ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২ ২০:৩৬ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠকবান্ধুরা! আপনারা কেমন আছেন? আশা করছি সবাই ভালো আছেন। স্বাস্থ্যকথার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। থাইরয়েড স্বাস্থ্য সমস্যা এখন বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষের মধ্যে বলা চলে অনেকটা কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়ই এ বিষয়টি নিয়ে মানুষকে ডাক্তারের কাছে ছুটতে হচ্ছে। এ বিষয়ে রেডিও তেহরানকে চিঠি লিখেছেন আমাদের বেশ কয়েকজন শ্রোতা। এ বিষয়ে আলোচনা করার কথাও বলেছেন।

তো আজ আমরা থাইরয়েড নিয়ে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা করব। আর এ বিষয়ে কথা বলবেন তেহরানে গবেষণারত বাংলাদেশি চিকিৎসক পুষ্টিবিদ ও ন্যাচারাল মেডিসিন কনসালটেন্ট, তেহরান ইউনিভার্সিটি অব মেডিক্যাল সাইন্সেস এ পিএইচডি গবেষক ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু।

জনাব ডা. ডা. হেদায়েতউল্লাহ সাজু রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: জনাব ডা. হেদায়েতুল্লাহ-প্রথম পর্বের আলোচনায় আপনি থাইরয়েড আসলে কি, থাইরয়েড সমস্যা কেন হয় এবং এর লক্ষণ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছিলেন। দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে আপনার কাছে জানতে চাইব, থাইরয়েড কাদের বেশি হয়- মানে নারীদের নাকি পুরুষদের?

ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু: থাইরয়েড নিয়ে আলোচনার দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে আপনি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন করেছেন যে, আসলে থাইরয়েড কাদের বেশি হয়? নারী পুরুষের মধ্যে। খুব সংক্ষেপে বললে উত্তরটা এরকম পুরুষের তুলনায় নারীদের থাইরয়েড বেশি হয়। পরিসংখ্যন বলছে বিশ্বজুড়ে ৩০ কোটিরও বেশি মানুষের থাইরয়েড সমস্যা রয়েছে। তারমধ্যে প্রতি ৮ জনের ১ জন নারী। কোথায় কোথাও বলা হচ্ছে পুরুষদের তুলনায় নারীদের আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ প্রায় দশগুণ। কখনও দেখা যায় প্রতি ৫ জনের মধ্যে ৪ জন নারী থাইরয়েডে আক্রান্ত।

রেডিও তেহরান: আচ্ছা, বয়সভেদে  থাইরয়েড সমস্যার তারতম্য আছে কি ?

ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু: বয়সভেদে তারতম্য প্রসঙ্গে বলব শিশুদের তুলনায় কৈশরকালীন সময়ে এই রোগটি বেশি ধরা পড়ে নারী কিংবা পুরুষ সবার মধ্যেই। তবে ৬০ বছরের পরও কিন্তু থাইরয়েড হতে দেখা যায়।

রেডিও তেহরান: ডা. হেদায়েতুল্লাহ, প্রজননক্ষম নারীদের হাইপোথাইরয়েডিজমের হার ও জটিলতা কেমন?

ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু: দেখুন, আমি প্রথমেই বলেছি নারীদের থাইরয়েড বেশি হয়। আর প্রজননক্ষম নারীর কৈশর থেকেই এই থাইরয়েড জনিত সমস্যার বিষয়টি শুরু হয়। কৈশরের সময় একটি মেয়ের মাসিক হয়ে থাকে। থাইরয়েড থাকলে মাসিকটা অনিয়মিত হয়, মাসিকের সময় রক্তক্ষরণ বেশি হয়, কখনও কখনও দেরিতে হয়, কখনও ঠিকমতো হয় না। এসব সমস্যা কৈশর থেকেই শুরু হয়। এসবের মূল কারণ বা যাকে বলব নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা তা কিন্তু থাইরয়েডের হাতে। তো একজন নারীর মাসিক যদি নিয়ম মাফিক না হয় তাহলে বুঝতেই পাারছেন তার প্রজনন ক্ষমতাটা কেমন হবে!

রেডিও তেহরান: ডা. প্রজননক্ষম নারীর থাইরয়েড হরমোন সম্পর্কিত জটিলতার বিষয়ে আলোচনা শুনছিলেন। ডা. সাজু-নারীর জীবনে থাইরয়েড হরমোনের সবচেয়ে গুরুত্বের জায়গা কোনটি? অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি যদি কোনো নারী সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করে তাহলে তাঁকে কি থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করে নেয়া উচিত?

ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু: জ্বি আপনার চমৎকার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। একজন নারী সন্তান নেয়ার পরিকল্পনার সাথে সাথে প্রথমে তাঁকে থাইরয়েড পরীক্ষা করে নিতে হবে। কারণ থাইরয়েড হরমোনের যদি তারতম্য হয় তাহলে সন্তানধারণে তার ব্যপক সমস্যা হতে পারে। বন্ধ্যাত্ব থাকতে পারে। বারবার গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গর্ভের সন্তানের মৃত্যু হতে পারে। গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে সমস্যা হতে পারে। গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, প্রি অ্যাকলামশিয়া, অ্যাকলামশিয়াসহ নানান জটিল সমস্যায় পড়তে পারেন। এমনকি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে হরমোনের তারতম্য যদি বর্ডার লাইনের কাছে থাকে তখনও তাকে অবশ্যই একজন থাইরয়েড বিশেষজ্ঞ কিংবা একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

রেডিও তেহরান: আচ্ছা গর্ভকালীন সময়ে থাইরয়েড হরমোনের পরীক্ষাটা কতদিন পর পর করাতে হবে?

ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু: গর্ভকালীন সময় নারীকে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর পর অবশ্যই পরীক্ষা করাতে হবে এবং তার অ্যান্টি থাইরয়েড ড্রাগ কিংবা থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি জনিত যদি কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় তাহলে তা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে  খেতে হবে। সন্তানধারণের ৬ মাস  থেকে এক বছরের মধ্যে যে নারীর সন্তানধারণকালে হাইপো থাইরয়েডিসমের সমস্যা ছিল সেটি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে এ সময় আবার পরীক্ষা করে সঠিক প্রক্রিয়ায় থাইরয়েড হরমোনের ব্যালেন্স আনতে হবে। তা নাহলে নারীর নিজের এবং সন্তানের অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে।

নারীদের থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা 

আরেকটু ছোট্ট করে যদি বলি-নারীর শারিরীক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য অবশ্যই থাইরয়েড হরমোনের সমতা দরকার। তা নাহলে অকারণে খিটখিটে মেজাজ, বিষণ্ণতা, আবেগপ্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া, চুল পড়ে যাওয়া, পা ফাটা, ক্লান্তি লাগা, ঘুম ঘুম ভাব হওয়া এগুলোও কিন্তু থাইরয়েড হরমোনজনিত কারণে নারীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে দেখা যায়।  

রেডিও তেহরান: ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু, সন্তান গ্রহণের জন্য নারীদের ক্ষেত্রে থাইরয়েড হরমোনের গুরুত্বের কথাটি আপনি বললেন। এবার একটু শিশুদের প্রসঙ্গে আসব। শিশুদের হাইপোথাইরয়েডিজম হলে কি সমস্যা হয়?

থাইরয়েড

ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু: দেখুন, শিশু বলতে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে জন্মের চার সপ্তাহর মধ্যেই থাইরয়েড গ্রন্থি তৈরি হয়। এ জন্ম বলতে গর্ভাবস্থায় বোঝাতে চেয়েছি। আর জন্মের ৭ সপ্তাহর মধ্যে থাইরয়েড হরমোন কাজ করা শুরু করে। তখন থেকে শুরু করে বড় হওয়া পর্যন্ত  পুরো সময়টাতে থাইরয়েড হরমোনের ব্যাপক প্রভাব থাকে। সেক্ষেত্রে যদি হরমোনের ঘাটতি দেখা যায় কিংবা হাইপোথাইরয়েডিজমের বিষয়টি যদি থাকে তাহলে শিশুর জন্মের পরই জন্ডিস দেখা দিতে পারে। আপনারা জানেন যে জন্মের পরই শিশুর কেঁদে ওঠার কথা। কিন্তু দেখা গেল কোনো শিশু জন্মের পর কাঁদছে না কিংবা কাঁদলেও তার কান্নার স্বরটি ঘোড়ার ডাকের মতো শোনা যাচ্ছে। অস্বাভিক ওজন হয়। আর হাসি কান্নার বিষয়টি কিন্তু শিশুর সুস্থতা –অসুস্থতার একটা প্যারামিটার। কিন্তু দেখা গেল শিশুর হাসি –কান্না ঠিকমতো হচ্ছে না। এসব লক্ষণ যদি দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে শিশুটির নিশ্চয়ই থাইরয়েড হরমোন জনিত সমস্যা থাকতে পারে। ফলে গর্ভকালীন সময়ে একজন মায়ের যেমন অবশ্যই থাইরয়েড হরমোনের পরীক্ষা করা উচিত তেমনি শিশুর জন্মের পর পরই থাইরয়েড হরমোনের পরীক্ষা করা উচিত।

তো ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু থাইরয়েড নিয়ে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় রেডিও তেহরানকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকেও আবারও অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু: আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং যারা শুনলেন তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

শ্রোতা/ পাঠকবন্ধুরা! থাইরয়েড নিয়ে স্বাস্থ্য কথার আগামী সপ্তার আসরেও কথা হবে। সে আসরেও আমাদের সঙ্গে থাকতে ভুলবেন না। একইসাথে ভুলবেন না স্বাস্থ্য সচেতনার বিষয়টি। করোনা মহামারিকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। মাস্ক পরুন, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন, করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে নিন। নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার ফলমূল খাবেন। বেশি বেশি করে বিশুদ্ধ পানি পান করুন। সবাই সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৪

ট্যাগ