ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তুরস্ক-মার্কিন সম্পর্ক যে কারণে অস্থির এবং অস্পষ্ট
-
• হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প এবং এরদোগানের সাক্ষাৎ
পার্সটুডে- সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন কারণে তুরস্ক-মার্কিন সম্পর্ক অনেক ওঠানামার মধ্য রয়েছে।
পার্সটুডে জানিয়েছে, তুরস্ক-মার্কিন সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে "জোট" বা "কৌশলগত অংশীদারিত্ব" এর মতো ধারণার কাঠামো থেকে দূরে সরে গেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের ২৩ বছরের ক্ষমতায় থাকা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তার দ্বিতীয় মেয়াদে অর্জনের আকাঙ্ক্ষা আঙ্কারা এবং ওয়াশিংটনের সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলেছে।
এরদোগান এবং ট্রাম্পের ব্যক্তিগত লক্ষ্য উদ্দেশ্য যা তুরস্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষায় ভূমিকা পালন করেছে, তার বিপরীতে, আঞ্চলিক ঘটনাগুলো ওই সম্পর্কেকে প্রভাবিত করেছে; যার মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতি ওয়াশিংটনের পূর্ণ সমর্থন, বিশেষ করে সিরিয়ায়। সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর, ইসরায়েল সিরিয়ায় তুর্কি সামরিক উপস্থিতির অনুমতি দেয়নি এবং এমনকি সিরিয়ার T-4 বিমানঘাঁটিতে একটি তুর্কি রাডার সিস্টেমের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন তুর্কি সৈন্যকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। অবশ্য, পশ্চিম এশিয়ায় আরো কিছু বিষয় রয়েছে যা তুরস্ক-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করে, যার মধ্যে রয়েছে কুর্দিদের প্রতি মার্কিন সমর্থন, সাইপ্রাস সমস্যা এবং গাজার পরিস্থিতি। আঙ্কারা আশা করে যে আমেরিকা সিরিয়ায় কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে যে কোনও সমর্থন বন্ধ করবে। তুরস্ক আরো আশা করে যে ট্রাম্প উত্তর সাইপ্রাসের উপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবেন যদিও ন্যাটো সদস্য হিসেবে গ্রিস এই ধরনের পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করে। পশ্চিম তীরের কিছু অংশ সংযুক্ত করার এবং গাজা উপত্যকা দখল করার ইসরায়েলের পরিকল্পনাও আঞ্চলিক কাঠামোর ক্ষেত্রে তুরস্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধের অন্যতম কারণ।
সকল কাঠামোগত বাধার পাশাপাশি, ট্রাম্পের কাছ থেকে এরদোগানের প্রধান প্রত্যাশা হলো সিরিয়ায় ইসরায়েলি আগ্রাসন প্রতিরোধের জন্য একটি ব্যবস্থা নির্ধারণ করা। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে পৌঁছতে হলে ট্রাম্প স্পষ্টভাবে এরদোগানকে রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস আমদানি বন্ধ করার জন্য বলেছেন।
মনে হচ্ছে ট্রাম্প এবং এরদোগান তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার স্বার্থে একে অপরকে উপেক্ষা করতে পারবেন না আবার তারা কৌশলগত অংশীদারও হতে পারবেন না। অতএব, হোয়াইট হাউসে এরদোগান এবং ট্রাম্পের মধ্যে সাম্প্রতিক বৈঠকে অর্থনৈতিক সাফল্য থাকলেও, ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক চুক্তিগুলিকে কৌশলগত সম্পর্কে রূপান্তর করা কঠিন।
২০১৯ সালে, রাশিয়ান S-400 বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার প্রতিবাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পঞ্চম প্রজন্মের F-35 যুদ্ধবিমানের উৎপাদন এবং ক্রয় থেকে আঙ্কারাকে বাদ দেয়। F-35 প্রাপ্তিতে হতাশ হওয়ার পর, তুরস্ক 40টি F-16 ব্লক 70 যুদ্ধবিমান এবং ইউরোপীয় ইউরোফাইটার কেনার চেষ্টা করছে।
ট্রাম্প সম্প্রতি তার সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন: “আমরা তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সাথে অনেক বাণিজ্যিক ও সামরিক চুক্তি নিয়ে কাজ করছি, যার মধ্যে রয়েছে বোয়িং বিমানের একটি বৃহৎ ক্রয় এবং একটি বৃহৎ F-16 চুক্তি। F-35 বিক্রির বিষয়েও আলোচনা চলছে।”
বর্তমানে, তুরস্কের সাথে বোয়িং চুক্তি ট্রাম্পের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। কিছু তুর্কি সংবাদমাধ্যম এই সংখ্যাটিকে 250 থেকে 300 বোয়িং যাত্রীবাহী বিমান কেনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। এই ধরনের চুক্তির মূল্য $30 থেকে $35 বিলিয়ন ডলারের মধ্যে হবে, যা ট্রাম্প সম্ভবত যুদ্ধবিমান বিক্রির পূর্বশর্ত হিসেবে দেখছেন। একই সময়ে, কিছু তুর্কি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে যে টার্কিশ এয়ারলাইন্স আমেরিকান কোম্পানি বোয়িং এবং লকহিড মার্টিনের সাথে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে।
এ খবর এমন এক সময়ে এসেছে যখন জানা গেছে ওয়াশিংটন-আঙ্কারা সম্পর্ক এখনও কাঙ্ক্ষিত পথে নেই।
তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের বলেন, "২০১৯ সালে কার্যকর হওয়া CATSA নামে পরিচিত মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আইনের অংশ হিসেবে, তুরস্কের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান, কান-এ ব্যবহৃত ইঞ্জিনের রপ্তানি লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে"। "যেহেতু ইঞ্জিনগুলো সরবরাহ করা হয়নি, তাই উৎপাদন শুরু করা যাচ্ছে না। আঙ্কারা এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি অন্যতম শীর্ষ অগ্রাধিকার যা সমাধান করা উচিত।"
উল্লেখ্য যে, তুর্কি প্রেসিডেন্ট প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার প্রধান অধ্যাপক খাল্লুক ফিদানের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং দৃঢ়ভাবে বলেছেন নিজস্ব প্রযুক্তিতে কানের উৎপাদন এবং সরবরাহের সময়সূচীতে কোনও ব্যাঘাত ঘটছে না। দেশীয়ভাবে উৎপাদিত প্রধান ইঞ্জিন, TF35000 এবং APU60 সহায়ক বিদ্যুৎ ইউনিটের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিকল্পনা অনুযায়ী অব্যাহত রয়েছে। তুরস্কের বিমান শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে দেশীয় ইঞ্জিন উৎপাদনে ২০৩২ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে এবং ২০২৮ সালের শেষ পর্যন্ত তুরস্ক আমেরিকান ইঞ্জিনের উপর নির্ভরশীল থাকবে।
তুরস্কের কাছে বিমান ইঞ্জিন বিক্রির বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসের বিরোধিতা সরাসরি তুরস্কের রাশিয়ান S-400 সিস্টেম কেনার সাথে সম্পর্কিত এবং ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা গত কয়েক বছরে এই কারণে বারবার তুরস্কের উপর চাপ সৃষ্টি করেছেন। মার্কিন কংগ্রেস তুরস্কের কাছে যুদ্ধবিমান ইঞ্জিন বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবর থেকে বোঝা যায় যে, তুরস্কের শাসক দলের মিডিয়ায় করা দাবির বিপরীতে, ওয়াশিংটন এবং আঙ্কারার মধ্যে সম্পর্ক এখনও কাঙ্ক্ষিত পথে নেই।#
পার্সটুডে/এমআরএইচ/২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।