ইয়েমেন থেকে সুদান;
যুদ্ধবাজদের সমর্থক এবং জাতিগুলোর শত্রুতে পরিণত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত
-
• সংকটে জর্জরিত সুদান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভূমিকা
পার্সটুডে - গৃহযুদ্ধে জর্জরিত সুদান সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিযোগিতা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সুদান এমন একটি দেশ যেখানে স্বর্ণ, অস্ত্রের জোর এবং অপরাধ একে অপরের সাথে জড়িত।
লোহিত সাগর এবং মধ্য আফ্রিকার সাথে সংযুক্তকারী সুদান মূল্যবান সম্পদ, বিশেষ করে সোনায় সমৃদ্ধ একটি কৌশলগত সংযোগস্থলে অবস্থিত। এই সুবিধা সুদানের জন্য একটি অভিশাপ হয়ে উঠেছে এবং বিশ্বব্যাপী স্বার্থান্বেষী মহল তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য এই সংকটাপন্ন দেশে যুদ্ধের আগুন উসকে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে, সম্প্রতি অনেক অপরাধের সহযোগী হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাম বারবার উঠে এসেছে।
পার্সটুডে অনুসারে, মেরসাদ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক 'আমিরাতের কূটনৈতিক সংকট' শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলেছে: সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস আজ্ঞাবহ যুদ্ধবাজদের এর উপর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অর্থাৎ, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এড়িয়ে গিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি বাধ্য এবং জনগণের কাছে জবাবদিহিতাবিহীন সামরিক শক্তির উপর নির্ভরতা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, সুদানে ঘটে যাওয়া মানবিক বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে, দেশটির জনগণের দুর্দশা সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি লক্ষ্য করেছে। তারা বলেছে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা মধ্যস্থতা প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ থেকে শুরু করে আফ্রিকার শিং এবং পারস্য উপসাগরের দেশগুলি - তুরস্ক এবং রাশিয়াসহ - সকলেরই সুদানে স্বার্থ রয়েছে। সুদানের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে, মিশর এবং সৌদি আরব, লোহিত সাগরের তীরে স্থিতিশীলতাকে তাদের জাতীয় নিরাপত্তা সমস্যা বলে মনে করে এবং এ কারণে তারা সুদানের সশস্ত্র বাহিনী (SAF) কে সমর্থন দিচ্ছে।
এই থিঙ্ক ট্যাঙ্কটি তার প্রবন্ধের বিভিন্ন অংশে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভণ্ডামিপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছে, যে দেশটির বিরুদ্ধে সুদানে ট্র্যাজেডিতে সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। ২০১৫ সালে ইয়েমেন যুদ্ধের সময়, সংযুক্ত আরব আমিরাত তার সামরিক অভিযানকে সমর্থন করার জন্য এবং বহিরাগত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলিকে শক্তিশালী করার জন্য র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের ইউনিট মোতায়েন করেছিল। এই কারণে, এবং সুদানের কৌশলগত অবস্থান এবং সোনার সম্পদে প্রবেশাধিকার পেতে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তার অন্যান্য অনেক মিত্রদের থেকে ভিন্ন। আমিরাত তার অনুগত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সমর্থন করেছে; যদিও সোনার সম্পদে প্রবেশাধিকারের বিনিময়ে সন্ত্রাসীদে সহায়তা প্রদানের অভিযোগ অস্বীকার করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে, প্রতিবেদনগুলি ইঙ্গিত দেয় যে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা আমিরাতের কোম্পানিগুলোর দ্বারা নিয়োগের পরে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের সাথে লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে।
সুদানের যুদ্ধ কেবল একটি মানবিক বিপর্যয়ই নয় - অনুমান করা হচ্ছে যে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সংঘাতে ১৫০,০০০ এরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং আনুমানিক ১ কোটি ২০ লক্ষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ১ কোটি ৬০ লক্ষ শিশুসহ ৩ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার এই সংকটপীড়িত দেশটির দুর্ভিক্ষ, বন্যা, কলেরা প্রাদুর্ভাব এবং যুদ্ধের কারণে মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। তবে, এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলির আন্তর্জাতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে, যা তাদের নিজস্ব স্বার্থের জন্য সুদানের নিপীড়িত ও অসহায় জনগণের দুর্ভোগ ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে। #
পার্সটুডে/এমআরএই/৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।