চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ভেনেজুয়েলার ওপর মার্কিন চাপের হাতিয়ার
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151432-চোরাচালানকারীদের_বিরুদ্ধে_যুদ্ধ_ভেনেজুয়েলার_ওপর_মার্কিন_চাপের_হাতিয়ার
পার্স টুডে-কলম্বিয়ার সীমান্তবর্তী জুলিয়া ও তাচিরা প্রদেশে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার ১৫হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
(last modified 2025-08-27T12:57:38+00:00 )
আগস্ট ২৬, ২০২৫ ১৬:০৬ Asia/Dhaka
  • কলম্বিয়ার সীমান্তবর্তী জুলিয়া ও তাচিরা প্রদেশে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার ১৫হাজার সেনা মোতায়েন
    কলম্বিয়ার সীমান্তবর্তী জুলিয়া ও তাচিরা প্রদেশে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার ১৫হাজার সেনা মোতায়েন

পার্স টুডে-কলম্বিয়ার সীমান্তবর্তী জুলিয়া ও তাচিরা প্রদেশে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার ১৫হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

ভেনিজুয়েলার উপকূলে কয়েকটি মার্কিন রণতরী মোতায়েনের জবাবে এই পদক্ষেপ নিয়েছে ল্যাটিন আমেরিকান এই দেশটি। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে "কার্টেল দে লস সোলস" নামে পরিচিত মাদক পাচারকারী গোষ্ঠীর নেতৃত্বদানকারী বলে অভিযুক্ত করেছে এবং তাঁকে গ্রেপ্তারের সহায়ক তথ্যের জন্য ৫ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি মাদুরো কলম্বিয়ার সীমান্তে ভেনেজুয়েলার হাজার হাজার সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন এবং মার্কিন পদক্ষেপগুলোকে দেশের জাতীয় সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে সম্পর্ক সবসময়ই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল, বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর এই পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়েছে।

মার্কিন সরকার বহু বছর ধরে ভেনেজুয়েলার মুদ্রা ও জ্বালানী খাতসহ অর্থনৈতিক নানা ক্ষেত্রে আরোপ করে রেখেছে নিষেধাজ্ঞা। তেল ও জ্বালানী খাত ভেনেজুয়েলার আয়ের প্রধান উৎস। উনবিংশ শতকের প্রথম দিক থেকেই ল্যাটিন আমেরিকান অঞ্চলের ওপর মোড়লিপনা করতে মনরো ডকট্রিন প্রয়োগ শুরু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেমস মনরো ছিলেন এই নীতির প্রবর্তক। 

এই নীতির আলোকে মার্কিন সরকারগুলো সব সময় শত্রুতাপূর্ণ সংঘাতে জড়িয়ে ওয়াশিংটনের ইচ্ছা ও স্বার্থের বিরুদ্ধে সক্রিয় এ অঞ্চলের বামপন্থী নেতৃবৃন্দ ও সরকারগুলো উৎখাত করার প্রচেষ্টাকে তার নীতির অগ্রভাগে রেখেছে। আর এই নীতি ও  পদ্ধতি যা আমেরিকার দাম্ভিক ও আধিপত্যবাদী প্রকৃতি থেকে উদ্ভূত। আর এরই আলোকে মার্কিন সরকার বহু বছর ধরে ভেনেজুয়েলার মুদ্রা ও জ্বালানী খাতসহ অর্থনৈতিক নানা ক্ষেত্রে আরোপ করে রেখেছে কঠোরতম ও তীব্র নিষেধাজ্ঞা। ফলে ভেনিজুয়েলা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে ও হচ্ছে। কিন্তু এতসব চাপ ও বাধা সত্ত্বেও ভেনিজুয়েলার সরকা ও জনগণ দেশটিতে মার্কিন কর্তৃত্বপনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে দেখা গেছে গত বছরের ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এই দেশের জনগণ আবারও মাদুরোকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছে।

এই পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে নতুন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই যার অন্যতম। ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটন ট্রেন ডি আরাগুয়া ও কার্টেল ডি লস সোলসের মতো মাদক পাচারকারী গোষ্ঠীগুলোকে বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে এবং নিকোলাস মাদুরোকে গ্রেপ্তারের সহায়ক তথ্যের জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলার পুরষ্কারের প্রস্তাব দেয়। ২০২৫ সালের জুনে ভেনেজুয়েলার একজন প্রাক্তন সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে মাদক পাচার এবং সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দোষী সাব্যস্ত করার পর এই পদক্ষেপ নেয়া হয়।

ট্রাম্প প্রশাসন এই পদক্ষেপগুলোকে মাদক পাচার ও নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলার একটি উপায় হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে এবং এখন ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার কাছাকাছি এলাকাসহ ল্যাটিন আমেরিকায় মাদক কার্টেলগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তিনটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। এই জাহাজগুলোকে সন্দেহভাজন মাদকের চালান থামানোর  অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো আসলে ভেনেজুয়েলার সীমান্তে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ও সামরিক শক্তি ব্যবহারের আরেকটি অজুহাত। প্রকৃতপক্ষে মার্কিন সরকার মাদকের বিরুদ্ধে কথিত লড়াইকে  ওয়াশিংটনের বিরোধীদের, বিশেষ করে মাদুরো সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের হাতিয়ারে পরিণত করেছে।

প্রকৃতপক্ষে ল্যাটিন আমেরিকা ও এর আশেপাশের অঞ্চলে বামপন্থী সরকারগুলোর অব্যাহত উপস্থিতি ওয়াশিংটন মেনে নেয় না, কারণ এই সরকারগুলো স্পষ্টতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী নীতি ও দাবির বিরোধী এবং তারা আমেরিকার দাবিগুলোর কাছে নতি স্বীকার করে না। তাই এটা স্পষ্ট ভেনিজুয়েলার সীমান্তের কাছে মার্কিন সামরিক পদক্ষেপগুলোর আসল উদ্দেশ্য হল ভেনেজুয়েলার মাদুরো সরকারকে দুর্বল করা ও গোটা অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব বৃদ্ধি করা।

অন্যান্য অর্থনৈতিক চাপের পাশাপাশি এই পদক্ষেপগুলো আসলে এই অঞ্চলের স্বাধীন দেশগুলির প্রতি মার্কিন ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। এইসব দেশ ওয়াশিংটনের দাবির কাছে নতি স্বীকার করতে ইচ্ছুক নয়। তাই এতে কোনো সন্দেহ নেই যে মাদক পাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের আরেকটি বড় হাতিয়ার। #

পার্স টুডে/এমএএইচ/২৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।