মার্চ ০৩, ২০২২ ১৬:৫৩ Asia/Dhaka

পবিত্র কুরআনের তাফসির বিষয়ক অনুষ্ঠানের 'কুরআনের আলো'র সূরা ক্বাফ'এর সংক্ষিপ্ত তাফসির সম্পর্কে জানব। মক্কায় অবতীর্ণ এই সূরার মূল বিষয়বস্তু পরকাল সংঘটনের প্রমাণসমূহ, ভালো ও মন্দ মানুষের পরিণাম এবং অতীত জাতিগুলোর কাহিনী থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা। এই সূরার ৯ থেকে ১১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

وَنَزَّلۡنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ مُّبَٰرَكٗا فَأَنۢبَتۡنَا بِهِۦ جَنَّٰتٖ وَحَبَّ ٱلۡحَصِيدِ (9) وَٱلنَّخۡلَ بَاسِقَٰتٖ لَّهَا طَلۡعٞ نَّضِيدٞ (10) رِّزۡقٗا لِّلۡعِبَادِۖ وَأَحۡيَيۡنَا بِهِۦ بَلۡدَةٗ مَّيۡتٗاۚ كَذَٰلِكَ ٱلۡخُرُوجُ (11)

“আর আমি আসমান থেকে বরকতময় পানি নাযিল করেছি। অতঃপর তা দ্বারা আমি উৎপন্ন করি বাগ-বাগিচা ও কর্তনযোগ্য শস্যদানা।” (৫০:৯)

“আরও [উৎপন্ন করি] সমুন্নত খেজুরগাছ, যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর ছড়া।”  (৫০:১০)

“[আমার] বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ। আর বৃষ্টি দ্বারা আমি সঞ্জীবিত করি মৃত ভূমিকে, এভাবে পুনরুত্থান [বা কবর থেকে মানুষের বেরিয়ে আসার ঘটনা] ঘটবে।” (৫০:১১)

আগের আসরের আলোচনার সূত্র ধরে এই আয়াতগুলোতে মানুষের পরকালীন জীবনের সঙ্গে পৃথিবীতে নতুন নতুন গাছপালা গজানোর তুলনা করা হয়েছে। শুকনো মাটিতে থাকা নিষ্প্রাণ শষ্য বীজ আকাশ থেকে পানি বর্ষিত হওয়ার ফলে জীবিত হয়ে ওঠে এবং গাছের চারায় পরিণত হয়। এরপর যখন এই চারাগাছ শষ্যদানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে তখন কৃষক তা কেটে ঘরে তোলে। বহু গাছের পাতাও শীতকালে ঝরে যায়। তখন পাতাশূন্য গাছগুলিকে মৃত বলে মনে হয়। কিন্তু বসন্তে আবার এসব গাছে প্রাণ ফিরে আসে। শুকিয়ে যাওয়া মরা ডালগুলিতে আবার পাতা গজায় এবং ফল ধরে। এরপর পবিত্র কুরআনে বলা হচ্ছে: কিয়ামতের দিন মানুষের পুনরুজ্জীবন ঠিক এভাবেই হবে। মাটির মধ্যে ছড়িয়ে পড়া মানুষের দেহাবশেষ একত্রিত হয়ে চারাগাছের মতোই জীবিত মানুষ হয়ে মাটি ভেদ করে বেরিয়ে আসবে। এই কাজ অসীম ক্ষমতাধর আল্লাহর জন্য বিন্দুমাত্র কঠিন নয়।

এই তিন আয়াতের কয়েকটি শিক্ষণীয় বিষয় হলো:

‌১- বৃষ্টি হচ্ছে এমন এক নেয়ামত যার ওপর পৃথিবীর সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবন নির্ভর করে।

২- পৃথিবীতে যত রকম উদ্ভিদ আছে তার মধ্যে খেজুর গাছের মর্যাদা স্বতন্ত্র। কারণ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে খেজুর গাছ ও খেজুর উভয়ের কথা আলাদাভাবে বর্ণনা করেছেন।

৩- তরুলতা ও উদ্ভিদ একদিকে দেখতে সুন্দর অন্যদিকে তা মানুষের রিজিকের উৎস। সেইসঙ্গে মানুষের পুনরুজ্জীবনের উদাহরণও আল্লাহ এর মাঝে রেখে দিয়েছেন। চিন্তাশক্তির অধিকারী যে কারো জন্য এতে শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।

সূরা ক্বাফ 'এর  ১২ থেকে ১৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:

كَذَّبَتۡ قَبۡلَهُمۡ قَوۡمُ نُوحٖ وَأَصۡحَٰبُ ٱلرَّسِّ وَثَمُودُ (12) وَعَادٞ وَفِرۡعَوۡنُ وَإِخۡوَٰنُ لُوطٖ (13) وَأَصۡحَٰبُ ٱلۡأَيۡكَةِ وَقَوۡمُ تُبَّعٖۚ كُلّٞ كَذَّبَ ٱلرُّسُلَ فَحَقَّ وَعِيدِ (14)

“[হে রাসূল!] তাদের আগেও [নবীদের ওপর] মিথ্যারোপ করেছিল নূহের সম্প্রদায়, রাস্ এর অধিবাসী ও সামুদ সম্প্রদায়।”(৫০:১২)

‘আর আদ, ফিরআউন ও লুতের সম্প্রদায়।” (৫০:১৩)

“আর আইকার অধিবাসী [শুয়াইবের জাতি] ও তুব্বা সম্প্রদায়; তারা সকলেই রাসূলগণের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল, ফলে তাদের উপর আমার আজাবের প্রতিশ্রুতি যথার্থভাবে আপতিত হয়েছে।”(৫০:১৪)

এই তিন আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল ও ঈমানদার ব্যক্তিদের সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন, আপনারা ভাববেন না যে, শুধুমাত্র মক্কার কাফিররাই সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে বরং হযরত নূহ (আ.) থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বহু নবী-রাসূলের কথা তাদের সম্প্রদায় গ্রহণ করেনি।

তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করার পরিণাম ছিল ভয়াবহ। তাদের কোনো কোনো জাতিকে নানাভাবে আল্লাহ তায়ালা শাস্তি দিয়েছেন। কোনো জাতি ভয়াবহ ঝড়-তুফানে, কোনো জাতি প্রবল বজ্রপাতে আবার কোনো জাতি ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গেছে।

এই তিন আয়াতের শিক্ষণীয় কয়েকটি দিক হলো:

১- যে আল্লাহ তায়ালা গোটা বিশ্বজগত ও মানুষ সৃষ্টি করেছেন তিনিই নবী রাসূলগণের মাধ্যমে মানুষকে হেদায়েতের পথও দেখিয়ে দিয়েছেন যাতে মানুষ পূর্ণতায় পৌঁছাতে পারে। তবে একইসঙ্গে একথাও বলতে হয়, ধর্ম গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক নয় বরং মানুষ তার বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে নিজের চলার পথ ও ধর্ম বেছে নিতে পারে। পাশাপাশি কেউ বুঝেশুনে ইসলাম গ্রহণ করার পর এই ধর্ম ত্যাগ করার অনুমতি রাখে না।

২- অতীত জাতিগুলো তাদের কাছে প্রেরিত নবী-রাসূলগণের দাওয়াতের বাণী কবুল করেনি বলে ঐশী আজাবের সম্মুখীন হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সকলের জন্য রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।

সূরা ক্বাফ 'এর  ১৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:

أَفَعَيِينَا بِٱلۡخَلۡقِ ٱلۡأَوَّلِۚ بَلۡ هُمۡ فِي لَبۡسٖ مِّنۡ خَلۡقٖ جَدِيدٖ (15)

 “আমি কি প্রথমবার সৃষ্টি করেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি! [যে কিয়ামত দিবসে আরেকবার সৃষ্টি করতে পারব না?] [কখনওই নয়] বরং নতুন সৃষ্টির বিষয়ে তারা সন্দেহে পতিত।” (৫০:১৫)

বিশ্বে বহু কাফির ও মুশরিক আছে যারা বিশ্বজগত ও মানুষের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহ তায়ালাকে স্বীকার করে নেয়।কিন্তু তারা পুনরুত্থান দিবসে বিশ্বাস স্থাপন করতে রাজি নয়। এই আয়াতে এ ধরনের কাফির ও মুশরিকদের উদ্দেশ করে আল্লাহ তায়ালা প্রশ্ন করছেন: আমি কি প্রথমবার তোমাদের সৃষ্টি করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি যে, আরেকবার সৃষ্টি করতে পারব না? পবিত্র কুরআনের বহু স্থানে আল্লাহ তায়ালা কাফিরদের প্রতি এ ধরনের প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন। মূলত কাফিরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার লক্ষ্যে এ ধরনের প্রশ্ন করা হয়েছে।

এই আয়াতের কয়েকটি শিক্ষণীয় বিষয় হলো:

১- মৃত্যুর পর আল্লাহ তায়ালা আবার মানুষকে জীবিত করবেন বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাতে যারা অস্বীকার করে তাদের কাছে কোনো যুক্তি নেই। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে তারা এ বিষয়ে তর্ক করে।কারণ যিনি একবার সৃষ্টি করেন তার পক্ষে আরেকবার সৃষ্টি করা কঠিন কোনো কাজ নয়।

২- কাফিরদের সঙ্গে কথা বলার সময় তাদের প্রতি যুক্তিপূর্ণ প্রশ্ন ছেড়ে  দিতে হবে যাতে তারা ওই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সত্য খুঁজে পায় ও তা গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যায়।

৩- পরকালে অস্বীকারকারীদের সুনির্দিষ্ট কোনো যুক্তি নেই বরং তারা তাদের অন্তরের সংশয়কে অস্বীকার করার কারণ হিসেবে উপস্থাপন করে।#

পার্সটুডে/এমএমআই/আবুসাঈদ/ ০৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ