ডিজিটাল যুগে কি বেসামরিক লোকেরা অনিচ্ছাকৃত গুপ্তচর হয়ে উঠেছে?
পার্সটুডে -গত পঁচিশ বছরে ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনসহ ডিজিটাল সংযোগ সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোসহ বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস সম্প্রতি একটি প্রবন্ধে লিখেছে: প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সশস্ত্র বাহিনীর জন্য নতুন হুমকি তৈরি করেছে এবং সাধারণভাবে যুদ্ধ এবং বেসামরিক অংশগ্রহণের ধারণাগুলো রূপান্তরিত করেছে। পার্সটুডে অনুসারে যুদ্ধক্ষেত্রে বেসামরিক নাগরিকরা স্মার্টফোনের মাধ্যমে সহজেই সময়োপযোগী এবং সঠিক তথ্য, যেমন ছবি, ভিডিও এবং জিপিএস পজিশনিং ডেটা পাঠাতে পারে যা সরাসরি সামরিক লক্ষ্যবস্তু এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলোকে প্রভাবিত করে। আজকের ডিজিটাল বিশ্বে বেসামরিক নাগরিকদের দ্বারা সংগৃহীত তথ্য সামরিক লক্ষ্যবস্তু এবং অভিযানের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ একজন বেসামরিক ব্যক্তি যিনি একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুর ছবি তোলেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন তিনি সরাসরি বিরোধী বাহিনীকে আক্রমণে সহায়তা করতে পারেন।
ঐতিহ্যগতভাবে, গুপ্তচরবৃত্তি সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটি বড় হুমকি ছিল এবং জড়িতরা কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হত। তবে, আজ গুপ্তচর, সহযোগী এবং গোয়েন্দা সূত্রের মধ্যে পার্থক্য আরো জটিল হয়ে উঠেছে। আজকাল ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোন ব্যবহার করে এমন যে কেউ তথ্যের উৎস হতে পারে এমনকি যদি তাদের গুপ্তচরবৃত্তির কোনো উদ্দেশ্য নাও থাকে। এটি সশস্ত্র বাহিনী এবং আন্তর্জাতিক আইনের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যুদ্ধে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ বেসামরিক অংশগ্রহণের মধ্যে পার্থক্য। প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ বলতে এমন কর্মকাণ্ডকে বোঝায় যা স্পষ্টভাবে এবং সরাসরি যুদ্ধ প্রচেষ্টায় অবদান রাখে, যেমন লক্ষ্যবস্তুর জন্য তথ্য সরবরাহ করা। অন্যদিকে, পরোক্ষ অংশগ্রহণ বলতে এমন কার্যকলাপকে বোঝায় যা সাধারণত বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে না। আজকের ডিজিটাল যুগে, এই দুই ধরণের অংশগ্রহণের মধ্যে সীমা ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে। উদাহরণস্বরূপ, যে কেউ জনসাধারণের তথ্যের মাধ্যমে সামরিক লক্ষ্যবস্তুর অবস্থান সনাক্ত করে এবং অনলাইনে প্রকাশ করে তাকে কার্যকরভাবে একজন গুপ্তচরের মতোই দায়ী বলে মনে করা হয় যিনি একই তথ্য সরাসরি সশস্ত্র বাহিনীকে দেন।
এই পরিবর্তনগুলোর প্রতিক্রিয়ায় সরকারগুলোকে ডিজিটাল হুমকি মোকাবেলার জন্য নতুন নীতিমালা তৈরি করতে হবে। এই নীতিগুলোতে ডিজিটাল তথ্য উৎসগুলোর সাথে মোকাবিলা করার নতুন উপায়, বেসামরিক নাগরিকদের সাথে সশস্ত্র বাহিনীর যোগাযোগ পরিচালনা এবং বেসামরিক নাগরিকদের সনাক্তকরণ এবং ক্ষতি থেকে রক্ষা করার নতুন উপায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এই ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হল সশস্ত্র বাহিনী কীভাবে নতুন হুমকি তৈরি করতে পারে এমন ডিজিটাল তথ্য উৎসগুলোর প্রতি সাড়া দিতে পারে। সশস্ত্র বাহিনীকে ডিজিটাল হুমকি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং তাদের মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এছাড়াও, সরকারকে অবশ্যই তাদের ডিজিটাল সিস্টেমগুলো সাবধানতার সাথে ডিজাইন করতে হবে যাতে জনসাধারণের পরিষেবাগুলো অ্যাক্সেস এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণের মধ্যে হস্তক্ষেপ এড়ানো যায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও সরকার এমন একটি অ্যাপ তৈরি করে যা বেসামরিক নাগরিকদের সশস্ত্র বাহিনীতে সংঘাত-সম্পর্কিত তথ্য প্রেরণের অনুমতি দেয়, তবে অ্যাপটির ব্যবহারের ফলে বেসামরিক নাগরিকরা পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারে। এটি বিশেষ করে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মতো সংঘাতের ক্ষেত্রে স্পষ্ট, যেখানে সরকারগুলো তাদের গোয়েন্দা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য বেসামরিক নাগরিকদের দ্বারা তৈরি ডেটা ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবহার করছে।
সামগ্রিকভাবে, ডিজিটাল অগ্রগতি যুদ্ধ পরিচালনার পদ্ধতি এবং বেসামরিক নাগরিকদের অংশগ্রহণের পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তন এনেছে। এই পরিবর্তনগুলির জন্য বেসামরিক নাগরিকদের অধিকার রক্ষা এবং কার্যকরভাবে ডিজিটাল হুমকি পরিচালনা করার জন্য সামরিক আইন এবং নীতিগুলির পর্যালোচনা প্রয়োজন। সরকারগুলো এই ক্ষেত্রে নতুন মান তৈরি করতে এবং তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে যাতে তারা কার্যকরভাবে ডিজিটাল হুমকি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং বেসামরিক নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করতে পারে।#
পার্সটুডে/এমবিএ/১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।