ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২ ১৮:৫৩ Asia/Dhaka

রংধনু আসরের কাছের ও দূরের শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? আশা করি যে যেখানে আছো ভালো ও সুস্থ আছো। সপ্তাহ ঘুরে রংধনুর আসর সাজিয়ে তোমাদের মাঝে হাজির হয়েছি আমি গাজী আবদুর রশিদ এবং আমি আকতার জাহান।

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, জীবন ধ্বংসকারী একটি মারাত্মক স্বভাব হলো অহংকার। যারাই নিজেকে বড় ভাবে তাদেরকে অহংকারী বলা হয়। এই স্বভাবের লোকেরা তাদের উন্নতি ও সফলতা বেশিদিন ধরে রাখতে পারে না। আত্মীয়-স্বজন ও কাছের মানুষের ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে তারা। তাদের কারণে প্রতিষ্ঠান, সমাজ, সংগঠন, রাষ্ট্র এমনকি নিজ পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গর্ব, অহঙ্কার ও নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রকাশ হচ্ছে মানব চরিত্রের সবচেয়ে মারাত্মক অসৎ গুণ। এটি একটি শয়তানি কাজ। মনে রাখতে হবে- অহংকার একমাত্র আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কিত। বান্দার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ও অহংকার একটি নির্জলা মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।

গর্ব-অহংকার সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআন শরীফে বলেন : ‘আর জমিনের উপর গর্বভরে চলো না, আল্লাহ কোন আত্ম-অহঙ্কারী দাম্ভিক মানুষকে ভালোবাসেন না।’ (লোকমান ১৮)

অন্যদিকে, পবিত্র কুরআনের সূরায়ে ফোরকানের ৬৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন: "রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয়: তোমাদের সালাম।"

বন্ধুরা, গর্ব-অহংকার সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা জানলে। আজকের আসরে আমরা অহংকারের পরিণতি সম্পর্কেই একটি গল্প শোনাব। গল্পের পর থাকবে একটি কবিতা ও গান। আর সবশেষে থাকবে ঢাকার এক নতুন বন্ধুর সাক্ষাৎকার। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানটিও তৈরি করেছেন আশরাফুর রহমান। তাহলে প্রথমেই গল্পটি শোনা যাক।

একদিন একটা ইঁদুর বিস্তীর্ণ মরু এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল। ইঁদুরটি ছিল বেশ তরতাজা, নাদুস নুদুস এবং তরুণ বয়সের। তারুণ্য সবসময়ই নিজের ভেতর শক্তি সামর্থ আর অপরাজেয় একটা মানসিকতার জন্ম দেয়। যেন ওই মানসিকতা দিয়ে সমগ্র পৃথিবী জয় করে ফেলতে পারবে। এই মানসিকতা যৌবনে জন্ম দেয় অহংকারের। ছোট বড় কোনো কিছুই যেন তারুণ্যের কাছে সমস্যা নয়। সবকিছুই তার কাছে ছোট্ট বলে মনে করতে ইচ্ছে হয়। তরুণ ইঁদুরটিও সবসময় ভাবত বিশ্বের যতো ইঁদুর আছে সবার চেয়ে সে-ই বেশি শক্তিশালী এবং সবার চেয়ে বেশি চালাক। এরকম অহংকারে অন্ধ হয়ে পড়ার কারণে তার বিবেক ঠিকমতো কাজ করত না।

তরুণ ইঁদুর মনের সুখে শিস দিয়ে গান গাইতে গাইতে যাচ্ছিল। যেতে যেতে রাস্তার পাশে দেখলো একটা উট সবুজ ঘাসের মাঝে বিচরণ করছে। ইঁদুর মনে মনে ভাবল: উটটাকে চুরি করলে কেমন হয়...! ভাবতেই সে তো খুশিতে বাগবাগ..। বাহ্‌! পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ইঁদুর আজ মরু জাহাজ খ্যাত উট চুরি করবে! কেমন মজা হবে! আইডিয়াটা ভীষণ ভালো লাগল তার। ফুরফুরে একটা আনন্দের আমেজ যেন তার ভেতরে খেলে গেল।

সামনে এগিয়ে গিয়ে ইঁদুর উটের লাগাম ধরে টানতে লাগল। মজার ব্যাপার হলো উট কোনোরকম প্রতিবাদ করল না। ইঁদুর তার লাগাম ধরে টান দেওয়াতে ভীষণ কৌতুক বোধ হলো তার। মজা পেল উট। কৌতূহলও হলো তার। সেজন্যে ইঁদুরের পেছনে পেছনে যেতে শুরু করলো সেও।

বিশাল উটের লাগাম পিচ্চি একটা ইঁদুরের নিয়ন্ত্রণে। ইঁদুর সামনে সামনে যাচ্ছে আর পেছনে উট যাচ্ছে জাবর কাটতে কাটতে। কী এক হাস্যকর দৃশ্য। উট ভালো করেই খেয়ে দেয়ে একেবারে পেট ভরিয়ে নিয়েছে। সেজন্যে সে ছিল নিশ্চিন্ত এবং প্রফুল্ল, তার মাঝে কোনো টেনশনই কাজ করছে না। এ কারণে ভাববারও চেষ্টা করেনি ইঁদুর কী করতে চায়, কোথায় নিয়ে যেতে চায়।

ইঁদুরের হাতে উটের লাগাম। উট যাচ্ছে ইঁদুরের পিছে পিছে। এই দৃশ্য দেখে ইঁদুর মনে মনে ভাবছে, বেশ মজা তো! উট তো তার কমান্ড ফলো করছে। কমান্ডারের মতোই একটা ভাবসাব এসে গেল ইঁদুরের ভেতর। যেন হাওয়ায় ভাসতে লাগল সে। মনে মনে বলল: ‘আজ পর্যন্ত কেউ কি দেখেছে আমার মতো ক্ষুদ্রকায় একটা ইঁদুর বৃহদাকার উটের লাগাম টেনে নিয়ে যেতে? আমি আসলেই শক্তিশালী। পৃথিবীর বুকে আমিই সবচেয়ে শক্তিশালী, চালাক এবং বিচক্ষণ ইঁদুর’।

হ্যাঁ, অহংকারী ক্ষুদ্র ইঁদুরের হাতে উটের লাগাম। সামনে যাচ্ছে ইঁদুর, পেছনে যাচ্ছে উট। যেন ইঁদুর হলো উটের নেতা। এভাবে যেতে যেতে হঠাৎ সামনে পড়ল বড়ো একটা খাল। খালের তীরে যেতেই ইঁদুর থমকে দাঁড়িয়ে গেল। খালের পানিতে ভীষণ ঢেউ এলোমেলো উচ্ছল। বিস্ময়ের সাথে ইঁদুর ঢেউয়ের দিকে তাকিয়েই থাকল।  

উট ইঁদুরকে থমকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে মনে মনে হাসল। ইঁদুরকে বলল: ‘কী হলো! পেরেশান মনে হচ্ছে...? বীরের মতো সামনে এগিয়ে যাও! ভয় পাচ্ছো কেন? তুমি তো আমার চেয়ে অগ্রগামী, যাও সামনে এগিয়ে যাও...’!

ইঁদুর উটের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেল। বুঝে উঠতে পারছিল না কী জবাব দেবে। শেষ পর্যন্ত মাথাটা উপরে তুলে বলল: ‘খালে তো প্রচুর পানি, বেশ গভীর মনে হয়। ভয় পাচ্ছি ডুবে না যাই আবার’!

উট হাসতে হাসতে বলল: ‘এই সামান্য পানির ছোট্ট একটা খাল পার হতে এতো ভয় পাচ্ছো’? তুমি না কতো শক্তিশালী? একটা বিশাল উটকে নিজের পেছনে পেছনে টেনে আনার মতো ক্ষমতাশালী? তাহলে ছোট্ট একটা পানির নহর পার হতে এতো ভয় পাচ্ছো কেন? চল’!

ইঁদুর চুপচাপ। উট বলল: ‘ঠিক আছে, আমি বরং আগে পানিতে নেমে দেখি কতটুকু গভীর-বেশি নাকি কম’।

এ বলেই উট পানিতে নেমে গেল। একটু গভীরে গিয়ে দাঁড়ানোর পর দেখা গেল মাত্র উটের হাঁটু পর্যন্ত পানি, বেশি না। উট ইঁদুরকে লক্ষ্য করে বলল: ‘দেখেছো হে প্রিয় ইঁদুর আমার! ভয়ের কোনো কিছু নেই। পানি তো মাত্র আমার হাঁটু পরিমাণ। চলে আসো, পানি পার হয়ে যাই! একদম ভয় করো না’।

ইঁদুর এবার বিস্ময়ের সাথে উটের দিকে তাকিয়ে বলল: ‘তুমি কি বুঝতে পারছো কী বলছো? তোমার হাঁটুর উপরে পানি। তার মানে কী বোঝো না তুমি?’

উট আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল: না তো, কী, বুঝতে পারছি না তার মানে কী?

ইঁদুর লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে বলল: উটের হাঁটু আর ইঁদুরের হাঁটুর মাঝে বিস্তর ফারাক আছে...’।

উট ছোট্ট ইঁদুরের কথা শুনে হাসল। ইঁদুর দেখল সত্যিই সে খাল পার হতে পারবে না। বুঝতে পেরেছিল পানি পার হবার চেষ্টা করার মানে হলো নির্ঘাত্ ডুবে মরা। তাই ইঁদুর শুরু করে দিল অনুনয় বিনয়। উটকে অনুরোধ করল যাতে সে তাকে খালটি পার হতে সাহায্য করে। উট বেচারা খুবই দয়ালু এবং উপকারী একটা প্রাণী। সে ইঁদুরের অনুনয় বিনয় আর অনুরোধ শুনে আ..র কঠোর হতে পারল না। ইঁদুরের করুণ অবস্থা দেখে তার অন্তরটা গলে গেল। ইঁদুরকে তাই বলল: ‘ঠিকাছে! আমার পিঠে উঠে বস’!

উট ইঁদুরকে খাল পার করিয়ে দিল। তারপর তাকে কিছু উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করল। বলল: ‘অযথা অহংকার করে লাভ নেই। যে কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই সে কাজে হাত না দেওয়াই ভালো’।

উটের কথাগুলো শুনে ইঁদুর লজ্জায় মাথা নীচু করে রাখল।

বন্ধুরা, অহংকারী ইঁদুরের গল্পটি শুনলে। এবার আমরা এক অহংকারী ব্যাঙকে নিয়ে কবি সুকুমার রায়ের লেখা একটি কবিতা শুনব। 'বড়াই' শিরোনামের কবিতাটি আবৃত্তি করেছে তৃষাগ্নি মন্ডল।  

কবিতাটি শুনলে। বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে রয়ে গর্ব-অহংকার নিয়ে সত্য সাহার লেখা একটি গান।  

গর্ব-অহংকার সম্পর্কে বাংলাদেশি একঝাঁক ছোট্টবন্ধুর কণ্ঠে গানটি শুনলে। আশা করি তোমাদের ভালো লেগেছে। তো বন্ধুরা,  অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে তোমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার এক নতুন বন্ধুকে।

আজকের আসরে অংশ নেওয়ার জন্য সোহেল মুরাদ স্নিগ্ধ তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আর শিশু-কিশোর বন্ধুরা, তোমরা ভালো ও সুস্থ থেকো এ কামনা করে গুটিয়ে নিচ্ছি রংধনুর আজকের আসর।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৬