যুক্তরাষ্ট্রে জেফ্রি এপস্টেইনের মামলার নথি সেন্সর করার উদ্দেশ্য কী?
-
ডোনাল্ড ট্রাম্প
পার্সটুডে : যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জেফ্রি এপস্টেইনের দুর্নীতি নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত মামলার নথিগুলো ব্যাপকভাবে সেন্সর করায় মামলাটিকে ঘিরে নতুন করে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে এবং দেশটিতে তথ্যের স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
পার্সটুডে : যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ যৌন নিপীড়ক জেফ্রি এপস্টেইনের মামলার নথিগুলো ব্যাপকভাবে সেন্সর করায় মামলাটিকে ঘিরে নতুন করে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে এবং দেশটিতে তথ্যের স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
মার্কিন বিচার বিভাগ গত ১৯ ডিসেম্বর যৌন অপরাধে দণ্ডিত ধনকুবের জেফ্রি এপস্টেইনের তদন্ত-সংক্রান্ত নথির প্রথম ধাপ প্রকাশ করে। এটি “এপস্টেইন ফাইলস ট্রান্সপারেন্সি অ্যাক্ট”-এর ভিত্তিতে করা হয়, যা ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে কংগ্রেসে পাস হয়। এই আইন মার্কিন বিচার বিভাগকে বাধ্য করেছিল যে, সমস্ত অশ্রেণীবদ্ধ নথি, যার মধ্যে এফবিআই-এর তদন্ত সামগ্রী, আদালতের নথি এবং সংশ্লিষ্ট যোগাযোগ- ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে জনসাধারণের জন্য এবং অনুসন্ধানযোগ্য আকারে প্রকাশ করতে হবে।
তবে প্রাথমিক প্রকাশনায় ১৩ হাজারের বেশি ফাইল, হাজার হাজার পৃষ্ঠার নথি ও শতাধিক ছবি থাকলেও সেগুলোর বড় অংশই মারাত্মকভাবে সেন্সর করা হয়। উপ-মহা আইনজীবী টড ব্লাঞ্চ জানান, আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও কয়েক লাখ নথি প্রকাশ করা হবে, যা আইন নির্ধারিত সময়সীমার সরাসরি লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রকাশিত নথিতে বিল ক্লিনটন (গরম পানির টব বা সুইমিং পুলের পাশে—মুখ সেন্সর করা), মাইকেল জ্যাকসন, রিচার্ড ব্র্যানসন, ক্রিস টাকার, মিক জ্যাগারসহ বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে এপস্টেইনের নতুন ছবি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এছাড়াও ২০০৫ সালের পাম বিচ পুলিশের রিপোর্ট, ফ্লাইট কার্ড এবং কিছু আদালতের নথি প্রকাশ করা হয়। তবে নতুন কোনো “গ্রাহক তালিকা” বা অজানা সহযোগীদের বিষয়ে বড় কোনো প্রকাশ হয়নি এবং অনেক নথিই আগে থেকেই জনসমক্ষে ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম নতুন নথিগুলোতে খুব কমই উল্লেখ করা হয়েছে এবং কিছু ফাইল- বিশেষ করে ট্রাম্প-সম্পর্কিত ছবিগুলো- প্রাথমিক প্রকাশের পর সরিয়ে ফেলা হয়। এতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে তথ্য গোপনের অভিযোগ আরও জোরালো হয়।
ব্যাপক সেন্সরই সমালোচনার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ দাবি করেছে, শনাক্ত হওয়া ১২০০ জনেরও বেশি ভুক্তভোগীর গোপনীয়তা রক্ষার জন্য নথির বড় অংশ কালো করে দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড জুরির একটি ১১৯ পৃষ্ঠার নথি পুরোপুরি কালো করা হয়েছে এবং ১০০ পৃষ্ঠারও বেশি বহু নথি সম্পূর্ণভাবে গোপন রাখা হয়েছে। ছবিতে থাকা ব্যক্তিদের মুখ (এমনকি যারা ভুক্তভোগী নন), নাম, সংবেদনশীল বিবরণ এমনকি সম্পূর্ণ পৃষ্ঠাও সেন্সর করা হয়েছে।
সমালোচকরা, যার মধ্যে ডেমোক্র্যাট রু খান্না এবং রিপাবলিকান থমাস ম্যাসি (এপস্টিন ফাইলস ট্রান্সপারেন্সি আইনের মূল লেখক) বলেছেন, এই সেন্সরশিপটি অত্যধিক এবং আইনে "রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা"-এর ভিত্তিতে তথ্য মুছে ফেলার নিষেধাজ্ঞার পরিপন্থী।
কিছু নথি অপসারণ বা অসম্পূর্ণভাবে প্রকাশ পাওয়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের রক্ষার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের একজন মারিনা লাসের্দা এই পদক্ষেপকে “বেঁচে থাকা ভুক্তভোগীদের মুখে চপেটাঘাত” বলে আখ্যায়িত করে বলেন, এই সেন্সর ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত করছে।
এই অসম্পূর্ণ প্রকাশনার রাজনৈতিক, সামাজিক ও আইনি প্রভাব বহুমাত্রিক। রাজনৈতিকভাবে, প্রতিনিধি খানা ও ম্যাসি অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনার হুমকি দিয়েছেন এবং “কংগ্রেস অবমাননা”র মতো বিকল্প ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ করেছেন। এই দ্বিদলীয় হুমকি রিপাবলিকান পার্টির ভেতরের বিভাজনকে তুলে ধরে, কারণ ট্রাম্প এপস্টেইন মামলায় পূর্ণ স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি দিলেও এই অসম্পূর্ণ প্রকাশ এমনকি তাঁর সমর্থকদেরও ক্ষুব্ধ করেছে।
সামাজিকভাবে, ভুক্তভোগী ও সামাজিক কর্মীদের ক্ষোভ বেড়েছে এবং বিচারিক প্রতিষ্ঠানের ওপর জনআস্থা কমে যাওয়ায় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের গোপন রক্ষার বিষয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আরও শক্তিশালী হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত, এই ঘটনা নতুন কংগ্রেসীয় তদন্ত, ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে মামলা এবং ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারে।
এপস্টেইন দুর্নীতি মামলার নথির অসম্পূর্ণ প্রকাশ শুধু ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার বিলম্বিত করেনি, বরং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আস্থার সংকটও গভীর করেছে। এই মামলার নথি যদি সম্পূর্ণ ও সেন্সরবিহীনভাবে প্রকাশ না করা হয়, তবে এপস্টেইনের জটিল দুর্নীতি নেটওয়ার্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ভূমিকা দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক ও জনসন্দেহের উৎস হয়েই থাকবে।#
পার্সটুডে/এমএআর/২১