ইরানের প্রতি মার্কিন অকৃতজ্ঞতা ও ইরাকিদের কৃতজ্ঞতা
(last modified Fri, 26 Apr 2019 12:44:16 GMT )
এপ্রিল ২৬, ২০১৯ ১৮:৪৪ Asia/Dhaka

সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কঠোর ও আন্তরিক সংগ্রামের জন্য ইসলামী ইরানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ইরাকে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক বিশেষ সম্মেলন।

পশ্চিমা কয়েকটি সরকার ও তাদের আঞ্চলিক মিত্র বা সেবাদাস সরকারগুলোর মদদে গড়ে-ওঠা ধর্মান্ধ তাকফিরি-ওয়াহাবি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস (বা আইএসএল) তথা দায়েশ ইরাক ও সিরিয়ার একটা বিশাল অংশকে গ্রাস করেছিল কয়েক বছর আগে। নজিরবিহীন নৃশংসতা, পাশবিকতা ও গণহত্যা চালিয়ে দায়েশ ইরাকের প্রায় অর্ধেক অঞ্চল দখল করে রাজধানী বাগদাদও দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

সিরিয়া ও ইরাকে আলেম সমাজসহ কুর্দি, শিয়া ও সুন্নিদের ওপর ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছে দায়েশ। ধর্ষণ ও ডুবিয়ে বা পুড়িয়ে হত্যা করাসহ বন্দিদের নৃশংসভাবে পাশবিক নানা কায়দায় হত্যা করতে এবং এমনকি শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদেরও গলা কেটে হত্যা করতে অভ্যস্ত এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইরাকি ও সিরিয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। দায়েশের হাত থেকে বাঁচতে নিরাপদ অঞ্চলগুলোতে পালিয়ে গিয়েছিল লাখ লাখ মানুষ। বন-জঙ্গল ও পাহাড়ে আশ্রয় নেয়া অনেক ইরাকি ও সিরিয় ক্ষুধা-তৃষ্ণার শিকার হয়ে মারা গেছে। (এখনও ইরাক ও সিরিয়ার নানা অঞ্চলে আবিস্কৃত হচ্ছে দায়েশের গণহত্যার শিকার-হওয়া ব্যক্তিদের গণ-কবর।)

এ সময় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গালভরা বুলি ও শ্লোগান আওড়াতে অভ্যস্ত পাশ্চাত্যের বাহ্যিক আচরণ ছিল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নীরব দর্শকের ভূমিকা ও মাঝে-মধ্যে লোক-দেখানো কিছু সন্ত্রাস-বিরোধী অকার্যকর পদক্ষেপে সীমিত। বরং তারা গোপনে এই ধর্মান্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ ইরাক ও সিরিয়া অঞ্চলে লেলিয়ে দেয়া ধর্মান্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সব ধরনের সহযোগিতা যুগিয়েছে।

ফলে দায়েশকে নিয়ে জাতিসংঘে পশ্চিমা শক্তিগুলোর বৈঠক আর বিবৃতিতে ভয়ানক বর্বর এই গোষ্ঠীর কোনো ক্ষতি হয়নি এবং এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোটের কথিত হামলা বা হামলার নাট্য-অনুষ্ঠানগুলোও সন্ত্রাস দমনে মোটেও সহায়ক হয়নি। বরং দায়েশ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ও এমনকি ইউরোপেও তার প্রভাব এবং সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। 

অন্যদিকে ইরাক ও সিরিয়া সরকারের আমন্ত্রণে ইরান ও তার কয়েকটি মিত্র শক্তি এ সময় দায়েশের বিরুদ্ধে বাস্তব ও কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলে দেখিয়ে দেয় যে কিভাবে সন্ত্রাস দমন করতে হয়। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি এই সংগ্রামে ইরাক ও সিরিয়ার স্বেচ্ছাসেবী গণ-বাহিনীগুলোর পাশে এসে দাঁড়ায়। ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ও বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য এই মহান সংগ্রামে শাহাদত বরণ করেছেন।

অথচ গত ৮ এপ্রিল মার্কিন সরকার চরম ইরান-বিদ্বেষ ও অকৃতজ্ঞতার প্রকাশ ঘটিয়ে ইরানের এই গার্ড বাহিনীকে সন্ত্রাসী বলে ঘোষণা করেছে। আসলে এ অঞ্চলে দায়েশের পরাজয়ের ফলে চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয় মার্কিন সরকার ও তার সৃষ্ট সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইহুদিবাদী ইসরাইল। অথচ এ অঞ্চলে সন্ত্রাস দমনে ইরানের কার্যকর ভূমিকা না থাকলে দায়েশ মার্কিন সাম্রাজ্যে ও ইউরোপে মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করত।  

অন্যদিকে ইরাকের কৃতজ্ঞ জনগণ দায়েশ তথা সন্ত্রাস দমনে ইরানের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়ে আয়োজন করেছে বিশেষ কৃতজ্ঞতা-সম্মেলনের। এই সম্মেলনে সন্ত্রাস-বিরোধী ইরাকি স্বেচ্ছাসেবী গণবাহিনী হাশদ আশ শাবির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শহীদ কমান্ডার আবুতাহা নাসেরির কন্যা বলেছেন, ইরানি, ইরাকি ও লেবাননিদের পবিত্র রক্তের বরকতে ইরাক দায়েশ সন্ত্রাসীদের ওপর বিজয়ী হয়েছে। ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ফালিহ আল ফাইজও ইরানের জনগণ ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, ইরাকে সন্ত্রাস দমনে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান অন্য সব দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। 

এ ধরনের সম্মেলন থেকে বোঝা যায় একটি মহতী সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে অবৈধ ও একতরফা পদক্ষেপ নিয়ে জনমতকে ধোঁকা দেয়া যায় না। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৬