এশিয়ার অর্থনীতি: পরিবর্তন হচ্ছে গতিপথ; সাংহাই বৈঠকে ইরানের সম্মানজনক উপস্থিতি
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151706-এশিয়ার_অর্থনীতি_পরিবর্তন_হচ্ছে_গতিপথ_সাংহাই_বৈঠকে_ইরানের_সম্মানজনক_উপস্থিতি
পার্সটুডে- এশিয়া বর্তমানে একটি মৌলিক পরিবর্তনের সময়কাল অতিক্রম করছে। একদিকে উদ্ভাবিত হচ্ছে “পুনর্গঠনমূলক অর্থনীতি”, যা পরিবেশ ও সামাজিক ইকোসিস্টেম পুনর্নির্মাণ এবং সামাজিক মূলধন শক্তিশালী করার ওপর জোর দেয়। এছাড়া, ইরান সাংহাই সহযোগিতা সংস্থায় সক্রিয় বহুপাক্ষিক কূটনীতি চালিয়ে বিশ্বব্যবস্থার নিয়মাবলী নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
(last modified 2025-09-08T13:26:12+00:00 )
সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২৫ ১৯:৫১ Asia/Dhaka
  • সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সম্মেলন
    সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সম্মেলন

পার্সটুডে- এশিয়া বর্তমানে একটি মৌলিক পরিবর্তনের সময়কাল অতিক্রম করছে। একদিকে উদ্ভাবিত হচ্ছে “পুনর্গঠনমূলক অর্থনীতি”, যা পরিবেশ ও সামাজিক ইকোসিস্টেম পুনর্নির্মাণ এবং সামাজিক মূলধন শক্তিশালী করার ওপর জোর দেয়। এছাড়া, ইরান সাংহাই সহযোগিতা সংস্থায় সক্রিয় বহুপাক্ষিক কূটনীতি চালিয়ে বিশ্বব্যবস্থার নিয়মাবলী নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এশিয়ার দেশগুলো তাদের কোম্পানিগুলোকে পুনর্গঠনমূলক অর্থনীতির দিকে এগোতে উত্সাহিত করার পাশাপাশি সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা এবং অন্যান্য কৌশলগত কূটনৈতিক কাঠামোর আওতায় বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিতে পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে জোরদার করছে। পার্সটুডে'র এই প্রতিবেদনে এশিয়ার অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

পুনর্গঠনমূলক অর্থনীতি: টেকসই অর্থনীতির উচ্চস্তর

গত কয়েক দশকে “টেকসই অর্থনীতি” পরিবেশ ও সামাজিক সংকটের সমাধান হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। কিন্তু বর্তমানে এশিয়ার কোম্পানিগুলো এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে পুনর্গঠনমূলক অর্থনীতি গ্রহণ করছে। এই মডেলটি ক্ষতিগ্রস্ত ইকোসিস্টেম পুনর্নির্মাণ এবং নৈতিক মানদণ্ডের ওপর জোর দেয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হংকংয়ের “ইকোসিস্টেম” কোম্পানি সমুদ্র থেকে সংগ্রহ করা প্লাস্টিককে প্রক্রিয়াজাত করে নতুন কাপড়ের ফাইবার তৈরি করছে। এই উদ্যোগ শুধু পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন করছে না বরং নতুন প্রজন্মের ভোক্তাদের নৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সংযুক্ত করছে। সিঙ্গাপুরের “হুয়াসান” কোম্পানি বাতাস থেকে সরাসরি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্বন-নিরপেক্ষ জ্বালানি উৎপাদনে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে।

কৌশলগত বিনিয়োগ: অতিরিক্ত খরচ নয়

পুনর্গঠনমূলক অর্থনীতির ব্যয় ও বিনিয়োগের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক। এখানে পরিবেশ সংরক্ষণকে অতিরিক্ত খরচ হিসেবে দেখা হয় না, বরং এটিকে কৌশলগত বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হয়। এটি তিনটি ক্ষেত্রে কার্যকর:

এক- প্রাকৃতিক মূলধন পুনর্নির্মাণ

দুই- সামাজিক মূলধন শক্তিশালীকরণ

তিন- টেকসই অর্থনৈতিক আয় নিশ্চিতকরণ

যদিও আইনি কাঠামোর অভাব, গবেষণার উচ্চ ব্যয় এবং প্রথাগত ভোক্তাদের প্রতিরোধ এই মডেলের বিস্তারকে হ্রাস করছে, এরপরও বিনিয়োগের প্রবাহ এই মডেলের অগ্রগতিকেই নির্দেশ করছে।

সাংহাইতে ইরানের অবস্থান: প্রতিরোধমূলক অর্থনীতি ও কৌশলগত ভূমিকা

চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত ২৫তম সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা সম্মেলনে ইরান দেখিয়েছে যে, অর্থনৈতিক কূটনীতি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সমপর্যায়ের ভূমিকা রাখতে পারে।

ইরান শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনীতি বিষয়ে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছে এবং প্রস্তাব পেশ করেছে। এসব প্রস্তাব থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, তেহরান বহুপক্ষীয় সহযোগিতায় কৌশলগত চিন্তাধারার অধিকারী।

সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ইরানের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত চাবাহার বন্দরের ওপর গুরুত্বারোপ। এই বন্দর মধ্য এশিয়াকে মুক্ত সমুদ্রের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে। চীন ও ভারতও এ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। বেইজিংয়ের বিনিয়োগ প্রস্তাব এবং নয়াদিল্লির আগ্রহ ইরানকে ইউরেশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

অর্থনীতি বনাম নিষেধাজ্ঞা: খেলায় নতুন নিয়ম

সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সম্মেলনের অবকাশে ইরান বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কমাতে ইরান স্বতন্ত্র আর্থিক ব্যবস্থার প্রবর্তন যেমন জাতীয় মুদ্রায় লেনদেনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। চীনের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও উপগ্রহ প্রযুক্তিতে সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে যা ইরানের ডিজিটাল অবকাঠামোকে শক্তিশালী করবে।

চীন ও ভারত: প্রতিযোগিতা নাকি সহযোগিতা?

সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল চীন ও ভারতের শীর্ষ নেতার বৈঠক। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ বছর পর সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়েছে। এই ঘনিষ্ঠতা আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতায় প্রভাব ফেলতে পারে। চাবাহারের মাধ্যমে সম্ভাব্য সংযোগ পয়েন্ট হিসেবে ইরান এই প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে। তবে ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধ ও পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মতো বিষয়গুলোও এখনও রয়ে গেছে।

এশিয়া বিশ্বব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু

সাংহাই সম্মেলন কেবল একটি আঞ্চলিক সম্মেলন নয়; এটি পাশ্চাত্যের আধিপত্যের পতনের ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং বহুপক্ষীয় বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ার মঞ্চ হিসেবে সামনে এসেছে। ইরান সক্রিয় কূটনীতির মাধ্যমে এই নতুন বিশ্বব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হয়ে উঠেছে। একই সময়ে এশিয়ার কোম্পানিগুলো পুনর্গঠনমূলক অর্থনীতির মাধ্যমে উদ্ভাবন, স্থায়ীত্ব এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার সমন্বয় ঘটাচ্ছে।#

পার্সটুডে/এসএ/৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।