বেআইনিভাবে ধর্মান্তরকরণের অভিযোগের মামলায় জামিন পেলেন মাওলানা উমর গৌতম
-
মুহাম্মাদ উমর গৌত
ভারতের উত্তর প্রদেশের লখনৌ’র একটি স্থানীয় আদালত জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণের অভিযোগ সম্বলিত একটি মামলায় মাওলানা উমর গৌতমকে জামিন দিয়েছে।
গত শনিবার জেলা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা জজ (চতুর্থ) রাজেন্দ্র সিং অভিযুক্ত মুহাম্মাদ উমর গৌতমকে জামিন দেন। ২০২১ সালে মুহাম্মাদ উমর গৌতম এবং নুরুল হুদা স্কুলের ম্যানেজার ও তার ছেলের বিরুদ্ধে জোর করে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগে মামলা হয়েছিল। এক শিক্ষিকা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।
আদালত এ সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি করেছে যেখানে মাওলানা উমর গৌতমের বিরুদ্ধে ‘উত্তর প্রদেশ প্রহিবিশন অফ আনল’ ফুল কনভার্সন অফ রিলিজিয়ন অ্যাক্ট ২০২১’-এর অধীনে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছিল।
ফতেহপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ (চতুর্থ) রাজেন্দ্র সিং, উমর গৌতমকে জামিন দেওয়ার সময়, পর্যবেক্ষণ করেছেন যে কথিত অপরাধটি ২০২০ সালের প্রথম দিকে সংগঠিত হয়েছিল। কিন্তু উমর গৌতমের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে সেই ধর্মান্তর বিরোধী আইনটি ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। আদালত উমর গৌতমকে এক লাখ টাকার ব্যক্তিগত বন্ড এবং সমপরিমাণ অর্থে জামিন দিয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৪২০, ১২০-বি, ১৫৩-এ, ১৫৩-বি, ২৯৫-এ এবং উত্তর প্রদেশের বেআইনি ধর্মান্তরণ আইনের ৩ ও ৫ ধারার অধীনে অভিযোগ করা হয়েছে৷
মুহাম্মাদ উমর গৌতম উত্তর প্রদেশের ফতেহপুর জেলার বাসিন্দা। তিনি ১৯৬৪ সালে একটি হিন্দু রাজপুত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে তার নাম ছিল শ্যাম প্রতাপ সিং গৌতম। তার বাবার নাম ধনরাজ সিং গৌতম। তারা ছয় ভাই, যার মধ্যে চতুর্থ হলেন উমর। বাড়িতে তাকে ছোটবেলা থেকেই ‘প্রধানজী’ নামে ডাকা হতো। বিশেষ ব্যাপার হল- সেই সময় গৌতমের গ্রামে মুসলিমদের কোনও বাড়ি বা মসজিদ ছিল না।
শ্যাম প্রতাপ সিং গৌতম তার গ্রাম ফতেহপুর থেকে প্রাথমিক পড়াশোনা করার পর ইন্টারমিডিয়েট পড়ার জন্য ইলাহাবাদে যান এবং তারপরে বিএসসি এগ্রিকালচার পড়ার জন্য নৈনিতালে ভর্তি হন এবং কলেজ হোস্টেলে থাকতে শুরু করেন। বিএসসির শেষ বর্ষে তিনি পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন, তারপরে তার হোস্টেল রুমের প্রতিবেশী নাসির খান তাকে সেবা শুশ্রূষা করেছিলেন। নাসির খান ছিলেন বিজনৌরের বাসিন্দা এবং তিনি একইসময়ে নৈনিতাল কলেজে অধ্যয়নরত ছিলেন। নাসির খান, অসুস্থ শ্যাম প্রতাপ গৌতমকে সাইকেলে করে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতেন। এ ভাবে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব অনেক গভীর হয়। নাসির খান প্রতি মঙ্গলবার গৌতমকে মন্দিরে নিয়ে যেতেন। এ ভাবে দু’জনের মধ্যে কথোপকথন শুরু হয় এবং নাসির খান তাকে বিভিন্ন ইসলামি বইপত্র পড়তে দেন। এভাবে দেড় থেকে দুই বছর ধরে চলে।
এই পর্বে শ্যাম প্রতাপ গৌতম কুরআন শরীফ অধ্যায়ন করেন, তারপরে তিনি তার ধর্ম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৮৪ সালে নৈনিতালে এমএসসি পড়ার সময় তিনি হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হন। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তিনি তার নাম শ্যাম প্রতাপ গৌতম থেকে পরিবর্তন করে মুহাম্মাদ উমর গৌতম রাখেন। এরপর তিনি তার কলেজ ও হোস্টেলে ধর্ম পরিবর্তনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন। পরে উমর গৌতম দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে এমএ করেন।
উত্তর প্রদেশের এডিজি (আইন শৃঙ্খলা) প্রশান্ত কুমার বলেন, গত একবছরে ৩৫০ জনকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। নয়ডার একটি বধির ও মূক স্কুলের ১৮ জন শিশুকেও ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত এক হাজারের বেশি মানুকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/১৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।