ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা: সংঘাতের অবসান নয়, ইসরায়েলি কৌশলের নীলনকশা
https://parstoday.ir/bn/news/world-i152612-ট্রাম্পের_গাজা_পরিকল্পনা_সংঘাতের_অবসান_নয়_ইসরায়েলি_কৌশলের_নীলনকশা
পার্সটুডে : ইসরায়েলি দৈনিক হারেত্জ জানিয়েছে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা গাজা যুদ্ধের অবসানের কোনো রূপরেখা নয়, বরং তা তেল আবিবকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
(last modified 2025-10-27T13:35:51+00:00 )
অক্টোবর ০৩, ২০২৫ ১৯:০৫ Asia/Dhaka
  • ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু
    ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

পার্সটুডে : ইসরায়েলি দৈনিক হারেত্জ জানিয়েছে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা গাজা যুদ্ধের অবসানের কোনো রূপরেখা নয়, বরং তা তেল আবিবকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

হারেত্জ লিখেছে, গাজার যুদ্ধ শেষ করার ট্রাম্পের পরিকল্পনার সমান্তরালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জটিল এক সংকটে পড়েছেন—যেখানে আন্তর্জাতিক চাপের পাশাপাশি দেশীয় রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলো জড়িয়ে আছে। যদিও নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন, তবে তাঁর ঘনিষ্ঠরা ও বিশ্লেষকরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, তিনি এর সব ধারায় আন্তরিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন কিনা। তারা জোর দিয়ে বলেছেন, পরিকল্পনার কিছু অংশ কার্যত বাস্তবায়নযোগ্য নয় এবং এটি নেতানিয়াহুর হাতে সময়ক্ষেপণ ও দর–কষাকষির সুযোগ করে দেয়।

হারেত্জ আরও লিখেছে, এই পরিকল্পনায় অনেক অস্পষ্টতা ও অনিশ্চয়তা রয়েছে এবং এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্পষ্ট লক্ষ্য ও মানদণ্ডের অভাব আছে। এ কারণে নেতানিয়াহু পরিকল্পনার গতি ও বাস্তবায়নের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারবেন।

উদাহরণস্বরূপ, পরিকল্পনায় বলা হয়েছে যে, উভয় পক্ষের গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ হবে, সব আক্রমণাত্মক অভিযান স্থগিত করা হবে এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু এই পরিকল্পনায় উল্লেখ নেই, যদি হামাস এ শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয় — যেমন সব বন্দি তাদের নিয়ন্ত্রণে না থাকলে, বা মৃত বন্দিদের দেহ চিহ্নিত করতে সমস্যা হলে — তখন কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তাছাড়া, ট্রাম্পের পরিকল্পনা স্পষ্ট করেনি- কোন ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এতে হামাসের সঙ্গে গুরুতর মতবিরোধ তৈরি হতে পারে, বিশেষ করে বিশিষ্ট ফিলিস্তিনি নেতাদের মুক্তি নিয়ে। অন্যদিকে নেতানিয়াহু এসব দাবিকে প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন, এমনভাবে যেন তিনি প্রকাশ্যে কোনো সমঝোতা ভঙ্গ করছেন না।

হারেত্জ আরও জানিয়েছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী যুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে গাজায় হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ অস্পষ্ট। কারণ তাদের থাকতে হলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে এবং অস্ত্র পরিত্যাগ করতে হবে। অথচ হামাস স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, যতদিন দখলদারি চলবে, প্রতিরোধের অস্ত্র মাটিতে রাখা হবে না।

এছাড়া, ইসরায়েলি সেনাদের গাজা থেকে প্রত্যাহারকে প্রতিরোধ বাহিনীর সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ এবং সব বন্দি মুক্তির সঙ্গে শর্তযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু লেবাননের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে, এমনকি হামাস রাজি হলেও ইসরায়েলের চুক্তিভঙ্গের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি এবং মার্কিন প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি পালনে অনীহার ঝুঁকি খুবই বেশি।

ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত স্বার্থ

ইহুদিবাদী মন্ত্রিসভার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো হারেত্জ-কে জানিয়েছে, নেতানিয়াহু রাজনৈতিক বা নিরাপত্তাগত যেকোনো কারণে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া পছন্দ করতে পারেন, যদি সংঘাত–পরবর্তী সময়ে হামাস নেতৃত্ব গাজায় টিকে থাকে। এটি সরাসরি ট্রাম্প পরিকল্পনার শর্তাবলির বিরোধী। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করতে পারবেন না। এই অবস্থায় পরিকল্পনার অস্পষ্ট ধারাগুলো নেতানিয়াহুর জন্য এক আদর্শ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, যা তিনি ইসরায়েলের স্বার্থ অনুযায়ী প্রয়োগ করতে পারবেন।

এমনকি কাতারের এই বিবৃতি যে- 'হামাস আরও সংশোধন দাবি করতে পারে', তা ইসরায়েলের কৌশলের সীমানা বাড়িয়ে দেয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য পরিকল্পনার প্রতি আনুগত্যের পরিমাণ মূল্যায়ন করা আরও কঠিন করে তোলে।#

পার্সটুডে/এমএআর/৩