রাজনীতি থেকে শুরু করে খেলাধুলা এবং সংস্কৃতি; আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্নতার কবলে ইসরায়েল
পার্সটুডে-গাজায় যুদ্ধ এবং ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর অন্যান্য অপরাধের ফলে এই অবৈধ শাসনযন্ত্র একের পর এক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চাপের মুখে পড়েছে। আর এসব চাপ এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীকে বিশ্বে একটি ঘৃণ্য ও বিতাড়িত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
কূটনীতি থেকে ফুটবল পর্যন্ত,বিশ্বে ইহুদিবাদীরা বিতাড়িত" শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে সিএনএন নিউজ নেটওয়ার্ক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াক্ষেত্রে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়া পরীক্ষা করে জোর দিয়ে বলেছে যে গাজায় যুদ্ধ এবং মানবিক সংকটের ধারাবাহিকতা ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর ঘৃণ্য শাসনতন্ত্রে রূপান্তরের গতি ত্বরান্বিত করেছে। ইরানি স্টুডেন্টস নিউজ এজেন্সি বা ইরনার বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, গাজা শহরে স্থল অভিযানের ঘোষণা এবং কাতারে হামাস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব আক্রমণের পর ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর বিচ্ছিন্নতা তীব্রতর হয়েছে।
সিএনএন অনুসারে, স্বাধীন জাতিসংঘ প্যানেলের প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিশ্বব্যাপী নিন্দাও তীব্রতর হয়েছে; একটি প্রতিবেদন যেখানে সংস্থাটি প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে যে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠী গণহত্যা করেছে।
অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চাপ
সিএনএন জানিয়েছে যে ইসরায়েলি শাসনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব করেছে যার মধ্যে রয়েছে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির অংশ স্থগিত করা। বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ ইতিমধ্যেই পশ্চিম তীরে সহিংসতা সমর্থনকারী ব্যক্তি, বসতি স্থাপনকারী এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লক্ষ্যবস্তু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
বিশ্বের বৃহত্তম বিনিয়োগ তহবিল হিসেবে নরওয়েজিয়ান জাতীয় সম্পদ তহবিল গাজার মানবিক সংকটের কারণে আগস্ট মাসে অধিকৃত অঞ্চলে তার কিছু বিনিয়োগ স্থগিত করেছে। এছাড়াও, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো ইসরায়েলি শাসনের বিরুদ্ধে পূর্ণ বা আংশিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
প্রতিবেদনে জোর দেওয়া হয়েছে যে এমনকি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও এক ধরণের "বিচ্ছিন্নতা" স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন এবং সতর্ক করেছেন যে এই পরিস্থিতি বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে। যদিও তিনি পরে তার মন্তব্যকে খাটো করে দেখার চেষ্টা করেছিলেন সিএনএন লিখেছে যে তার বক্তব্যে অর্থনৈতিক ও সামরিক পরিণতি সম্পর্কে প্রকৃত উদ্বেগ প্রতিফলিত করেছে।
সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক বয়কট
সিএনএন লিখেছে যে এই প্রবণতা সংস্কৃতি ও শিল্পকলার ক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়েছে। আয়ারল্যান্ড,স্পেন এবং নেদারল্যান্ডসের টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলো ঘোষণা করেছে যে ইসরায়েল অংশগ্রহণ করলে তারা ২০২৬ সালের ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতা বয়কট করবে। বেলজিয়ামে একটি সঙ্গীত উৎসবের কর্মকর্তারা "তেল আবিবের অপরাধমূলক শাসন"-এর সাথে সংযোগের জন্য একজন জায়নিস্ট অর্কেস্ট্রা কন্ডাক্টরের একটি কনসার্ট বাতিল করেছেন। সিনেমার ক্ষেত্রে, অলিভিয়া কোলম্যান, এমা স্টোন এবং অ্যান্ড্রু গারফিল্ড সহ হাজার হাজার হলিউড অভিনেতা এবং পরিচালক ইসরায়েলি চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সহযোগিতা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ক্রীড়া চাপ
ক্রীড়ার ক্ষেত্রেও এই প্রবণতা স্পষ্ট। ফিলিস্তিনি সমর্থকদের ব্যাপক বিক্ষোভের কারণে সাইক্লিং দৌড়ের চূড়ান্ত পর্ব বাতিল করা হয়েছিল এবং স্পেনের একটি দাবা টুর্নামেন্টে ইসরায়েলি খেলোয়াড়দের ইসরায়েলি পতাকার নীচে প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এমনও খবর রয়েছে যে ইসরায়েলি ক্রীড়া কর্মকর্তারা ইউরোপীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা থেকে স্থগিতের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রতিবেদনে ইসরায়েলের বর্তমান পরিস্থিতি দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ যুগের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন
সিএনএন আরও জানিয়েছে যে যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং যুদ্ধবিরতির সমর্থনে অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বব্যাপী,বয়কট, ডিভেস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাঙ্কশনস (বিডিএস) আন্দোলন আরও বেশি মনোযোগ এবং সমর্থন অর্জন করেছে এবং বর্ণবাদ যুগের মতো চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে গাজায় গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের তদন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তদন্তের প্রতি আগের চেয়ে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
পার্সটুডে/এমবিএ/২৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।