ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২ ১৯:০৫ Asia/Dhaka

সেমনানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে আজও দেশি-বিদেশি বহু পর্যটক বেড়াতে যান প্রদেশটিতে। সবুজ প্রকৃতি আর বন-বনানি, সাজানো গোছানো পার্কগুলো প্রকৃতিপ্রেমিদের আকৃষ্ট না করে পারে না।

সেমনানে প্রাচীন ও ঐতিহাসিক অনেক স্থাপনার কথাও বলেছিলাম। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে শুরু করে কাজার শাসনামল পর্যন্ত সময়পর্বের বিচিত্র ঐতিহাসিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ এই সেমনান। আমরা কাজার শাসনামলের বিখ্যাত একটি ঐতিহাসিক নিদর্শনের কথা উল্লেখ করে পরিসমাপ্তি টেনেছিলাম গত আসরের। নিদর্শনটি হলো “দারওয়াজে আর্গ” মানে আর্গ গেইট। ওই গেইটের বাইরেও সেমনানে রয়েছে বহু নিদর্শন।

সেমনানের ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে একটি হলো কাজার শাসনামলের বাজার। তবে এই বাজারের আশেপাশে সাফাভি শাসনামলেরও অনেক নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। এই বাজারটি পঁচিশ বছর আগে অর্থাৎ উনিশ শ ছিয়ানব্বুই সালে ইরানের জাতীয় ঐতিহ্যের তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ইরানের বেশিরভাগ শহরেই এরকম ঐতিহ্যবাহী বাজার রয়েছে। এগুলোর টেক্সচার এবং বিশেষ স্থাপত্যশৈলী যথেষ্ট আকর্ষণীয়। এইসব বাজার ইরানের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণীয় নিদর্শনে পরিণত হয়েছে। প্রাচীন বাজারগুলো সংশ্লিষ্ট শহরের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। ইরানে শহরগুলো বলা যায় রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় দিক থেকে প্রধান কেন্দ্র। এসব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার জন্য বাজারগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। প্রকৃতপক্ষে ইসলামী শহরের বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রতিফলন সহজেই লক্ষণীয়। ইরানি বাজারগুলোর সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এসব বাজারে দোকান, টিমচেহ, সরাইখানা, স্কোয়ার, ধর্মীয় ভবন ও স্থাপনা, গোসলখানাসহ অন্যান্য পাবলিক প্লেসও রয়েছে। সেমানান বাজারের বৈশিষ্ট্যও ইরানি বাজারের উল্লেখিত বৈশিষ্ট্য ও কাঠামোর বাইরে নয়।

সেমনানের ঐতিহ্যবাহী বাজারের স্থাপত্যশৈলী ইরানের প্রাচীন বাজারগুলোর কাঠামোর মতোই। সেমনান যেহেতু মরু এলাকা। সেই মরু আঞ্চলিক আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই বাজারের ডিজাইন করা হয়েছে। বিশেষ করে বাজারের ছাদ তৈরি করা হয়েছে ইট ও রোদে পোড়া ইট দিয়ে। এ কারণে গ্রীষ্মকালেও ঠাণ্ডা থাকে ভেতরের আবহাওয়া আবার শীতকালে থাকে তুলনামূলকভাবে গরম। এই বাজারটি ঠিক কবে গড়ে উঠেছিল তা নিয়ে প্রশ্ন জাগতেই পারে। ইতিহাসবিদদের মতে প্রায় দুই শ বছর আগে অর্থাৎ কাজার রাজবংশের প্রথম দিককার শাসনামলে গড়ে উঠেছিল এই সুন্নাতি বাজার। বাজারটি রাস্তাঘাট বৃদ্ধি এবং শহরের আয়তন বৃদ্ধির স্বার্থে দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একটি উত্তর বাজার আরেকটি দক্ষিণ বাজার নামে পরিচিত। বাজারের একটি অংশের নাম শেখ আলাউদ্দৌলা। ওই বাজার ইলখানি যুগে কিংবা তারও আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। শেখ আলাউদ্দৌলা সেমনানি সপ্তম ও অষ্টম হিজরি শতাব্দির অন্যতম আরেফ বা আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

উত্তর বাজারের আয়তন দেড় কিলোমিটারের মতো। এই বাজারটিকে তার প্রাচীন নাম 'রাস্তা বাজার' নামেই ডাকা হয়। স্থাপত্যকলার দিক থেকে দেখলে নজরে পড়বে এই বাজারের ওপর যে ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে গম্বুজ আকৃতির কিছু তাক রয়েছে। বাজারের ছাদে কাঁচের তৈরি বিশাল বিশাল জানালাও বানানো হয়েছে। এই জানালার আলো দিয়েই বাজারের ভেতরে আলোর সংকুলান হয়ে থাকে। বাজারের ভেতরে দুই শ টি দোকান আছে। আছে তিনটি হাম্মামখানা, পাঁচটি মসজিদ, চারটি সরাইখানা এবং "নসর" নামে একটি বড় 'তেকিয়ে' মানে এমন একটি স্থান যেখানে মানুষজন সমবেত হতে পারে। ফার্সি ভাষায় এরকম স্থানকে তেকিয়ে বলা হয়। এর ভেতরে মহররম মাসে শোকানুষ্ঠান করার ব্যবস্থাও রয়েছে।

তেকিয়েটির প্রধান প্রবেশদ্বার চমৎকার সব টাইলস দিয়ে সাজানো হয়েছে। বলা হয়ে থাকে সেমনানের সবচেয়ে বড় জলাধার এবং ছোট একটি মসজিদ এই তেকিয়ের ভেতরে রয়েছে। দক্ষিণ বাজারেও পঞ্চাশটি দোকান রয়েছে। সেখানেও এরকম আরেকটি তেকিয়ে রয়েছে। এই তেকিয়েটির নাম 'পাহ্‌নে'। এই তেকিয়েটির বৈশিষ্ট্য হলো এর পাশেই রয়েছে ঐতিহাসিক দিক থেকে মূল্যবান বহু নিদর্শন। এসব নিদর্শনের মধ্যে ইমাম খোমেনি মসজিদ। এই মসজিদ তেকিয়ের দক্ষিণ-পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত। আরও রয়েছে পাহনে যাদুঘর এবং সেমনান জামে মসজিদ। জামে মসজিদের অবস্থান উত্তর-পশ্চিমে। এগুলো পরিদর্শন করতে পারা সৌভাগ্যই বলতে হবে। এইসব বাজারে ঘুরাফেরা করার পাশাপাশি বন্ধু-বান্ধবের জন্য, আত্মীয়-স্বজনের জন্য, নিকটজনদের জন্য সেমনানের উপহার সামগ্রী কেনাকাটা করে ভ্রমণকে স্মৃতিময় করে রাখার সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।

বাজারের পাশেই যেহেতু সেমনান জামে মসজিদের অবস্থান সুতরাং মসজিদটি একবার ঘুরেফিরে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। এই জামে মসজিদও সেমনানের ঐতিহাসিক ও মূল্যবান নিদর্শনগুলোর একটি। এই মসজিদটি দেখলেই সেমনান অঞ্চলের সমৃদ্ধি, প্রাচীনত্ব এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বের বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। জামে মসজিদ স্থাপনাটিকে সেমনান শহরের প্রাচীনতম ইসলামি স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা যায়।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ