জানুয়ারি ০২, ২০২২ ১৮:৪১ Asia/Dhaka

আমরা অনেকেই পুঁথিগত বিদ্যার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন। এ ধরনের বিদ্যা সৃষ্টিশীলতার পথেও এক বড় বাধা।

শিশু-কিশোরদের সুশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য তাদেরকে দিয়ে সৃষ্টিশীলতার চর্চা করানো তাই খুবই জরুরি।  বলা হয় সৃষ্টিশীলতা প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই রয়েছে, এটি কেবলই উত্তরাধিকারগত বা বংশগত বিষয় নয়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে তার উন্মেষ ঘটাতে নানা ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে হয়। চিন্তাশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা, নতুন ভাবনা ও নতুন যন্ত্রপাতি তৈরি করা-এসবই সৃষ্টিশীলতার সুফল। সৃষ্টিশীল চিন্তার ক্ষমতা অর্জন সন্তানের ভবিষ্যতকে করে উজ্জ্বল। যাদের মধ্যে সৃষ্টিশীল চিন্তা নেই তারা নানা ধরনের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যর্থ হয় ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে।  শিশু-কিশোরদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা ও সৃষ্টিশীল চিন্তার উন্মেষ ঘটানোর নানা কৌশল নিয়েই আজ আমরা কথা বলব। আমাদের সাথেই থাকুন। 

মানুষের সৃষ্টিশীলতার বিকাশ শৈশবেই শুরু হয়। উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও নান্দনিকতার অনুভূতিও এ সময় থেকেই তারা অর্জন করতে থাকে এবং সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ঘটতে থাকায় তারা শৈশব ও কৈশোরের নানা পর্যায়ে নানা ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করতে থাকে। শিশুদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতার উন্মেষ সর্বোচ্চ মাত্রায় ঘটে ছয় থেকে সাত বছর বয়সে। এর মাধ্যমে তারা নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয় ও গড়ে তোলে মূল্যবান কোনো শিল্প-কর্ম বা উল্লেখযোগ্য কোনো কিছু। শিশু-কিশোরদের সৃষ্টিশীলতার উন্মেষ ও বিকাশের জন্য বাবা-মাকে হতে হবে অত্যন্ত ধৈর্যশীল, সচেতন ও কৌশলী।  এ জন্য অর্থ বা পুঁজি বিনিয়োগেরও দরকার হয় না। যা দরকার তা হল আশপাশের নানা বিষয়ে আপনার শিশু  সন্তানকে যথেষ্ট তথ্য জানিয়ে রাখা এবং যা কিছু তার নানা কৌতুহল উস্কে দেয় সেগুলো তার কাছে রাখতে দেয়া।

শিল্প শিক্ষা বিষয়ক তৎপরতা শিশুর সৃষ্টিশীলতা বিকাশের অন্যতম সহায়ক ক্ষেত্র। শিল্পকর্ম মানুষের মনের খোরাক যোগায় এবং তা জাগিয়ে তোলে মানবীয় অনেক সুপ্ত প্রতিভা। শিক্ষণীয় ও ইতিবাচক অনেক কিছুই পেয়ে থাকি শিল্পকর্ম থেকে। শিশুর সমালোচনার মন বা প্রতিবাদী চিন্তা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতার ওপরও ইতিবাচক প্রভাব রাখে শিল্প বিষয়ক প্রশিক্ষণ। শিল্পকর্ম সৃষ্টি করতে গিয়ে শিশু অতীতের তথ্য ব্যবহার করে ও নির্বাচন করে সম্পর্কযুক্ত তথ্য-ব্যাংক এবং নানা ধরনের পছন্দের দিক বিশ্লেষণ করে সর্বোত্তম দিকই বেছে নেয়। আর এভাবে শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিও জোরালো হতে থাকে। এ ছাড়াও চিন্তাশীলতা, গবেষণা ও বিশ্লেষণের ক্ষমতা, সমালোচনার ভাবনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাড়াতেও সহায়তা করে শিল্প-নির্মাণের প্রশিক্ষণ।  

চিত্র অঙ্কন বা ছবি-আঁকা শিশুদের মধ্যে গড়ে তোলে সৃষ্টিশীলতা। শিশুর নানা ধরনের প্রাকৃতিক চাহিদা মেটানো ছাড়াও  সৌন্দর্য অনুধাবনের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় ছবি অঙ্কন।  শিশুর কল্পনা-শক্তি, মূর্তায়ন, আত্মবিশ্বাস ও সর্বোপরি সৃষ্টিশীলতা বাড়িয়ে দেয় ছবি-অঙ্কন। এ ছাড়াও শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশ, কোনো বিশেষ বিষয়ে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা ও পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতার মত নানা গুণের বিকাশেও সাহায্য করে এ ধরনের শিল্প প্রশিক্ষণ। নানা ধরনের রঙ ও অত্যুজ্জ্বল চুমকির দ্রবণ ছবি আঁকার ক্ষেত্রে শিশুর উৎসাহ ও সৃষ্টিশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক হতে পারে। 

সৃষ্টিশীলতার বিষয়ে প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ পল টরান্স-এর মতে শিশুদেরকে নানা নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকে রাখা তাদের সৃষ্টিশীলতা বিকাশের জন্য ক্ষতিকর। তিনি শিশুদের সৃষ্টিশীলতা বিকাশের জন্য নানা পন্থায় আর্ট করার কৌশল প্রয়োগ করেছেন। এইসব পন্থার মধ্যে রয়েছে গল্প শুনিয়ে সে গল্পের নানা দৃশ্যের ছবি শিশুদের আঁকতে দেয়া। এই পদ্ধতি একদিকে যেমন শিশুদের কল্পনা-শক্তি বাড়িয়ে দেয় তেমনি তা তাদের মনোযোগ বৃদ্ধি, স্মরণ-শক্তি, গল্প তৈরি বা পুনবর্ণনার  ক্ষমতা ও নির্ভুলতার প্রবণতা বাড়াতেও সহায়তা করে।

শিশুদের জন্য উপযুক্ত খেলনা বাছাই করাও তাদের সৃষ্টিশীলতা ও জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বাড়াতে বেশ সহায়ক ভূমিকা রাখে। কোনো কোনো খেলনা শিশুর আবেগ প্রবণতা ও মনমানসিকতার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেমন, কোনো কোনো খেলনার বিশেষ কোনো গঠন ও সাইজ নেই এবং শিশুরা চাইলেই তা মনের মত করে গড়ে নিতে পারে। কাগজ দিয়ে নানা খেলনা তৈরি করাও শিশুর সৃষ্টিশীলতা বাড়ানোর সহায়ক। নানা ধরনের লোগো বা জ্যামিতিকি বস্তুর খেলনাও শিশুর হস্তশিল্প তৈরির সৃষ্টিশীলতা বাড়াতে পারে।

ইসলাম ধর্ম শিশুর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং সৃষ্টিশীলতার বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগেই শিশুর প্রথম ও দ্বিতীয় সাত বছরে তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও চিন্তাভাবনার আলোকে তাদের সৃষ্টিশীলতার ধরনও যে ভিন্ন হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এই মহান ধর্মের শিক্ষায়। বলা হয়েছে প্রথম সাত বছরে শিশুকে স্বাধীনভাবে খেলাধুলা করতে দেয়া উচিত যাতে তার সৃষ্টিশীল গুণগুলোর স্বাভাবিক বিকাশ ঘটে।

বাবা মায়েদের উচিত শিশুদের জন্য এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা যাতে তাদের মনে নানা প্রশ্ন জাগে এবং তাদেরকে খুব শিগগিরই ওইসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাদেরকেই সেসব প্রশ্নের উত্তর বের করতে ব্যস্ত রাখা।

এ ছাড়াও শিশুদেরকে অনেক বিষয়ের মধ্য থেকে কোনো বিষয় বেছে নেয়ার সুযোগ করে দেয়া উচিত।  বিষয়টি পোশাক বা স্কুলের প্রয়োজনীয় নানা সামগ্রীর ক্ষেত্রেও হতে পারে। এরপর তাকে প্রশ্ন করতে হবে সে কোনো নির্দিষ্ট ওই বস্তু বা বিষয়টি বেছে নিয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থা শিশুর মধ্যে বাছাইয়ের কাজে বুদ্ধিবৃত্তির ব্যবহার, ভেবেচিন্তে কাজ করার ও সঠিক বিষয়টি বাছাই করার জ্ঞান বাড়ানোর সহায়ক। সর্বোপরি শিশুর মধ্যে সৃষ্টিশীলতা জাগিয়ে তুলতে বাবা-মাকে সব সময়ই সচেতন ও সচেষ্ট থাকতে হবে।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/০২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ