কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো আর নেই
-
কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো
কিউবার বিপ্লবী নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো মৃত্যুবরণ করেছেন। কিউবার রাজধানী হাভানায় স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত ১০টা ২৯ মিনিটে ৯০ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও ফিদেল কাস্ত্রোর ভাই রাউল কাস্ত্রো দেশচির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এ ঘোষণা দেন।
কিউবা বিপ্লবের প্রধান নেতা ফিদেল কাস্ত্রো ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কিউবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এরপর ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছোট ভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত কিউবার অব স্টেট ও কাউন্সিল অব মিনিস্টার্সের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ওই বছর রাউল কাস্ত্রোর কাছে দায়িত্ব ছেড়ে দেন কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক এই প্রধান।

১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট, কিউবার পূর্বাঞ্চলে বিরান জেলায় স্পেনীয় বংশোদ্ভূত এক অভিবাসী পরিবারে ফিদেল কাস্ত্রোর জন্য। তার পুরো নাম ফিদেল আলেজান্দ্রো কাস্ত্রো রুজ।
একটি জেসুইট বোর্ডিং স্কুল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন তিনি। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধূলায়ও ফিদেল ছিলেন তুখোড়। ১৯৪৪ সালে কিউবার সেরা অলরাউন্ডার স্কুল অ্যাথলেট পুরস্কার পান। আইনের স্নাতক হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করেন।
ডিগ্রি নেয়ার পরপরই হাভানায় একজন আইনজীবী হিসেবে পেশা জীবন শুরু করেন কাস্ত্রো। দরিদ্র মক্কেলদের পক্ষে লড়ে অল্প সময়ের মধ্যেই সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেন এবং শিগগিরই সক্রিয় দলীয় রাজনীতিতে যোগ দেন।

১৯৪৭ সালে নবগঠিত কিউবান পিপলস পার্টিতে যোগ দেন ফিদেল। মার্কিন ব্যবসায়ী শ্রেণী ও সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অবিচার, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও নিম্ন মজুরীর অভিযোগ নিয়ে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে তুখোড় বক্তা ফিদেল দলের তরুণ সদস্যদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
১৯৫২ সালে দলীয় কংগ্রেসের সদস্য প্রার্থী হন তিনি। নির্বাচনে পিপলস পার্টির বিজয়ের সম্ভাবনা থাকলেও জাতীয় নির্বাচনের আগে জেনারেল বাতিস্তা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কিউবার ক্ষমতা দখল করলে নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়। ১৯৫৩ সালে মনকাডা ব্যারাকে একটি ব্যর্থ আক্রমণ করেন, এবং তারপর কারারুদ্ধ হন ও পরে ছাড়া পান। এরপর তিনি বাতিস্তার সরকার উৎখাতের জন্য সংগঠিত হওয়ার জন্য মেক্সিকো যান। ফিরে এসে ১৯৫৬ সালের ডিসেম্বরে সরকার উৎখাতে নামেন।

১৯৫৮ সালের মাঝামাঝি বাতিস্তার প্রায় ১,০০০ সেনা গেরিলাদের হাতে প্রাণ হারালে বিমান, বোমা, জাহাজ ও ট্যাংক পাঠিয়ে গেরিলাদের হঠানোর চেষ্টা চালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু নাপাম বোমার মতো সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও গেরিলাদের সঙ্গে বাতিস্তা পেরে না ওঠায় তাকে নির্বাচন দেয়ার পরামর্শ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৫৮ সালের মার্চে বাতিস্তা নির্বাচন দিলেও জনগণ সে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। ৭৫ ভাগ থেকে শুরু করে কোথাও কোথাও ৯৮ ভাগ মানুষই ভোটকেন্দ্রেই যায়নি। ফিদেলের যোদ্ধারা চারদিক থেকে রাজধানী হাভানাকে ঘিরে ধরতে শুরু করলে ১৯৫৯ সালের পহেলা জানুয়ারি নববর্ষের দিনে কিউবা ছেড়ে পালান জেনারেল বাতিস্তা। এর কিছুদিন পরই পর কাস্ত্রো কিউবার প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৬৫ সালে তিনি কিউবা কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হন। ১৯৭৬ সালে তিনি রাষ্ট্র ও মন্ত্রী পরিষদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন।
চলতি বছরের আগস্ট মাসে কিউবার জনগণ কাস্ত্রোর ৯০তম জন্মদিন উদযাপন করে। সেখানে এক অনুষ্ঠানে কাস্ত্রো তার মৃত্যুর দিন ঘনিয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেন: ’’আমি যে ৯০ বছরে পা দিতে পারব তা স্বপ্নেও ভাবিনি।‘’
এ বছরে এপ্রিল মাসে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির সপ্তম কংগ্রেসে ভাষণ দেন বর্ষীয়ান এই নেতা। এ সময় কাস্ত্রো বলেছিলেন, তিনি হয়ত শিগগিরই মারা যাবেন। কিন্তু বিপ্লব নিয়ে তাঁর পরিকল্পনাগুলো বেঁচে থাকবে।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৬