনের ঔপনিবেশিক ইতিহাস সম্পর্কে পূর্ণ সচেতনতা বজায় রেখে এবং আর্জেন্টিনার জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে করতে হবে, অন্যথায় এই "নরম" কূটনীতি ব্রিটেনের পুনঃআধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। #
পার্স টুডে/এমএএইচ/০৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।