ইসরায়েলের প্রতি বিশ্বব্যাপী ঘৃণা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে গাজা যুদ্ধের প্রভাব
https://parstoday.ir/bn/news/world-i152956-ইসরায়েলের_প্রতি_বিশ্বব্যাপী_ঘৃণা_ও_সচেতনতা_বৃদ্ধিতে_গাজা_যুদ্ধের_প্রভাব
পার্সটুডে- গাজা যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা বিশ্বব্যাপী জনমনে ইসরায়েলের অবস্থানের উপর গুরুতর আঘাত করেছে।
(last modified 2025-10-14T04:08:08+00:00 )
অক্টোবর ১৩, ২০২৫ ১৬:৩৮ Asia/Dhaka
  • •	ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এবং ইসরায়েলি অপরাধের নিন্দায় মার্কিন তরুণদের বিক্ষোভ
    • ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এবং ইসরায়েলি অপরাধের নিন্দায় মার্কিন তরুণদের বিক্ষোভ

পার্সটুডে- গাজা যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা বিশ্বব্যাপী জনমনে ইসরায়েলের অবস্থানের উপর গুরুতর আঘাত করেছে।

পার্সটুডে অনুসারে, নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদপত্র এক প্রতিবেদনে লিখেছে: “মানব ক্ষয়ক্ষতি এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি, গাজা যুদ্ধ ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি, বিশেষ করে আমেরিকান জনগণের সাথে এর সম্পর্কের উপর গুরুতর আঘাত করেছে।” আমেরিকান সংবাদপত্র গাজায় গণহত্যার পর বিশ্বব্যাপী জনমত, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের অবস্থান বা ভাবমূর্তী পুনর্নির্মাণের সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে এবং এই বিষয়টিকে তেল আবিবের জন্য একটি বড় পরীক্ষা বলে মনে করেছে।

তেল আবিবের সাথে আমেরিকানদের সংহতির অনুভূতি কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে, এবং দুই বছরের গাজা যুদ্ধের সমাপ্তির কাছাকাছি আসার সাথে সাথে, নতুন জরিপগুলি দেখায় যে ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকান জনমত ক্রমশ নেতিবাচক হয়ে উঠছে, এই সরকার আমেরিকান জনগণের একটি বৃহৎ অংশের সমর্থন হারাচ্ছে। ১৯৯৮ সালের পর জরিপের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো আমেরিকান ভোটারদের একটি বড় অংশ ইসরায়েলের প্রতি নয় বরং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।

এমনকি আমেরিকান ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যেও, যারা সর্বদা ইসরায়েলের প্রধান সমর্থক, তারাও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার সমালোচনা করছে। সাম্প্রতিক ওয়াশিংটন পোস্টের জরিপ অনুসারে, বেশিরভাগ আমেরিকান ইহুদি বিশ্বাস করেন যে গাজা যুদ্ধে ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে এবং ১০ জনের মধ্যে চারজন বিশ্বাস করেন যে ইসরায়েল গণহত্যা চালিয়েছে। ইহুদিবাদী থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলিও স্বীকার করেছে যে গাজায় অব্যাহত অপরাধ ইসরায়েলের নিরাপত্তা এমনকি পশ্চিমা সভ্যতার ভিত্তিকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের মধ্যে কৌশলগত জোটও গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই পরিবর্তন পশ্চিম এশিয়ায় ভবিষ্যতের মার্কিন নীতিগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে।

মনোভাবের এই পরিবর্তনের ফলে কংগ্রেসে প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধিরাও ইসরায়েলকে মার্কিন সামরিক সহায়তার উপর বিধিনিষেধ আরোপের চেষ্টা করছেন। যদিও রিপাবলিকানরা সর্বদা তাদের দলকে ইসরায়েলপন্থী এবং ডেমোক্র্যাটদের ইসরায়েল-বিরোধী হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছেন, আমেরিকায় প্রজন্মগত পরিবর্তনের ফলে অনেক তরুণ ইভাঞ্জেলিক খ্রিস্টান (ইভাঞ্জেলিক্যালিস্ট) তাদের পিতামাতার বিপরীতে ইসরায়েলকে একটি নিপীড়ক শক্তি হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনিপন্থী কর্মীদের উত্থানের একই সাথে তারা গ্রেপ্তার, আইনি ব্যবস্থা এবং ক্রমবর্ধমান হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের জন্য বাকস্বাধীনতা হরণ হিসাবে দেখা হচ্ছ।

গাজা যুদ্ধ আমেরিকা ও বিশ্বব্যাপী জনমনে ইসরায়েলের অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রেক্ষাপটে, নিম্নলিখিত বিষয়গুলি উল্লেখযোগ্য:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনসমর্থন হ্রাস

- সাম্প্রতিক জরিপগুলি দেখায় যে ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকান জনগণের সংহতি কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। গাজায় গণহত্যার ফলে অনেক আমেরিকান, বিশেষ করে তরুণ এবং সংখ্যালঘুরা ইসরায়েলের নীতিগুলিকে অমানবিক এবং বর্ণবাদী বলে মনে করছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলিও মনোভাবের এই পরিবর্তনে কথা উল্লেখ করে এটিকে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের জন্য একটি বড় পরীক্ষা বলে অভিহিত করেছে।

ইসরায়েলের প্রতি ইউরোপীয়দের সমর্থন তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে

- গাজায় ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপ, বিশেষ করে শিশু এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হত্যাযজ্ঞের কারণে ইউরোপীয় জনমনে ইসরায়েলের বৈধতা সর্বনিম্নে। এমনকি ইউরোপে ইসরায়েলের ঐতিহ্যবাহী মিত্ররাও এখন ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে ইসরায়েলকে "কৌশলগত বোঝা" হিসাবে দেখছে। ইউরোপীয় দেশগুলিতে জনমত ক্রমশ ইসরায়েল থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে এবং এই প্রবণতা ইউরোপে তেল আবিবের কূটনৈতিক এবং নৈতিক বৈধতার পতনের দিকে নিয়ে গেছে। ইউরোপীয়দের তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় এবং সামাজিক নেটওয়ার্কগুলিতে, ইসরায়েলি নীতি সম্পর্কে আরও সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।

ইসরায়েল সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী ধারণায় পরিবর্তন

- বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশে ফিলিস্তিনের সমর্থনে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জনমতের চাপে অনেক সরকার ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করতে বাধ্য হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যা বলে মনে করেছে।

মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা

- গাজা যুদ্ধের শিকারদের হৃদয়বিদারক ছবি এবং ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ বিশ্বব্যাপী আবেগকে বাড়িয়ে দিয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিও বহুগুণে বাড়িয়েছে। স্বাধীন মিডিয়া এবং নাগরিক সাংবাদিকরা, পশ্চিমা সরকারী মিডিয়ার বিপরীতে গিয়ে, যুদ্ধের ভয়াবহ চিত্র বিশ্বে উপস্থাপন করেছেন। ফলে ইসরায়েল আরো বেকায়দায় পড়েছে।

উপসংহার

ইসরায়েলের প্রতি ইউরোপীয় জনমনের সমর্থন হ্রাস কেবল একটি মিডিয়া বা মানসিক পরিবর্তন নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একটি কৌশলগত পরিবর্তনের  সূচনা করেছে। এই পরিবর্তন পশ্চিমা বিশ্বের সাথে ইসরায়েলের মিথস্ক্রিয়ার ভবিষ্যতের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, গাজা যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনি গণহত্যা কেবল একটি বড় মানবিক সংকট তৈরি করেনি, বরং বিশ্বব্যাপী জনমতের মধ্যে ইসরায়েলের অবস্থানকেও মারাত্মকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে। #

পার্সটুডে/এমআরএইচ/১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।