এপ্রিল ০৫, ২০২২ ১৯:৫৫ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা সেমনান প্রদেশের সুন্দর শহর "বাস্তম" পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। এই এলাকার গুণীজনদের মধ্যে অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র "বায়জিদ বাস্তমী" এবং তাঁর মাজার ও মাজার সংশ্লিষ্ট সাংস্কৃতিক বহু স্থাপনা নিয়ে কথা বলেছি। আজকের আসরে আমরা শাহরুদেরই আরেক আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব শায়েখ আবুল হাসান খারাকনি'র মাজারের দিকে যাবো। এই মাজারটি শাহরুদ শহরের কাছেই 'খারকনে নও' নামক গ্রামে পড়েছে।

মাজার দেখার পর হাতে সময় থাকলে সেমনান প্রদেশের আরেকটি নামকরা শহর গার্ম্‌সর দেখতে যাবো। বন্ধুরা! আপনাদের জানিয়ে রাখা ভালো যে শাহরুদের আশেপাশে অনেক মাজার রয়েছে। এইসব মাজারের আধ্যাত্মিক মর্যাদার পাশাপাশি স্থাপত্যমূল্যও অপরিসীম। এই বিবেচনায় মাজারগুলো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়েছে। মহান ব্যক্তিত্ব, আলেম এবং আধ্যাত্মিক মনীষীদের মাজার হবার কারণে ধর্মীয় দিক থেকেও এগুলো যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও এখানকার উল্লেখযোগ্য একটি মাজার হলো শায়েখ আবুল হাসান খারাকনি'র মাজার।

বাস্তম থেকে তেইশ কিলোমিটার দূরে টিলার ওপর কাল-এ নৌ খারকন গ্রামে শায়েখ আবুল হাসান খারাকনি'র মাজারটি অবস্থিত। মাজারে একটি সাইনবোর্ড রয়েছে। ওই সাইনবোর্ডে শায়েখ আবুল হাসান খারকনি'র উক্তি লেখা রয়েছে। উক্তিটি হলো: এখানে যে-ই আসবে তাকে আপ্যায়ন করাবে! তাকে তার ঈমানের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে না!  যাকেই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তাদের জন্য আবুল হাসানের দস্তরখানে আপ্যায়নের ব্যবস্থা রয়েছে।

শায়েখ আবুল হাসান খারাকনি হিজরি চতুর্থ ও পঞ্চম শতকের একজন মহান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। ইরানি আধ্যাত্মিক মনীষীদের মাঝে তাঁর নামটিও উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বলে। বিশ্ব মানবতাবাদ ও মুক্তচিন্তার ক্ষেত্রে তার দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারা অনন্য। বিশ্বজনীন এই ইরানি মনীষী হিজরি চতুর্থ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এবং পঞ্চম শতকের প্রথমার্ধে শাহরুদের খারাকনে বসবাস করতেন। প্রায় এক হাজার বছর ধরে আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ববর্গসহ কবি, চিন্তাবিদ এবং গবেষকদের অধ্যয়ন ও গবেষণার বিষয়ে পরিণত হয়েছেন এই মনীষী। নামকরা এই পবিত্র আরেফ বায়েজিদ বাস্তমিকে তাঁর অনুসরণীয় নেতা বলে মনে করতেন। আবু সায়িদ আবুল খায়ের, আবু আলি সিনা এবং নাসের খসরুর মতো ব্যক্তিত্বরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। খাজা আবুল্লাহ আনসারির মতো ব্যক্তি তাঁর বিখ্যাত শাগরেদ মানে মুরিদ ছিলেন।

শায়েখ আবুল হাসান খারাকনির বিশেষ মর্যাদা সম্পর্কে। শেখ আবোলহাসান খারাকনি সেইসব মহান মনীষীদের একজন যারা ইরানের সংস্কৃতি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তবে সম্ভবত খুব কম লোকই এই মহান মনীষীর জীবন ও কর্মের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পেয়েছেন। ইরানের স্বনামখ্যাত এই মনীষী খারাকানির বর্তমান মাজার স্থাপনাটি মসজিদের পাশেই। ওই মসজিদে গম্বুজ ছিল। বেশ সুন্দর ডিজাইনে নির্মাণ করা হয়েছিল মসজিদটি। কিন্তু বর্তমানে মসজিদের কেবল মেহরাবটিই অবশিষ্ট রয়েছে। মেহরাবের ওপর চকের বিচিত্র কারুকাজ রয়েছে। রয়েছে এইলখানি আমলের ক্যালিগ্রাফিও। শায়েখ খারাকানির বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে।

একটি সবুজ শ্যামল বাগিচা পরিবেষ্টিত স্থানে মাজার স্থাপনাটি গড়ে তোলায় এখানে চমৎকার একটি পরিবেশ গড়ে উঠেছে। যারাই এই মাজারে যান তারা এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করেন। এখানে মানে শায়েখ খারাকানির পবিত্র মাজার জিয়ারত করতে সারা বছর ধরেই ভক্তরা আসেন। যেমন আসেন বায়েজিদ বাস্তমির মাজারেও। তো বন্ধুরা! যেমনটি ভূমিকাতেই বলেছিলাম সময় সুযোগমতো অন্য কোনো প্রাকৃতিক নিদর্শন দেখতে যাবো আমরা। চলুন তাহলে গার্ম্‌সরের দিকে যাওয়া যাক।

সেমনানের সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর একটি এই গার্ম্‌সর। মরুপ্রান্তিক এই অঞ্চলে বহু নিদর্শন আছে দেখার মতো। তবে আশকানি যুগের এই গার্ম্‌সর খুবই সুন্দর এবং আকর্ষণীয় একটি এলাকা। গার্ম্‌সরের পাশেই মরু এলাকা, দামাভান্দ পর্বতসহ বেশ কয়েকটি টিলাও রয়েছে। সুতরাং দর্শক কিংবা ভ্রমণকারীরা একের ভেতর অনেক নিদর্শনের সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ পাবেন। গার্ম্‌সর ভ্রমণে গেলে স্বাভাবিকভাবেই এ এলাকার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং রীতি-আচারের সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ হবে। অনেকেই গার্ম্‌সরকে "বহু গোত্রীয় দ্বীপ" বলে অভিহিত করে থাকেন। কারণ হলো এখানে বসবাস করে ইরানি তুর্কি, লোরি, কুর্দি, আরব এবং গিলাক।

স্বাভাবিকভাবেই এখানে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের প্রশান্ত সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায়। ঐতিহাসিক দিক থেকে প্রাচীন হবার কারণে এখানে অনেক মূল্যবান নিদর্শনও রয়েছে প্রচুর। গার্ম্‌সর শহরের কাভির ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত ঐতিহাসিক সিয়হকূহ কমপ্লেক্স ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর অন্যতম। এই কমপ্লেক্সটি এইনুর রাশিদ প্রাসাদ, শাহ আব্বাস প্রাসাদ এবং হারাম সারার সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। এই কমপ্লেক্সে, এলাকার মানুষের কাছে প্রাসাদ নামেই পরিচিত। এর ভেতরে অবশ্য শাহ আব্বাস প্রাসাদও রয়েছে যা ইরানি স্থাপত্য শৈলীর অন্যতম একটি নিদর্শন।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ০৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ