ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ ২১:১৬ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠকবান্ধুরা! আপনারা কেমন আছেন? আশা করছি সবাই ভালো আছেন। স্বাস্থ্যকথার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। থাইরয়েড স্বাস্থ্য সমস্যা অনেকটা কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়ই এ বিষয়টি নিয়ে মানুষকে ডাক্তারের কাছে ছুটতে হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনাদের অনুরোধে দুটি পর্ব প্রচারিত হয়েছে। আজ তৃতীয় পর্বে এ বিষয়ে কথা বলবেন তেহরানে গবেষণারত বাংলাদেশি চিকিৎসক পুষ্টিবিদ ও ন্যাচারাল মেডিসিন কনসালটেন্ট, তেহরান ইউনিভার্সিটি অব মেডিক্যাল সাইন্সেস এ পিএইচডি গবেষক ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু।

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় যাওয়ার আগে থাইরয়েড গ্রন্থি সম্পর্কে  একটা সাধারণ ধারনা আপনাদের দিয়ে রাখতে চাই। থাইরয়েড গ্রন্থি কি, কোথায় থাকে, দেখতে কেমন ইত্যাদি বিষয় খুব সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

আমাদের গলার সামনের দিকে প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থিটির নাম থাইরয়েড। মানুষের বৃদ্ধি, বিকাশ, শারীরবৃত্তিক আর বিপাকীয় নানা ক্রিয়া-প্রক্রিয়া সাধন করার জন্য এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত থাইরয়েড হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে থাইরয়েড গ্রন্থির নানা সমস্যা বিশ্বে অন্যতম হরমোনজনিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। হরমোনজনিত রোগের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের পরই এর অবস্থান। মূলত নারীরাই এই  সমস্যায় বেশি ভুগে থাকেন। থাইরয়েড গ্রন্থিতে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। যদি এই গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন হরমোন তৈরিতে ঘাটতি দেখা দেয়, তবে সেটি হাইপোথাইরয়েডিজম। এটি থাইরয়েডের সবচেয়ে পরিচিত সমস্যা। নারীদের ক্ষেত্রে এটি পুরুষদের তুলনায় প্রায় আট গুণ বেশি হয়ে থাকে। হরমোনের ঘাটতি হওয়ার কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অটোইমিউন বা ইমিউন ব্যবস্থার গোলমালের কারণে থাইরয়েড কোষ বিনষ্ট হয়ে এটি হয়। তো আপনারা থাইরয়েড গ্রন্থি সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারনা পেলেন। এবার মূল আলোচনায় যাচ্ছি।

জনাব ডা. ডা. হেদায়েতউল্লাহ সাজু রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

ডা. সাজু: আপনাকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: ডা.হেদায়েতুল্লাহ সাজু, দ্বিতীয় পর্বের শেষ আলোচনায় আপনি শিশু প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। শিশুদের হাইপোথাইরয়েডিজম হলে কি কি সমস্যা হয় তা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তো শিশুদের থাইরয়েডজনিত সমস্যা নিয়ে কি আপনি আরো কিছু বলবেন?

শিশুর থাইরয়েড সমস্যা

ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু:  একটি শিশু পৃথিবীতে আসার পর আমরা চাই মেধা-প্রজ্ঞা দিয়ে পৃথিবীকে সুন্দর করুক। কিন্তু সেই শিশুটির যদি হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা থাকে তাহলে সেই শিশুর, উচ্চতা, ওজন ঠিক হবে না। দুর্বল প্রকৃতির হবে। শিশুটির ত্বকের সমস্যা থাকবে। পেট ফুলে যাবে এমনকি চেহারায় অস্বাবাভিকতা দেখা দেবে। বুদ্ধির জায়গায় ঘাটতি থাকবে। সেক্ষেত্রে শিশুর স্কিনিং করতে হবে সঠিকভাবে। বাবা মাকে অবশ্যই শিশুদের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে। হাইপোথাইরয়েডিজমে ভুগলে শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক মারাত্বক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যে কারণে আমরা অনেক অটিজম শিশু দেখতে পাই। আবার হাইপারথাইরয়েডিজমও কিন্তু শিশুদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। আর এটি হলে শিশুরা বিষণ্ণতায় ভোগে। ছটফট করে, মাঝে মাঝে জ্বর আসে, মাঝে মাঝে পাতলা পায়খানায় ভোগে। অতিরিক্ত ঘাম হয়, বুক ধড়পড়ানি হয়। গরম সহ্য করতে পারে না ঐ  শিশুরা। এভাবে বেশ কিছু সমস্যায় ভুগতে পারে শিশুটি।

আর সেক্ষেত্রে বলব মানুষের স্বাভাবিক মানসিক বৃদ্ধি এবং সুস্থ থাকার জন্য থাইরয়েড হরমোনের ভূমিকা ব্যাপক। আর সেক্ষেত্রে আপনার শিশুর হাইপোথাইরয়েডিজম আছে কি না সেটা অবশ্যই লক্ষ্য করতে হবে।

রেডিও তেহরান: ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু, এবারে আপনার কাছে জানতে চাইব, থাইরয়েডের পরীক্ষা কিভাবে করাবেন রোগীরা। এবং তার খরচই বা কেমন ?

ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু:  বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন আপনি করেছেন। পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রসঙ্গে  বলার শুরুতে এটুকু বলে নিতে চাই- থাইরয়েড গ্রন্থিটা কিন্তু একাই হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে না। এজন্য মস্তিস্কের পিটুইটারি গ্রন্থি নামে একটি গ্রন্থি আছে। ঐ গ্রন্থিটা নিয়ন্ত্রণ করে হাইপোথ্রামা। এসব মিলিয়ে একটি আন্তঃ বিষয় তৈরি হয়। সেখানে ডাক্তারি ভাষায় টিএস এইচ ( TSH- thyroid stimulating hormone) একটি বিষয় আছে যা থাইরয়েড হরমোন নির্গত হওয়ার জন্য সংকেত পাঠায়। আর তখনই থাইরয়েড হরমোন নির্গত হয়। ফলে প্রথমেই TSH- thyroid stimulating hormone এর পরীক্ষা করাতে হবে। এরমাত্রা যদি কম হয় তাহলে বুঝতে হবে হাইপারথাইরয়েডিজম আর বেশি হলে বুঝতে হবে রোগী হাইপোথাইরয়েডিজমে ভুগছেন।

এরপর থাইরক্সিন হরমোন বা টিফোর এর পরীক্ষা করাতে হবে। ( (Thyroxine, also known as T4, is a type of thyroid hormone. This test measures the level of T4 in your blood. Too much or too little T4 can indicate thyroid disease)

এরপর T3 পরীক্ষা করাতে হবে। টিএসএইচ রিসিপটর অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করাতে হবে। যদি টিএসআইয়ের উপস্থিতি  দেখা যায় তাহলে রোগীর চোখের চারপাশে ফুলে যাওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারা যায়। এসব পরীক্ষা নিরীক্ষার পরও কিন্তু থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা আছে সে বিষয়টি নাও ধরা পড়তে পারে। এরসাথে ক্যালসিয়াম মেটাবলিজমের একটা বিষয় যুক্ত। ফলে  ইউরিস অ্যাসিড, সিবিসি- এসবেরও টেস্ট করাতে হবে।

আর এর খরচ সম্পর্কে আপনি জানতে চেয়েছিলেন। আসলে একেবারে সঠিক করে খরচ বলতে পারাটা কঠিন। তবে আমি বলব- ৫ থেকে ৭ হাজার টাকার থাইরয়েড হরমোন নির্ণয়ের জন্য টেস্টগুলো করানো সম্ভব।

রেডিও তেহরান: ডা. সাজু মিউজিক বিরতির আগে আপনি মোটামুটিভাবে থাইরয়েডের পরীক্ষা এবং খরচের বিষয়টি জানালেন। আর বাংলাদেশ এবং ভারতের মানুষের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেক্ষেত্রে আপনি পরীক্ষার খরচের বিষয়টি বললেন তো চিকিৎসা খরচটা কেমন সে সম্পর্কে যদি আমাদের শ্রোতাদের একটু ধারণা দেন?

ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু:  দেখুন চিকিৎসা খরচ আসলে রোগের উপর নির্ভর করে। এরই মধ্যে শ্রোতা পাঠক আপনারা বুঝতে পেরেছেন থাইরয়েডের সমস্যাজনিত রোগ ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। অপারেশনেরও প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য খরচটা একটু বেশি হতে পারে। তাছাড়া আয়োডিন থেরাপি দেয়া লাগতে পারে। সেটি নিউক্লিয়ার চিকিৎসা বিভাগ এ কাজটি করে থাকে। তবে স্বাভাবিক হাইপোথাইরয়েডিজম এবং প্রাথমিক অবস্থায়  যদি ধরা পড়ে তাহলে খরচ আসলে খুবই কম।

রেডিও তেহরান: তো ডা.হেদায়েতুল্লাহ সাজু থাইরয়েড নিয়ে রেডিও তেহরানের সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করার জন্য আপনাকে আবারও অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ডা. সাজু: আপনাকেও ধন্যবাদ।

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! আগামী সপ্তার স্বাস্থ্যকথার আসরে এ বিষয়ে কথা হবে। সে আসরেও আমাদের সাথে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখছি। সবাই ভালো ও সুস্থ থাকুন।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৫

ট্যাগ