কেন নয়াদিল্লি তেল আবিবের প্রতি ঘনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i153728-কেন_নয়াদিল্লি_তেল_আবিবের_প্রতি_ঘনিষ্ঠ_দৃষ্টিভঙ্গি_পোষণ_করে
পার্সটুডে-সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত এবং ইহুদিবাদী ইসরাইল পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছে।
(last modified 2025-11-28T10:09:50+00:00 )
নভেম্বর ০৫, ২০২৫ ২২:২৪ Asia/Dhaka
  •  ভারত ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
    ভারত ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পার্সটুডে-সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত এবং ইহুদিবাদী ইসরাইল পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছে।

পার্সটুডে আরও জানায়, এই অঞ্চলের আঞ্চলিক ও প্রতিবেশি দেশগুলির সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি সরে এসে, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইহুদিবাদী ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার ইহুদিবাদী সমপক্ষ বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন এবং তেল আবিবের সাথে ব্যাপক সামরিক ও বাণিজ্য চুক্তি স্থাপন করেছেন। ভারতীয় এবং ইহুদিবাদী কর্মকর্তাদের মধ্যেও অসংখ্য বৈঠক হয়েছে।

ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার তার ভারতীয় সমপক্ষ সুব্রমনিয়ম জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সাথে ৩ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে সাক্ষাৎ করেন। আলোচনায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং গাজা শান্তি পরিকল্পনার ওপর জোর দেওয়া হয় এবং উভয় পক্ষই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তথাকথিত "শূন্য সহনশীলতা" নীতির ওপর জোর দেয়। সার ভারতকে "বিশ্বব্যাপী পরাশক্তি" হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, ইসরাইল একটি "দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত অংশীদারিত্ব" চায় যা ভাগ করা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং পারস্পরিক নিরাপত্তা লক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI) অনুসারে, ভারত ইসরাইলের বৃহত্তম অস্ত্র ক্রেতা, ইসরাইলের অস্ত্র বিক্রির ৪৩ শতাংশই ভারত কেনে।

সামগ্রিকভাবে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে ভারতের নীতি অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত ছিল পরস্পরবিরোধী, দখলদারিত্বের শিকার ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি দিল্লির সমর্থন ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রতি সমর্থনে রূপান্তরিত হয়েছে, এমন একটি সমর্থন যা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এমনকি একটি সামরিক মাত্রাও অন্তর্ভুক্ত করে। এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হয়েছিল এবং কেন?

১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভারত ফিলিস্তিনের বিভাজনের বিরুদ্ধে ভোট দেয় এবং ১৯৭৪ সালে ফিলিস্তিনি জনগণের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম অ-আরব দেশ ছিল, ঠিক যেমন ১৯৮৮ সালে ভারত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশগুলোর মধ্যে একটি ছিল। যদিও ভারত ১৯৫০ সালে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল কিন্তু ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে নি।

৭ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে ফিলিস্তিন প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস আল-আকসা তুফান অভিযান শুরু করার সাথে সাথেই ভারত সরকার তাৎক্ষণিকভাবে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে ব্যাপক রাজনৈতিক সমর্থন দেয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথম বিশ্বনেতা যিনি আল-আকসা তুফান অভিযানের নিন্দা করেছিলেন এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রমনিয়ম জয়শঙ্কর একই অবস্থান নিয়েছিলেন। তারা দাবি করেছিলেন যে "মিশর যদি চরমপন্থার বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ায়, তাহলে তাদেরও একই পরিণতি হতে পারে।"

ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, ভারত জাতিসংঘে গাজা উপত্যকায় মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

এই সহায়ক দৃষ্টিভঙ্গি চরম হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের অবস্থানকে প্রভাবিত করেছিল, তারা গাজা উপত্যকায় কী ঘটছে সে সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য একটি প্রচারণা শুরু করেছিল, ইহুদিবাদীদের পক্ষে। এই অবস্থানটি নেওয়া হয়েছিল ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিকূল বক্তৃতা প্রচার এবং প্রসারের জন্য। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দেশের বিভিন্ন অংশে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সমর্থনে বিক্ষোভের অনুমতিও দিয়েছিল, একইসাথে ফিলিস্তিনের সমর্থকদের বিক্ষোভ দমন করেছিল।

ফিলিস্তিনের প্রতি ভারতের নীতিতে বড় পরিবর্তনের কারণগুলো বোঝার জন্য, বেশিরভাগ বিশ্লেষক দুটি প্রধান কারণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে:

১- হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান

সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও যুদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগের প্রধান "অশোক সুভিন" বলেছেন, মোদির প্রধানমন্ত্রীত্বের পর থেকে হিন্দু জাতীয়তাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যদিও গবেষক বিশ্বাস করেন যে বেশিরভাগ ভারতীয় এখনও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতার সংগ্রামকে সমর্থন করে। ভারতীয় গণমাধ্যম মূলত হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার প্রভাবিত এবং তাই ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে প্রতিকূল বক্তব্য ও প্রচারণার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।

২- ইসলামের সাথে শত্রুতা

অশোক সোভিন এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন যে মোদী সরকার বিশ্বাস করে, যতক্ষণ গাজায় যুদ্ধ চলবে ততক্ষণ ভারতীয় গণমাধ্যম হামাসের নিন্দা করবে। যদিও এই পদ্ধতি ভারতীয় সমাজের মধ্যে ইসলামোফোবিয়া বৃদ্ধির একটি বড় সুযোগ। তিনি বিশ্বাস করেন যে ইহুদিবাদ ও হিন্দুধর্মের মধ্যে অনেক সাধারণ সংযোগ রয়েছে এবং উভয় মতাদর্শই সম্প্রসারণবাদ এবং অন্যদের বর্জনের ক্ষেত্রে সাধারণ লক্ষ্য ভাগ করে নেয়। ইহুদিবাদ এবং হিন্দুধর্ম উভয়ই দাবি করে ভারত এবং অধিকৃত ফিলিস্তিন মূলত দুটি হিন্দু এবং ইহুদি সভ্যতা ছিল কিন্তু তথাকথিত বহিরাগতদের দ্বারা দূষিত ছিল, বিশেষ করে মুসলমানদের দ্বারা এবং এখন উভয় পক্ষই হিন্দু ও ইহুদি রাষ্ট্রের আগের গৌরব পুনরুদ্ধার করতে চাইছে।

এ প্রসঙ্গে, ফরাসি সংবাদপত্র লে মন্ডে উল্লেখ করেছে যে কিছু হিন্দু চরমপন্থী ইহুদিবাদীদের সাথে অস্ত্র হাতে নেওয়ার জন্য তাদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে এবং এ প্রসঙ্গে ভারতে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত নেভার গিলন গর্ব করে বলেছেন, তিনি হিন্দু স্বেচ্ছাসেবকদের একটি বাহিনী গঠন করতে পারেন। সুতরাং অর্থনীতি এবং জনপ্রিয়তাবাদের পাশাপাশি ধর্মীয় ও জাতিগতভাবে এমনকি 'অভিন্ন শত্রু'র মাপকাঠিতে ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ভারত তার নীতি পরিবর্তন করতে বাধ্য হওয়ার পেছনের কারণগুলোর একটি। নয়াদিল্লি তাই দীর্ঘদিন ধরেই ইসরাইলকে সমর্থন করে আসছে।#

পার্সটুডে/এনএম/৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।