মার্কিন শুল্কযুদ্ধের জবাব: উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে ভারতের প্রতিরোধ
https://parstoday.ir/bn/news/world-i153762-মার্কিন_শুল্কযুদ্ধের_জবাব_উদ্ভাবন_ও_প্রযুক্তি_উন্নয়নের_মাধ্যমে_ভারতের_প্রতিরোধ
পার্সটুডে: যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কযুদ্ধ তীব্রতর হওয়ার পর, ভারত তার বৈজ্ঞানিক ও শিল্প সক্ষমতা বৃদ্ধির নতুন নীতি গ্রহণ করেছে।
(last modified 2025-11-28T10:09:50+00:00 )
নভেম্বর ০৬, ২০২৫ ১৯:২৫ Asia/Dhaka
  • নরেন্দ্র মোদী
    নরেন্দ্র মোদী

পার্সটুডে: যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কযুদ্ধ তীব্রতর হওয়ার পর, ভারত তার বৈজ্ঞানিক ও শিল্প সক্ষমতা বৃদ্ধির নতুন নীতি গ্রহণ করেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটির প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো ও কৌশলগত প্রযুক্তিতে আত্মনির্ভরতা জোরদার করার লক্ষ্যে ১.১৩ বিলিয়ন ডলারের (১১৩ কোটি মার্কিন ডলার) একটি তহবিল গঠন করেছেন, যা বেসরকারি খাতে গবেষণা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবনকে সহায়তা করবে।

ইরনা বার্তা সংস্থা'র উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের বাণিজ্যিক নীতির কারণে বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশে সরবরাহ–শৃঙ্খল ভেঙে পড়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি ভারতের জন্য হুমকি নয়, বরং এক নতুন সুযোগ।

অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাণিজ্যিক সীমাবদ্ধতা ও বৈশ্বিক সরবরাহ–শৃঙ্খলে সৃষ্ট ফাঁকগুলো সেইসব অর্থনীতির জন্য সুযোগ এনে দেয়, যারা দ্রুত অভিযোজন করতে পারে। তারা মনে করেন, অনিশ্চয়তা থেকে দূরে সরে না গিয়ে, বরং সাহসিকতার সঙ্গে শিল্প ও প্রযুক্তিনীতিতে ঝুঁকি নেওয়ার মাধ্যমেই ভারত অগ্রগতি অর্জন করতে পারবে।

এই প্রসঙ্গে ভারতের শিব নাদার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্লেষকরা বলেছেন, সংকটময় সময়ে সিদ্ধান্ত–গ্রহণকারীরা সাধারণত 'নিরাপদ ও পূর্বানুমানযোগ্য পথ' এবং 'ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু উচ্চ–ফলনশীল পথ'— এই দুই বিকল্পের মধ্যে পড়ে যান। অভিজ্ঞতা বলে, আপাত ব্যর্থতাও শিক্ষণীয় হতে পারে, কারণ তা ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তের জন্য জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে।

অর্থনীতিতে এই যুক্তি “কৌশলগত পরীক্ষা–নিরীক্ষা” নামে পরিচিত। ভারতের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ— দেশটি স্থানীয়ভাবে সেমিকন্ডাক্টর (ফ্যাব) উৎপাদন ইউনিট স্থাপন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)–নির্ভর স্টার্টআপে সহায়তা এবং বিদ্যুৎচালিত যানবাহনে বিনিয়োগের মতো উদ্যোগ নিচ্ছে। এসব ক্ষেত্র ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এগুলো দেশের দক্ষতা, অবকাঠামো ও জাতীয় শিক্ষণক্ষমতা বাড়ায়।

ভারতের ইতিহাসও প্রমাণ করে যে, সাহস ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। স্বাধীনতার পর সর্বজনীন ভোটাধিকার বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে শীতল যুদ্ধের সময় নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ—প্রতিবারই ভারত বড় ঝুঁকি নিয়েছে, কিন্তু ফলস্বরূপ টেকসই প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। আজও দেশটি একই পথ অনুসরণ করছে।

ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, 'অতিরিক্ত সতর্কতা'র গোপন খরচ অনেক সময় ব্যর্থতার চেয়েও বেশি হতে পারে। তাই, তাঁদের মতে, পরীক্ষা–নিরীক্ষা জাতীয় নীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া উচিত।

সবশেষে বলা যায়, এমন এক বিশ্বে যেখানে ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও ভূ–রাজনৈতিক বিভাজন নতুন বাস্তবতা তৈরি করছে, সফল হবে তারা যারা ভুল থেকে শিক্ষা নেয়, ব্যর্থ হবে তারা যারা ভুল এড়িয়ে চলে। যদি ভারত ২১শ শতকে এক প্রযুক্তিশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়, তবে তাকে 'সাফল্য'কে শুধু স্বল্পমেয়াদি ফলাফলের মাধ্যমে নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সঞ্চয়ের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করতে হবে।#

পার্সটুডে/এমএএআর/৬