চীন ও রাশিয়ার সাথে ভারতের সম্পর্ক বৃদ্ধি: ট্রাম্পকে মার্কিন কংগ্রেসের সতর্কবার্তা
https://parstoday.ir/bn/news/world-i152860-চীন_ও_রাশিয়ার_সাথে_ভারতের_সম্পর্ক_বৃদ্ধি_ট্রাম্পকে_মার্কিন_কংগ্রেসের_সতর্কবার্তা
পার্সটুডে: চীন ও রাশিয়ার সাথে ভারতের সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মার্কিন কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা সতর্ক করেছেন।
(last modified 2025-10-12T12:48:31+00:00 )
অক্টোবর ১১, ২০২৫ ১৫:০৪ Asia/Dhaka
  • চীন ও রাশিয়ার সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের উদ্বেগ
    চীন ও রাশিয়ার সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের উদ্বেগ

পার্সটুডে: চীন ও রাশিয়ার সাথে ভারতের সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মার্কিন কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা সতর্ক করেছেন।

পার্সটুডে জানিয়েছে, মার্কিন কংগ্রেসের কয়েকজন ডেমোক্র্যাট সদস্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠি লিখে আহ্বান জানিয়েছেন, তিনি যেন ভারতের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করেন এবং দিল্লির বিরুদ্ধে আরোপিত উচ্চ শুল্কের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করেন।

ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ডেমোক্র্যাট দলের সদস্য- ডেবোরা রস, রো খান্না, ব্র্যাড শেরম্যান, সিডনি কামালাগার-ডভ, রাজা কৃষ্ণমূর্তি এবং প্রমিলা জয়পাল। কোনো রিপাবলিকান সদস্য এতে স্বাক্ষর করেননি।

চিঠিতে ওই মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা সতর্ক করে লিখেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কবৃদ্ধির নীতি- বাণিজ্য, কর্মসংস্থান এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদারিত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং এর ফলে ভারত চীন ও রাশিয়ার দিকে আরও ঝুঁকতে পারে, যা এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য চীন ও রাশিয়ার পক্ষে পাল্টে দিতে পারে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে (যা কিছু ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে) মার্কিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান মিত্র দেশ দূরে সরে যাচ্ছে।

চিঠিতে ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে, “আপনার সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক দুর্বল করেছে এবং উভয় দেশের জন্য নেতিবাচক পরিণতি বয়ে এনেছে। আমরা আপনাকে অনুরোধ করছি দ্রুত পদক্ষেপ নিন এই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব পুনরুদ্ধারের জন্য।”

কংগ্রেসের আশঙ্কা, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে যে, ভারত ওয়াশিংটন থেকে দূরে সরে গিয়ে চীন ও রাশিয়ার দিকে ঝুঁকতে পারে— যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক অবস্থান এশিয়ায় দুর্বল হয়ে পড়বে।

কংগ্রেসের উদ্বেগের প্রধান কারণসমূহ ও তার প্রভাব

১. ভারতের বিরুদ্ধে উচ্চ শুল্ক আরোপ

ডেমোক্র্যাট সদস্যরা সতর্ক করেছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কবৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য সম্পর্ককে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সরবরাহ ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে এবং মার্কিন উৎপাদকদের ক্ষতির মুখে ফেলেছে।

২. কৌশলগত অংশীদারিত্বের দুর্বলতা

ভারত এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। কিন্তু ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতি ও বাণিজ্যিক চাপের কারণে নয়াদিল্লি বিকল্প অংশীদার খুঁজছে এবং চীন ও রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে।

৩. ভারতের জনমতের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া

ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মার্কিন পণ্যের বয়কটের আহ্বান বেড়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন বৃদ্ধি পেয়েছে।

৪. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের চীন–রাশিয়া ঘনিষ্ঠতা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ২০২০ সালের সীমান্ত সংঘাতের পরেও এই বৈঠকগুলোকে ভারত–চীন–রাশিয়া পুনরায় ঘনিষ্ঠ হওয়ার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

৫. যুক্তরাষ্ট্রবিহীন নতুন জোট গঠনের আশঙ্কা

পশ্চিমা বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, ট্রাম্পের নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যগত মিত্র দেশগুলো — যেমন ভারত, ফ্রান্স, জাপান ও কানাডা — নিজেদের মধ্যে স্বাধীন অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা জোট তৈরি করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্বকে দুর্বল করতে পারে।

৬. মার্কিন অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব

উচ্চ শুল্ক নীতি শুধু পররাষ্ট্রনীতিতেই নয়, অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেও ক্ষতি করছে। রপ্তানি কমছে, উৎপাদন খরচ বাড়ছে এবং চাকরির সুযোগ হ্রাস পাচ্ছে — যা নিয়ে কংগ্রেস উদ্বিগ্ন।

কংগ্রেসের গভীর ভূরাজনৈতিক উদ্বেগ

১. এশিয়ার ক্ষমতার ভারসাম্যের পরিবর্তন

ভারত যদি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়, তবে এশিয়ার ক্ষমতার ভারসাম্য যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে চলে যাবে। ভারত তার জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও ভূরাজনৈতিক অবস্থানের কারণে চীনের প্রভাব রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২. চীন-নিয়ন্ত্রণ কৌশলের দুর্বলতা

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম লক্ষ্য হলো চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব রোধ করা। কিন্তু ভারত যদি চীনের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ায় — বিশেষত প্রযুক্তি, জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে — তবে এই কৌশল ব্যর্থ হতে পারে।

৩. রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সামরিক সহযোগিতা

ভারত রাশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম অস্ত্র ক্রেতা। যৌথ সামরিক প্রকল্প যেমন ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র (BrahMos) নিয়ে সহযোগিতা যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্বিগ্ন করছে। এসব সহযোগিতা রাশিয়াকে সংবেদনশীল প্রযুক্তি ও আঞ্চলিক তথ্যের অ্যাক্সেস দিতে পারে।

৪. মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটগুলোর দুর্বলতা

যুক্তরাষ্ট্র “কোয়াড” (QUAD: যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া) ও “IPEF” (ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক)-এর মতো জোটের মাধ্যমে এশিয়ায় প্রভাব বজায় রাখতে চায়। কিন্তু ভারত যদি চীন ও রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে, তবে এই জোটগুলো কার্যত দুর্বল হয়ে পড়বে।

৫. পশ্চিমবিরোধী সংগঠনে ভারতের ভূমিকা

ভারত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO) ও ব্রিকস (BRICS)–এর মতো সংগঠনে অংশগ্রহণ বাড়িয়েছে, যেখানে চীন ও রাশিয়া নেতৃত্বে রয়েছে। এসব সংগঠন প্রায়ই পশ্চিমবিরোধী অবস্থান নেয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক প্রভাবকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

৬. রাশিয়ার জ্বালানির ওপর ভারতের নির্ভরতা বৃদ্ধি

ইউক্রেন যুদ্ধের পর ভারত সস্তা রাশিয়ার তেলের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। এতে ভারতের জ্বালানি নির্ভরতা রাশিয়ার ওপর বেড়েছে এবং পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জটিল হয়েছে।

৭. যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক বৈশ্বিক নিরাপত্তা কাঠামোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি হুমকি

যদি ভারত চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা গভীর করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক ব্যবস্থার স্থিতি বিপন্ন হবে। এতে নতুন এক “অ্যান্টি-আমেরিকান” ব্লক তৈরি হতে পারে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে ওয়াশিংটনের প্রভাব হ্রাস পেতে পারে।#

পার্সটুডে/এমএআর/১১