এপ্রিল ১৪, ২০২২ ১৪:৫৩ Asia/Dhaka

প্রেমময় রমজান আসমানি রমজান /আনে স্বস্তি আনে শান্তি অম্লান খোদায়ি এ বিধান /ধরণীরে করে মনোরম এ যে ধরণীর বুকে আসমানি মহতী উৎসব/মাধ্যম যার আত্মত্যাগ, নিষ্ঠা ও সংযম! রমজানের ছোঁয়ায় বিশ্ব-বিবেক হোক সততায় দুর্দম!/আত্মা হোক গরীব দুঃখীর সহমর্মিতায় সুরম্য, সজীব ও সরব।

পবিত্র রমজান মহান আল্লাহর অশেষ রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস। এ মাসে মুসলমানরা সবাই মহান আল্লাহর অতিথি। তবে মহান আল্লাহর এই ভোজ-সভার বৈশিষ্ট্য হল এখানে মেহমানকে বর্জনের বা পরিহারের উৎসবে অংশ নিয়ে মহান আল্লাহর অশেষ রহমত, বরকত ও মাগফিরাত অর্জন করতে হয়। এ উৎসব প্রবৃত্তি বা জৈবিক চাহিদাগুলোকে দমনের ও আত্মিক কলুষতাগুলোকে দূর করে পরিচ্ছন্ন আত্মার অধিকারী হওয়ার উৎসব। সাহারি ও ইফতারের সময় হরেক রকম বিলাসী খাদ্য খাওয়ার উৎসব নয় রমজান।

পবিত্র রমজানে আত্মশুদ্ধির যে চর্চা জোরালো করা উচিত তা হল সব বিষয়ে নিষ্ঠা অর্জনের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা। আমাদের সব কাজই যেন হয় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। মহান আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যদি হয় সততা ও নিষ্ঠাপূর্ণ তাহলে মানুষের সঙ্গে লেনদেনসহ অন্য সব বিষয়ে আমাদের জীবন হয়ে উঠবে নিষ্ঠায় পরিপূর্ণ।  আন্তরিকতাপূর্ণ ও নিষ্ঠাপূর্ণ দুই রাকাত নামাজ এ দুইয়ের অভাবযুক্ত হাজার রাকাত নামাজের চেয়েও উত্তম। মহান আল্লাহ ইবাদতের পরিমাণের চেয়ে ইবাদতের মানকেই বেশি গুরুত্ব দেন। একইভাবে বেশি বেশি দোয়া ও কুরআন তিলাওয়াত করতে গিয়ে আমরা যেন দোয়ার বিষয়বস্তু ও কুরআনের আয়াতের অর্থ নিয়ে চিন্তাভাবনা এবং মহান আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ মনোযোগ থেকে দুরে সরে না পড়ি।  ধর্মের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি যেন ভাসাভাসা বা অগভীর না হয়। এই যে এত বছর ধরে ধর্ম চর্চা করে এসেছেন এর মাধ্যমে আসলে খোদাপ্রেম ও আত্মশুদ্ধির কতটা গভীরে প্রবেশ করতে পেরেছেন তা ভেবে দেখুন। অর্থাৎ আত্মিক উন্নতির পথে সত্যিকারের অগ্রগতি হচ্ছে কি?

আমাদের নামাজ রোজা ও অন্য সব কাজ একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হচ্ছে কিনা আত্মশুদ্ধিকামী মুসলমানের উচিত তা ভেবে দেখা ও তা নিজেই যাচাই করা। রমজানে প্রত্যেক মুসলমানের এটা বোঝা উচিত যে তার বিবেকই যেন হয় তার পুলিশ। রুজি-রিজিক যদি হালাল না হয় তাহলে যত বেশি নামাজ রোজা ও হজ-জাকাতে বা দান-খয়রাতে মশগুল হন না কেন তা কোনো কাজেই আসবে না!

শয়তানের বহুমুখী ধোঁকা বা কুমন্ত্রণার ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য ইসলামী জ্ঞান চর্চা ও উপদেশের মজলিসে বসার কোনো বিকল্প নেই। শয়তান যুব বয়সীদের বলে : আরে তোমার বয়স তো এখনও অনেক কম! খোদাপ্রেম ও আত্মশুদ্ধি চর্চার জন্য এখনও অনেক সময় বাকি আছে! তার আগে ভোগ-বিলাসিতার স্বাদ যতটা পার নিয়ে নাও! অন্যদিকে যুব বয়স পার হয়ে গেলে শয়তান আত্মশুদ্ধির ব্যাপারে হতাশা সৃষ্টি করে বলে: আরে বাবা! ওইসব মহত মানুষদের মত হওয়ার চেষ্টা তোমার কাজ নয়! তুমি যদি পারতে তাহলে আরও কম বয়সেই পারতে! তাই এইসব চেষ্টা বাদ দিয়ে নিজের মতই থাকার চেষ্টা কর!

আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য মুমিন মুসলমানকে হতে হবে ইসলাম ও খোদাপ্রেম সম্পর্কে অধ্যবসায়ী ও চিন্তাশীল। প্রতিদিন কিছু সময় ব্যয় করা উচিত এ বিষয়ে আল্লাহর সঙ্গে মনের কথা খুলে বলতে! আল্লাহর পথে সাধনায় নিয়োজিত থাকলে নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আপনাকে পথ ও কৌশল শেখানোরও ব্যবস্থা করবেন এই বিশ্বাস বা ইমান আপনার থাকা উচিত। রমজান মাসে আপনার নফল ও ফরজ নামাজে সিজদাগুলো দীর্ঘ করুন খোদার সঙ্গে প্রেমময় সংলাপে নিয়োজিত হতে।

ইফতারির সময় দোয়া কবুল হওয়ার ভালো সময়। তাই এ সময় মহান আল্লাহর কাছে আপনার নেক বাসনাগুলোর কথা তুলে ধরুন। গভীর রাতে নফল নামাজ পড়ার চেয়ে ইসলামী জ্ঞান চর্চা করা বা চিন্তা করা অনেক বেশি কাম্য ও মহান আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়। তাই মহানবীর-সা হাদিসে বলা হয়েছে: বিছানায় বসে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি বা আলেম যদি চিন্তাশীলতায় মগ্ন হন তাহলে তা ৭০ বছরের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। আসুন আমরা প্রতিদিন পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত ও মহানবীর একটি হাদিস নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করি। অন্তত পবিত্র রমজানে চিন্তাশীলতার এই অভ্যাস গড়ে তুলি।

 নামাজে ও দোয়ায় যা বলছি তার অর্থ ও তাৎপর্য নিয়ে যেন আগেই চিন্তাভাবনা করি যাতে নামাজ ও দোয়াগুলো হয় আল্লাহর প্রতি অনুরাগ ও মনোযোগে পরিপূর্ণ। 

পবিত্র রমজানে আমাদের উচিত পরিবারের সব সদস্যসহ অন্য সবার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার ও মার্জিত আচরণের চেষ্টা করা। তাদের কারো সঙ্গে খারাপ বা কর্কশ আচরণ করা মানে আপনি মহান আল্লাহর এই বিশেষ মাসের ভোজসভা থেকে নিজেকে বের করে নিলেন।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ