এপ্রিল ১৪, ২০২২ ১৮:৫৯ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান 'স্বাস্থ্য কথার' আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা ভালো ও সুস্থ আছেন।

ক্যান্সার একটি ভয়াবহ ও দুরারোগ্য ব্যাধী। প্রথম পর্বের আলোচনার শেষ দিকে আমাদের অতিথি ক্লিনিকাল হেমাটোলজি বিশেষজ্ঞ ডা.মো. কামরুল হাসান ক্যান্সারের প্রকার নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তিনি বলছিলেন, মানবদেহে যতধরনের টিস্যু  আছে সবগুলোতে ক্যান্সার হতে পারে। যে টিস্যুতে ক্যান্সার তৈরি হয় সেই টিস্যুর নাম অনুযায়ী ক্যান্সারের নাম হয়ে থাকে।  ধরুন লিভারে ক্যান্সার হয়েছে। সেটি হবে লিভার ক্যান্সার। এভাবে জানা যায় প্রায় ২০০ শ'রও বেশি প্রকার ক্যান্সার রয়েছে। আর এ রোগে মৃত্যু হারও অনেক বেশি।

তো ক্যান্সার নিয়ে  আজ দ্বিতীয় পর্বে আমরা ক্যান্সারের প্রকার দিয়েই আলোচনা শুরু করব। কারণ প্রথম পর্বের আলোচনা অসমাপ্ত ছিল।

জনাব, ডা. মো. কামরুল হাসান, রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

ডা. কামরুল হাসান: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

রেডিও তেহরান: ডা. মো. কামরুল হাসান, আপনি প্রথম পর্বের শেষে বলছিলেন, যত প্রকার টিস্যু আছে মানবদেহে ততরকম ক্যান্সার হতে পারে। এ বিষয়ে গতপর্বের আলোচনার সূত্র ধরেই যদি আপনি বিস্তারিত আলোচনা করেন?

ডা. কামরুল হাসান: দেখুন, আমাদের শরীরে যে রক্ত তৈরি হয় সেটি অস্থিমজ্জাতে। আর অস্থিমজ্জায় যে সেলগুলো আছে সেখানে যদি ক্যান্সার হয় সেটাকে আমরা ব্লাড ক্যান্সার বলি। আবার ধরুন আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন- গালে, মুখে, চোয়ালের নিচে, বগলের নিচে কিংবা কুচকিতে যদি ক্যান্সার হয় তাহলে একে আমরা বলি লিম্ফোমা (Lym phom a)।

লিম্ফোমা হল, শরীরের জীবাণু প্রতিরোধ নেটওয়ার্কের এক ধরনের ক্যান্সার যা লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম নামে পরিচিত। এটি টি কোষ এবং বি কোষে (শ্বেত রক্তকণিকা) থেকে শুরু হয় যা ইমিউন সিস্টেমের কোষ। এই কোষগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে মানুষকে রোগ থেকে রক্ষা করতে কাজ করে।

আরেক ধরনের ক্যান্সার আছে- ধরুণ রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়  এবং শরীরের রক্তের সমতা যে কার্যক্রম তার সাথে অনেকগুলো সেল জড়িত তারমধ্যে একটি হচ্ছে প্লাজমা সেল P lasm a C e ll। প্লাজমা হলো রক্তের পরিষ্কার, খড়ের বর্ণের তরল অংশ যা লোহিত রক্ত কণিকা, অনুচক্রিকা এবং অন্যান্য সেলুলার উপাদানগুলি অপসারণে পথে থেকে যায়। এটি মানুষের রক্তের একক বৃহত্তম উপাদান যা প্রায় ৫৫ শতাংশ নিয়ে গঠিত এবং এতে জল, লবণ, এনজাইম, অ্যান্টিবডি এবং অন্যান্য প্রোটিন থাকে।

রেডিও তেহরান: ডা. কামরুল হাসান আপনি প্লাজমা সেলের কথা বলছিলেন, এই প্লাজমা সেল কী?

ডা.কামরুল হাসান: ( P lasm a C e ll) প্লাজমা হলো রক্তের পরিষ্কার, খড়ের বর্ণের তরল অংশ যা লোহিত রক্ত কণিকা, অনুচক্রিকা এবং অন্যান্য সেলুলার উপাদানগুলি অপসারণে পথে থেকে যায়। এটি মানুষের রক্তের একক বৃহত্তম উপাদান যা প্রায় ৫৫ শতাংশ নিয়ে গঠিত এবং এতে জল, লবণ, এনজাইম, অ্যান্টিবডি এবং অন্যান্য প্রোটিন থাকে।

প্লাজমা সেল শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। আর অ্যান্টিবডি রোগ জীবণু প্রতিরোধ করে। জীবাণুকে ধ্বংস করে দেয়। অ্যান্টিবডি যে সেলটি তৈরি করে সেটাকে বলে প্লাজমা সেল। আর এই প্লাজমা সেলে যদি ক্যান্সার হয় সেটাকে আমরা বলি মাল্টিপল মায়লোমা M u ltiple M yelom a.

রেডিও তেহরান: প্লাজমা সেলের ক্যান্সারকে মাল্টিপোল মায়ালামা বলে সেকথা আমরা জানলাম। আচ্ছা এরবাইরে রক্তের আরও কি কি ক্যান্সার হতে পারে ডা. কামরুল হাসান?

ডা.কামরুল হাসান: রক্তের কয়েকটি  উপাদান আছে। যেমন লোহিত কোণিকা, শ্বেত কণিকা অনুচক্রিকা। এখন যদি লোহিত কণিকাতে যদি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় তখন তাকে আমরা একটি নাম দেই। আবার যদি শ্বেত কণিকাতে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে তখন তাকে ক্রণিক মাইলয়েড বলি। এভাবে অনুচক্রিার হলে তার আরেকটি নাম আছে। আবার বোনম্যারো (Bone M a r row) যেটা দ্রুত বর্ধনশীল ক্যান্সার তার নাম ভিন্ন। লিউকেমিয়া (Leukemia) দ্রুত বর্ধনশীল এবং রোগীর অবস্থা দ্রুত অবনতি হতে থাকে। লিউকিমিয়া বা লিউকেমিয়া রক্ত বা অস্থিমজ্জার ক্যান্সার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর প্রধান লক্ষণ রক্তকণিকার, সাধারণত শ্বেত রক্তকণিকার অস্বাভাবিক সংখ্যাবৃদ্ধি। রোগটির নামই হয়েছে এর থেকে- লিউক~ অর্থাৎ সাদা, হিমো~ অর্থাৎ রক্ত।

তো ব্লাড ক্যান্সারের মধ্যে এভাবে নানা নাম আছে। এরবাইরের যেসব ক্যান্সার সেগুলো টিস্যু অনুযায়ী নামকরণ করা হয়ে থাকে। আর ক্রণিক লিউকিমিয়া যেটা সেটা শরীরের ভেতর দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে। রোগীর ব্লাড ক্যান্সার আছে সেটি নিজে বুঝতেও পারছে না।

শ্রোতাবন্ধুরা! ক্যান্সার বিশেষ করে ব্লাড ক্যান্সার নিয়ে আলোচনা শুনছিলেন। ফিরছি শিগগিরি, আমাদের সাথেই থাকুন।

রেডিও তেহরান: বিরতির আগে ডা. কামরুল হাসান আপনি বিভিন্ন রকমের ব্লাড ক্যান্সারের কথা বললেন। তো প্রায়ই আমরা শুনতে পাই মানুষের ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে। তো এই ব্লাড ক্যান্সার বা রক্ত ক্যান্সারটা কেন হয়?

ডা.কামরুল হাসান: চমৎকার প্রশ্ন করেছেন। দেখুন ব্লাড ক্যান্সার কেন হয় এর সঠিক কোনো উত্তর আসলে নেই। অন্যান্য ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।

রেডিও তেহরান: রক্ত ক্যান্সার কেন হয় তার সঠিক বা সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও বলা যায় না-সেক্ষেত্রে ডা. কামরুল হাসান-রক্ত ক্যান্সার যে হয়েছে সেটি কিভাবে বোঝা যাবে। অর্থাৎ এর লক্ষণগুলো কি?

ডা.কামরুল হাসান:  ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলো থেকে বোঝা যায় যে ব্লাডে কোন ধরণের ক্যান্সার হয়েছে। আমি অ্যাকিউট লিউকিমিয়া এবং ক্রণিক লিউকিমিয়ার কথা বলেছি। মাইলয়েড লিউকেমিয়ার কথাও বলেছি। ক্রণিক মাইলয়েড লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রেও রোগী বুঝতে পারে না। অন্য যেকোনো রোগ নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছেন। তখন ডা. পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে দিয়েছে। সে সময় হয়তো ধরা পড়লো তার ব্লাড ক্যান্সার আছে। অনেক সময় রোগীরা বলে থাকেন-আমার ওজন কমে যাচ্ছে। শরীর দূর্বল ও অবসাদ লাগে। কোনো কাজে শক্তি পাই না। আবার অনেকে বলেন যে আমার তলপেটের ভেতর একটা চাকার মতো মনে হয়। তখন আমরা বুঝতে পারি যে তার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে এবং তখন পরীক্ষা নিরীক্ষা করাই। অনেক সময় দেখা যায় শরীরের বিভিন্ন অংশে-গলায়, বগলে ফুলে আছে। রোগীরা এসে বলে থাকেন-অনেকদিন ধরে আমি খেয়াল করছি এই এই জায়গাগুলো ফুলে আছে, টিউমারের মতো হয়েছে। এগুলো দেখতে গুটি গুটি।

ডা.কামরুল হাসান ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করছিলেন-কিন্তু আজ আর আমাদের হাতে সময় না থাকায় আগামী সপ্তার আলোচনা এখান থেকেই আমরা শুরু করব। রেডিও তেহরানকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে আবারও অনেক ধন্যবাদ।

আর শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা, আগামী সপ্তায় ক্যান্সার নিয়ে আলোচনার তৃতীয় পর্বেও আমাদের সাথে থাকার  আগাম আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখছি। রক্ত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুল হাসানের-ক্যান্সার বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় নিশ্চয়ই আপনারা উপকৃত হবেন।

তো আপনারা সবাই সু্স্থ ও নিরাপদ থাকুন এই প্রত্যাশায় গুটিয়ে নিচ্ছি স্বাস্থ্যকথার আজকের আসর।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৪