ইসলামের শিক্ষাগুলো সত্যিই খুব সুন্দর ও আকর্ষণীয়: মার্কিন নওমুসলিম জামিলা
https://parstoday.ir/bn/news/world-i67457-ইসলামের_শিক্ষাগুলো_সত্যিই_খুব_সুন্দর_ও_আকর্ষণীয়_মার্কিন_নওমুসলিম_জামিলা
নওমুসলিমদের আত্মকথা অনুষ্ঠানের এই পর্বে মার্কিন নওমুসলিম নারী  'সুজান  উবরি'র মুসলমান হওয়ার কাহিনী এবং ইসলাম সম্পর্কে তাঁর কিছু বক্তব্য ও চিন্তাধারা তুলে ধরা হলো:
(last modified 2025-09-26T18:07:30+00:00 )
জানুয়ারি ১৯, ২০১৯ ১৭:০৪ Asia/Dhaka
  • ইসলামের শিক্ষাগুলো সত্যিই খুব সুন্দর ও আকর্ষণীয়: মার্কিন নওমুসলিম জামিলা

নওমুসলিমদের আত্মকথা অনুষ্ঠানের এই পর্বে মার্কিন নওমুসলিম নারী  'সুজান  উবরি'র মুসলমান হওয়ার কাহিনী এবং ইসলাম সম্পর্কে তাঁর কিছু বক্তব্য ও চিন্তাধারা তুলে ধরা হলো:

মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সত্য-সন্ধানী। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সত্য ও বাস্তবতাকে উপলব্ধি প্রকৃত মানুষের প্রধান সাধনা। এর মাধ্যমে সে জানতে চায় সৃষ্টির লক্ষ্য যাতে পূর্ণতা ও সৌভাগ্য অর্জন করা সম্ভব হয়। মার্কিন নওমুসলিম নারী 'সুজান উবরি' এই শ্রেণীরই মানুষ।

মিসেস সুজানের জন্ম হয়েছিল এক ক্যাথলিক ধর্মপ্রাণ পরিবারে। তার বাবার ছিল পড়াশোনার ব্যাপক অভ্যাস। তাই খ্রিস্ট ধর্ম সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে এই ধর্মে ঘটেছে ব্যাপক বিকৃতি।  সুজান এ প্রসঙ্গে বলেছেন: 'আমার বাবা ছিলেন ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রির অধিকারী। তিনি গির্জার প্রচারক হিসেবে বিবেচিত হতেন। তার বিশ্বাস জনগণের কাছে যে বাইবেল রয়েছে ভ্যাটিক্যানের বাইবেলের সঙ্গে রয়েছে তার পার্থক্য। তিনি ভ্যাটিক্যানের বাইবেল পড়েছিলেন এবং বলতেন যে, এখানকার বাইবেলে 'আহমাদ'কে সর্বশেষ নবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।'

সে সময় বাবার কথাগুলো খুব একটা বুঝতাম না। কিন্তু গির্জায় তার কিছু বক্তব্যের কারণে তিনি সরকারের দিক থেকে চাপের শিকার হন এবং কয়েকবার তাকে কারাগারেও যেতে হয়েছে।

প্রাচীন বাইবেলে সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ বা আহমাদ (সা.)’র আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে- সুজানের বাবার এই বক্তব্যের সুবাদে সুজান এ বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন। আর এই গবেষণা করতে গিয়ে তিনি ইসলামের সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: 'আমি অতীতেও কোনো কোনো স্থানে ইসলামের নাম শুনেছিলাম। আমেরিকায় এই ধর্মকে সহিংসতার ধর্ম হিসেবে তুলে ধরে ব্যাপক অপপ্রচার চালানো হয়েছে। আমি এইসব নেতিবাচক প্রচারণা অগ্রাহ্য করে মূল উৎসগুলোর আলোকে গবেষণা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেই। ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা করতে গিয়ে আমার অনেক প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাই। ইসলাম ও এর শিক্ষাগুলো আমার কাছে সত্যিই খুব সুন্দর ও আকর্ষণীয় মনে হয়েছে।' 

ইরানে সংঘটিত ইসলামী বিপ্লব দেশে দেশে ইসলাম সম্পর্কে নানা ভুল ধারণা দূর করেছে ও এই মহান ধর্ম সম্পর্কে অপপ্রচারণাগুলোর অসারতা তুলে ধরেছে। এর আগে অনেকেই এইসব প্রচারণার শিকার হয়ে মনে করতেন যে ইসলাম সমাজ-ব্যবস্থার জন্য ধ্বংস ডেকে আনে। কিন্তু পশ্চিমা দার্শনিক মিশেল ফুকো ইরানের ইসলামী বিপ্লব সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেছেন:

'ইরানের জনগণ ইসলামের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন সংস্কার। ইসলাম ব্যক্তির নানা ব্যাথা-বেদনা দূর করা ছাড়াও সমাজের নানা রোগ-ব্যাধি বা সংকটগুলো দূর করে বলেও তারা মনে করেন।'

মার্কিন নও-মুসলিম নারী সুজান মনে করেন ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সুবাদে তিনি ইসলামকে ভালোভাবে বোঝার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন:  'ইসলাম বোঝার ক্ষেত্রে আমার প্রচেষ্টায় ইমাম খোমেনী (র.) ও ইরানের ইসলামী বিপ্লব গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। টেলিভিশনে ইমাম খোমেনী (র.)'র নুরানি চেহারা আমাকে আকৃষ্ট করে। মনে হল যেন হযরত ঈসা (আ.) ফিরে এসেছেন। ধীরে ধীরে তার ব্যক্তিত্ব ও চিন্তাধারার সঙ্গে আরো বেশি পরিচিত হয়ে বুঝলাম যে কিভাবে ইসলাম একটি সমাজকে দিতে পারে মুক্তি ও দেখাতে পারে সুপথ।'

ইসলাম সম্পর্কে বিশ্লেষণ ও পড়াশোনার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন মার্কিন নারী 'সুজান উবরি' এবং নিজের জন্য বেছে নেন 'জামিলা ফুরক্বান' নামটি।    

একটি অমুসলিম দেশে ইসলাম গ্রহণের পর বেশ কঠিন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে  মার্কিন নারী সুজানকে। সুজান এ প্রসঙ্গে বলেছেন:

'আমার জন্য অনেক কিছুই ছিল কঠিন। আমি আরবী জানতাম না। নামাজ পড়ার জন্য তা শেখা দরকার বলে আমি ভাবছিলাম। অর্থ বুঝে নামাজ না পড়লে তা পড়ে লাভ নেই বলে অনুভব করছিলাম। তাই দ্রুত নামাজ শিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারছিলাম না বলে মনটা খুব খারাপ হয়ে পড়ে। একদিন  শহরের একটি মার্কেটের এক দোকানে দেখলাম একটি বই। বইটির নাম ছিল 'কিভাবে নামাজ পড়ব?' বইটি দেখে বেশ খুশি হলাম। যখন বইটি কিনতে চাইলাম তখন ওই দোকানের মুসলমান বিক্রেতা আমাকে বইটি উপহার দিলেন। এভাবে আমি ওই বইটির মাধ্যমে নামাজ পড়া শিখেছি। নামাজ বিশ্ব জগতের স্রস্টা মহান আল্লাহর ইবাদতের সৌন্দর্য আমার কাছে তুলে ধরে। ফলে ইসলামকে ধর্ম হিসেবে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতার বিষয়ে আমি আরো সুনিশ্চিত হই।'

মার্কিন নও-মুসলিম নারী সুজান আরো বলেছেন:

'ধীরে ধীরে আমি হিজাব পরার সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রথম দিকে কেবল মাথায় ওড়না পরতাম। পরে পুরোপুরি হিজাবে অভ্যস্ত হলাম। সে সময় যে হাসপাতালের নারী রোগ ও প্রসূতি বিভাগে কাজ করতাম সেখানে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখলাম। যেমন, সেখানকার অধ্যাপক হিজাবকে সমর্থন জানান। কিন্তু আমার বিভাগীয় প্রধান এতে অসন্তুষ্ট হন। রমজানের পরই আমি যেন হিজাব খুলে ফেলি তিনি আমাকে সে নির্দেশ দিলেন। কারণ, তিনি ভেবেছিলেন কেবল রমজান মাসের কারণেই আমি হিজাব করছি। আমি তাকে বললাম যে, এই হিজাব হচ্ছে আমার ধর্মের অন্যতম অংশ এবং আমি কখনও হিজাব ছাড়ব না। ফলে আমার সামনে নানা সমস্যা দেখা দিল। কিন্তু আমি হিজাবের গুরুত্ব বুঝতাম বলে এ জন্য যে কোনো সমস্যা ও কষ্ট মনে নিতে প্রস্তুত ছিলাম।'

মার্কিন নও-মুসলিম নারী মিসেস জামিলা বা সাবেক সুজান শেষ পর্যন্ত সব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে এবং  বিশ্বনবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত (আ.)'র উসিলা ধরার মাধ্যমে। জামিলা ইসলামের শিয়া মাজহাবকে নিজের মাজহাব হিসেবে বেছে নেন। তিনি বর্তমানে একজন অঙ্গীকারাবদ্ধ মুসলমান হিসেবে ব্যক্তিগত ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

পাশ্চাত্য ইসলামকে নারী-বিদ্বেষী ধর্ম হিসেবে তুলে ধরা সত্ত্বেও পাশ্চাত্যের নারী ও পুরুষ দিনকে দিন ইসলামের দিকে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন। নারীর ক্ষেত্রে এই হার অপেক্ষাকৃত বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর এক লাখ মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছেন। 

আসলে বিশ্বে ইসলামের দিকে অমুসলমানদের এবং বিশেষ করে অমুসলিম নারীদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ ও ইসলাম ধর্ম গ্রহণের হিড়িকের মূল কারণ নারীর প্রতি ইসলামের প্রকৃত সম্মানসহ এই আসমানি ধর্মের সত্যতা, মানবীয় সম্মানের প্রতি এর গুরুত্ব আরোপ ও এর প্রাণ-সঞ্জীবনী নানা শিক্ষারই প্রভাব। #  

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আশরাফুর রহমান/১৯

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন