মার্চ ৩১, ২০২২ ২০:১৭ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা সেমনান প্রদেশের সুন্দর শহর "বাস্তম" পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। এই এলাকার গুণীজনদের মধ্যে অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র "বায়জিদ বাস্তমী" এবং তাঁর মাজার ও মাজার সংশ্লিষ্ট সাংস্কৃতিক বহু স্থাপনা নিয়ে কথা বলেছিলাম। বায়জিদ বাস্তমির মাজার কমপ্লেক্স এবং এ সংশ্লিষ্ট আরও বহু বিষয় নিয়ে কথা বলার অবকাশ রয়েছে।

বায়েজিদ বাস্তমির কবরের পাশে আরেকটি কবর রয়েছে যেখানে ইমাম জাফর সাদেক (আ) এর পুত্রকে দাফন করা হয়েছে বলে জানা যায়। তিনি বায়েজিদের সাথে জনগণের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এই এলাকায় আসেন, কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি তিনি মারা যান। তাঁর মাজারের নির্মাণ কাঠামো অনেকটা গাজান খান গম্বুজের সমাধির সাথে সাদৃশ্য বা বলা যেতে পারে প্রতিসাম্য রেখেই নির্মাণ করা হয়েছে। এর মূল ভবনটি নির্মাণ করেছিল গাজান খান। তবে হামাদ খোদাবান্দেহ ওলজাইতোর শাসনামলে এটি পুনর্নির্মিত হয়েছিল। যাই হোক বায়েজিদ বাস্তমির মাজার নিয়ে কথা হচ্ছিল আমাদের। হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দীর বিখ্যাত আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব বায়েজিদ বাস্তমির মাজারটি এই শহরে অবস্থানের কারণে বাস্তম শহর বিশ্বের সেরা আধ্যাত্মিক ও পর্যটন শহরে পরিণত হয়েছে।

বায়েজিদ বাস্তমির মাজারে পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য পৃথক পৃথক বিভাগ রাখা হয়েছে। পুরুষ অংশের বিল্ডিং সেলজুক আমলের মসজিদের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এতে চমৎকার প্লাস্টারিং এর কারুকাজ রয়েছে। কারুকাজগুলো জ্যামিতিক, উদ্ভিদ, ইসলামিক এবং চার পালক ফুলের ডিজাইনে করা। এসব নকশার মাঝখানে রয়েছে একটি মেহরাব। মেহরাবের উপরের অংশে সোলস এবং নাসতালিক অক্ষরের শিলালিপির কাজগুলো এক কথায় নয়নাভিরাম। ইলখানিদ ও কাজর যুগের নাস্তালিক দ্বারা সজ্জিত। মহিলা বিভাগে একটি দীর্ঘ এবং সরু হল এবং ছাদে সুন্দর বিছানা দেখা যায়। এই ক্যালিগ্রাফির কাজগুলো কাজার শাসনামল এবং ইলখানি শাসনামলের বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছে। নারীদের অংশও বড় একটা করিডোরের মতো। করিডোর বলার কারণ হলো এটি লম্বায় বড় হলেও প্রস্থে কম। তবে এর ছাদে অসম্ভব সুন্দর চকের কারুকাজ দৃষ্টি আকৃষ্ট করার মতো।

শাহরুদে "বায়জিদ বাস্তমী'র মাজার 

বায়েজিদ বাস্তমির মাজার স্থাপনার সবচেয়ে প্রাচীন অংশটি হলো সালজুক শাসনামলের ডিজাইনে তৈরি এর মিনার।  বাস্তম মসজিদের পূর্বদিকে মিনারটি স্থাপন করা হয়েছে। মিনারের নির্মাণকাল পাঁচ শ চৌদ্দ হিজরি। মিনারের একেবারে চূড়ায় ওঠার জন্য সাপের মতো পেঁচানো সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়ির শুরু থেকে একেবারে চূড়া পর্যন্ত ঘুলঘুলির মতো  ছিদ্র রয়েছে যার মধ্য দিয়ে সিঁড়ির ভেতরে প্রয়োজনীয় আলোর সরবরাহ হয়ে থাকে। মাটি থেকে ওই মিনারটির উচ্চতা সাড়ে চৌদ্দ মিটার। ইটের তৈরি ওই মিনার বায়েজিদ মসজিদের সঙ্গে গিয়ে মিলেছে। বাস্তম শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম সুন্দর একটি নিদর্শন হিসেবে পরিগণিত। মিনারের উপরের অংশটির একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেই বৈশিষ্ট্যের কথাটি লেখা আছে প্রাচীন একটি ছবির ক্যাপশনে। ক্যাপশনটি হলো: যারা মিনারের উপরে যায় এবং শক্তি প্রয়োগ করে নাড়া দেয় তারা মিনারটি নড়ে বলে উপলব্ধি করে। বায়েজিদ বাস্তমির মাজারের আঙ্গিনায় দাঁড়ালে ফিরোজা রঙের একটি গম্বুজ নজরে পড়বে। গাজান খান গম্বুজ নামে পরিচিত ওই গম্বুজটি পুরো কমপ্লেক্সকেই অনন্য সাধারণ সৌন্দর্য ও সৌকর্য দিয়েছে। গম্বুজের দক্ষিণ অংশ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করা যায়। ওই পথে কেউ ভেতরে গেলে অসাধারণ দৃশ্য দেখতে পাবে। এই স্থাপনাটি এখন প্রাচ্যের আধ্যাত্মিক মিউজিয়ামে পরিণত হয়েছে। বায়েজিদ বাস্তমির মাজার আর গাজান খান গম্বুজের মাঝে একটি ঝুলবারান্দা রয়েছে। টাইলস আর চকের কারুকাজে আকর্ষণীয় ওই বারান্দাটি পশ্চিম বারান্দা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। সাড়ে তের মিটার উঁচু ওই ঝুলবারান্দা মোহাম্মাদ হোসাইন দমগনির হাতে নির্মিত হয়েছে।

কশনে টাওয়ার বায়েজিদ বাস্তমি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। উচ্চতার দিক থেকে ইটের তৈরি ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম টাওয়ার এটি। প্রথমটি হলো কাবুস গম্বুজ। কশনেটাওয়ার ইরানের ঐতিহাসিক নিদর্শনের তালিকাভুক্ত হয়েছে। বায়েজিদ বাস্তমি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের অপর একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হলো শাহরুখিয়ে মাদ্রাসা। এটি একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। চমৎকার ডিজাইনে নির্মাণ করা হয়েছে মাদ্রাসা ভবনটি। দ্বিতল ভবনজুড়ে আঠাশটির মতো কক্ষ রয়েছে। ছাত্রদের শিক্ষা কার্যক্রমে এই কক্ষগুলো ব্যবহৃত হয়। এই ধর্মীয় শিক্ষালয়ে একটি মসজিদ, বারান্দা এবং ব্যায়ামাগারও রয়েছে। আপনারা বায়েজিদ বাস্তমি সম্পর্কে নিশ্চয়ই কমবেশি জানেন। বাংলাদেশ বা বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে বাস্তম শহরের নাম বোস্তাম নামে পরিচিত। অর্থাৎ বাংলাভাষীরা বায়েজিদ বোস্তামি নামে অভিহিত করেন এই আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বকে। স্বাভাবিকভাবেই ধর্মীয় এই মনীষীর মাজার জিয়ারত করার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা আসেন। সুতরাং এই শহরে যে দেশি-বিদেশি ভক্তকুলের ভিড় লেগে থাকবে তাতে আর অবাক হবার কী আছে!#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ৩১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ