সাদ হারিরিকে নিয়ে জার্মানির সঙ্গে সৌদির উত্তেজনা সৃষ্টির রহস্য
(last modified Sat, 18 Nov 2017 13:11:58 GMT )
নভেম্বর ১৮, ২০১৭ ১৯:১১ Asia/Dhaka

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরিকে নিয়ে জার্মানি ও সৌদি আরবের মধ্যে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং টানাপড়েন।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল গতকাল (শুক্রবার) বার্লিন সফররত লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, সৌদি আরবে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী আটক রয়েছেন বলেই হয়ত দেশটি ত্যাগ করতে পারছেন না। তিনি হারিরির বিষয়ে সৌদি সরকারের আচরণকে অস্বাভাবিক বলেও মন্তব্য করেন। হারিরি অবিলম্বে লেবাননে ফিরে যাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন গ্যাব্রিয়েল।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরব আজ শনিবার বার্লিনে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতকে সাময়িকভাবে রিয়াদে ফিরিয়ে এনেছে। রিয়াদে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতের কাছে একটি প্রতিবাদ-লিপি দেয়ার কথাও ভাবছে রাজতান্ত্রিক সৌদি কর্তৃপক্ষের পররাষ্ট্র বিভাগ।

এদিকে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ ত্যাগ করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সৌদি আরব সফরে গিয়ে আকস্মিকভাবে নিজের পদত্যাগের কথা ঘোষণা করার দুই সপ্তাহ পর তিনি রাজতান্ত্রিক দেশটি ত্যাগ করলেন। হারিরি এরইমধ্যে ফ্রান্সে পৌঁছে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাকরনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে খবর এসেছে।

বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকরা বলছেন লেবাননের ঘরোয়া বিষয়ে নাক-গলানোর কাজ জোরদারের মাধ্যমে দেশটির জনপ্রিয় ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর ওপর আঘাত হানার জন্যই সৌদি সরকার হারিরিকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। 

আন্তর্জাতিক বিষয়ের পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ এটাও বলছেন, সৌদি সরকার কাতারের সঙ্গে যে আচরণ করছে লেবাননের সঙ্গে সেই একই আচরণ করতে যাচ্ছে। আর এর উদ্দেশ্য হল লেবাননের ওপর সৌদি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। রিয়াদ মধ্যপ্রাচ্যের ছোট ছোট দেশগুলোকে তার আজ্ঞাবহ করতে চায়। কাতার, সিরিয়া, ইরাক ও ইরানসহ এ অঞ্চলের অনেক দেশই সৌদি সরকারের আধিপত্যবাদী ও হস্তক্ষেপকামী নীতির তীব্র সমালোচনা করে আসছে। 

কয়েক মাস আগে সৌদি আরবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর এবং সেই সফরে শত শত বিলিয়ন ডলারের মার্কিন অস্ত্র কেনার চুক্তি স্বাক্ষর আর তরবারি নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে সৌদি রাজা ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের নাচের ঘটনার পর থেকে সৌদি পররাষ্ট্রনীতি ক্রমেই বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। কারণ এর পরই ঘটে কাতার অবরোধের ঘটনা এবং সম্প্রতি সৌদি রাজ-পরিবারের ভেতরেই শুরু হয়েছে শুদ্ধি-অভিযান। সৌদি আরবের ভেতরে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে ক্রমেই বিশ্বজনমতের চাপ বাড়ছিল।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল

 

এ অবস্থায় সৌদি সরকার চাচ্ছে এসব ঘটনার দিক থেকে সৌদি ও বিশ্ববাসীর দৃষ্টিকে অন্যদিকে ব্যস্ত রাখতে যাতে সাম্প্রতিক সময়ে দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইল ও মার্কিন সরকারের সঙ্গে রিয়াদের মাত্রাতিরিক্ত মাখামাখিকেও আড়াল করা যায়।  

সাম্প্রতিক সময়ে ইয়েমেনে সৌদি গণহত্যা ও শিশুহত্যা ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে  ওয়াহাবি মতবাদের বিস্তার এবং তাকফিরি-ওয়াহাবি সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে রাশিয়া ও ইউরোপসহ নানা মহলের নিন্দা ও প্রতিবাদ ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। অথচ জঙ্গলের আইনে বিশ্বাসী সৌদি রাজতান্ত্রিক সরকার নিজেকে মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন বা রীতি-নীতির  ঘোর সমর্থক হিসেবে তুলে ধরতে চায়। 

যাই হোক সাদ হারিরি প্যারিসে আসলে সৌদি আরবে বসে তার পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার রহস্য এবং ফ্রান্স ও সৌদির লেনদেনসহ নেপথ্যের অনেক তথ্যই হয়ত বেরিয়ে আসবে। আর তখন বিশ্ব-অঙ্গনে সৌদি বিরোধী ক্রমবর্ধমান প্রতিবাদ আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে। আর তাই সম্ভাব্য সেই বেসামাল অবস্থা আড়ালের জন্যই সৌদি সরকার জার্মানির সঙ্গে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু করে থাকতে পারে।

কিন্তু জার্মানির সৌদি বিরোধী অবস্থান এবং লেবাননের সরকারে হিজবুল্লাহর অব্যাহত অবস্থানের প্রতি রাশিয়ার সমর্থন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রিয়াদের জন্য আরও একটি ব্যর্থতা হয়ে দেখা দিয়েছে। ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে সৌদি ব্যর্থতার পর এই নতুন ব্যর্থতা  সৌদি সরকারকে এক ব্যর্থ হঠকারী সরকার হিসেবেই বিশ্ব অঙ্গনে কলঙ্কিত করল। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৮
 

ট্যাগ