পূর্ব এশিয়ায় আমেরিকার গোপন বায়োলজিক্যাল পরীক্ষা ও যুদ্ধের ভয়াবহতা
https://parstoday.ir/bn/news/world-i152000-পূর্ব_এশিয়ায়_আমেরিকার_গোপন_বায়োলজিক্যাল_পরীক্ষা_ও_যুদ্ধের_ভয়াবহতা
পার্সটুডে : পূর্ব এশিয়ায় আমেরিকার অপরাধ একটি জটিল এবং বিতর্কিত বিষয়- যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
(last modified 2025-09-16T05:26:25+00:00 )
সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৫ ১৬:৪৯ Asia/Dhaka
  • মার্কিন বিমান থেকে ভিয়েতনামে রাসায়নিক বোমা হামলা
    মার্কিন বিমান থেকে ভিয়েতনামে রাসায়নিক বোমা হামলা

পার্সটুডে : পূর্ব এশিয়ায় আমেরিকার অপরাধ একটি জটিল এবং বিতর্কিত বিষয়- যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।

পার্সটুডে'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান কাজ ছিল বায়োলজিক্যাল ও কেমিক্যাল অস্ত্র ব্যবহার এবং পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বায়োলজিক্যাল পরীক্ষা চালানো, যা মানুষের জীবন ও পরিবেশে গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এখানে তুলে ধরা হলো:  

পূর্ব এশিয়ায় আমেরিকার বায়োলজিক্যাল পরীক্ষা

১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে চীন ও কোরিয়ায়, প্লেগ এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগসহ জৈবিক অস্ত্র পরীক্ষার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। এই পরীক্ষাগুলো বায়োলজিক্যাল অস্ত্র ব্যবহারের ছত্রছায়ায় পরিচালিত হয়েছিল। ঐতিহাসিক নথিপত্র ও রিপোর্ট দেখায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও কোরিয়ার কিছু অঞ্চলে প্লেগসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবের জন্য দায়ী। অনেক পরীক্ষা গোপনে ও সামরিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল, যেখানে লক্ষ্য ছিল বায়োলজিক্যাল ও কেমিক্যাল অস্ত্রের প্রভাব মানুষের উপর এবং অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উপর পরিমাপ করা। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধগুলোর মধ্যে একটি ছিল কোরিয়া ও উত্তর-পূর্ব চীনে, যেখানে ব্যাপক পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া, কীটপতঙ্গ, পশুর ক্ষয়িষ্ণু অংশ এবং মাছের দেহ ঝড়ানো হয়েছিল মানুষের উপর ও কৃষিভূমিতে। এর ফলে প্লেগ, অ্যানথ্রাক্স ও এনসেফালাইটিসের মত রোগের দ্রুত প্রাদুর্ভাব হয় এবং ব্যাপক মৃত্যু ঘটে। এই অপরাধগুলোর প্রভাব এখনও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে জেনেটিক্যাল রোগের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম টেনে চলেছে। এই পরীক্ষা কখনো খোলাখুলি এবং কখনো গোপনে চালানো হতো। এই পরীক্ষায় রোগগুলো সচেতনভাবেই মানুষের ও পশুর মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হতো যাতে এর প্রভাব পরিবেশ ও দেশের নিরাপত্তার ওপর মূল্যায়ন করা যায়।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় বায়োলজিক্যাল অস্ত্রের ব্যবহার

ভিয়েতনাম যুদ্ধ (১৯৫৫–১৯৭৫) চলাকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করা হয় কেমিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল অস্ত্র ব্যবহার করে প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস, শত্রু দমনে এবং বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে আঘাত করার জন্য। এর মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত হচ্ছে 'অরেঞ্জ এজেন্ট' নামক রাসায়নিক। এই পদার্থে ডাইঅক্সিন ছিল, যা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল এবং মানুষের স্বাস্থ্যে, বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। যদিও এটি সরাসরি দুর্ভিক্ষ বা রোগের সৃষ্টিকারী ছিল না, তবে এর পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত প্রভাব ব্যাপক ছিল।

দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব স্বাস্থ্য ও পরিবেশে

চীন, কোরিয়া ও ভিয়েতনামসহ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বায়োলজিক্যাল ও কেমিক্যাল অস্ত্রের ব্যবহার দীর্ঘমেয়াদী ও বিধ্বংসী প্রভাব ফেলে। প্লেগ, কলেরা, ম্যালেরিয়া ও শ্বাসকষ্টের মত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়। এই রোগগুলো শুধু তখনকার সময়ের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে, যুদ্ধ শেষে অনেক মানুষ এখনো রাসায়নিক ও বায়োলজিক্যাল পদার্থের কারণে বিভিন্ন রোগে ভুগছে। অনেকেই ত্বকের রোগ, ক্যান্সার ও জন্মগত বিকলাঙ্গতায় আক্রান্ত হয়েছেন। পরিবেশও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বনাঞ্চল ও কৃষিজমির ধ্বংস।

উপসংহার

পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধ, বিশেষ করে বায়োলজিক্যাল ও কেমিক্যাল অস্ত্র ব্যবহারে মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর গভীর ও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। প্লেগসহ মারাত্মক রোগের প্রাদুর্ভাব ও ভিয়েতনাম যুদ্ধে এসব অস্ত্রের ব্যবহার প্রমাণ করে, এই অস্ত্রগুলো শুধু তাত্ক্ষণিক ক্ষতি করে না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ধ্বংসাত্মক ফলাফল বয়ে আনে। এই ঘটনা গুলোকে আরও গভীরভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন যাতে আন্তর্জাতিক স্তরে এর ফলাফল ও দায়িত্ববোধ স্পষ্ট হয় এবং যারা এই মানবতাবিরোধী কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।#

পার্সটুডে/এমএআর/১৫