ট্রাম্পের উত্তেজনা সৃষ্টিকারী নীতির তীব্র সমালোচনায় ইউরোপীয় পরিষদ
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন চুক্তির ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা নীতি ও স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপ এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে শক্তিশালী বৃহৎ দেশগুলোর বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধসহ নানাভাবে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টির কারণে বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিসহ আরো অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় এ উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
ট্রাম্পের এ ধরনের আচরণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। ইউরোপীয় পরিষদের প্রধান ডোনাল্ড তুস্ক ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত শিল্পোন্নত সাত জাতি গ্রুপের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক শুরুর আগে বলেছেন, আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গেলেও ইতিবাচক কোনো ফল বয়ে আসেনি বরং এতে করে কেবল পাশ্চাত্যের দেশগুলোর মধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি সাত জাতিগ্রুপের সদস্যদের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে বলেছেন এতে করে পারস্পরিক অনাস্থার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ইউরোপীয় পরিষদের প্রধান হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি বাণিজ্য শুল্ককে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন তাহলে তা সারা বিশ্বের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনবে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের নীতির ব্যাপারে ইউরোপীয় পরিষদের প্রধানের এসব সমালোচনামূলক বক্তব্য সাত জাতি গ্রুপের শীর্ষ সম্মেলনের গুরুত্বকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। জার্মানি, আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালি, জাপান ও কানাডার শীর্ষ নেতাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন এই জোটের জন্য বিরাট পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা যায়, আন্তর্জাতিক সংকট মোকাবেলায় এ জোটের ঐক্য ধরে রাখাটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল শনিবার থেকে ফ্রান্সে সাত জাতি গ্রুপের এ বৈঠক শুরু হয়েছে এবং আগামীকাল তা শেষ হবে। বর্তমানে এই জোটের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন। এমন সময় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে জোটের সদস্য অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে তীব্র বাদানুবাদ চলছে। চীনের সঙ্গে ট্রাম্পের শুল্ক বাণিজ্য, অবাধ বাণিজ্য, জলবায়ু ও পরিবেশ সংরক্ষণ, পরমাণু সমঝোতা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে সাত জাতিগ্রুপের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ শুরু হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, এসব বিষয়ে কোনো সমঝোতা বা বিবৃতি ছাড়াই বৈঠক শেষ করা হতে পারে। গত বছরও কানাডায় অনুষ্ঠিত সাত জাতি গ্রুপের সম্মেলনের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের সম্মেলনের ব্যাপারেও খুব একটা আশাবাদী হওয়া যায় না। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে অন্যদের বিরোধিতার কারণে পর্যবেক্ষকরা সাত জাতি গ্রুপকে ছয় যোগ এক গ্রুপ বলে অভিহিত করেছেন। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, ইরান ও বাণিজ্য বিষয়ে মূলত আমেরিকার সঙ্গে বাকী দেশগুলোর বিরোধ এখন চরমে। এ কারণেই ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্বার্থপর ও অহংকারী হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, তিনি অন্য দেশের মতামতকে তোয়াক্কা না করে সবাইকে ওয়াশিংটনের নীতি অনুসরণের জন্য চাপ দিচ্ছেন যা গ্রহণযোগ্য নয়।# পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৫