আসমাউল হুসনা (পর্ব-৬৭)
সব সুন্দর নাম কেবলই মহান আল্লাহর। তাঁর এমনই দুই নাম হল জাহির ও বাতিন। জাহির অর্থ প্রকাশমান ও বাত্বিন অর্থ এর বিপরীত তথা অপ্রকাশমান।
পবিত্র কুরআনের ৫৭ নম্বর সুরা তথা সুরা আলহাদিদ-এ'র তিন নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে: তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান এবং তিনি সব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।
পবিত্র কুরআনের বিখ্যাত মুফাসসির মরহুম আল্লামা তাবাতাবায়ির মতে এই আয়াতে উল্লেখিত মহান আল্লাহর চার নাম তথা আউয়াল ( উচ্চারণটা আওয়াল নয় বরং আউ্ওয়াল্), আখির, জাহির ও বাত্বিন মহান আল্লাহ'র محیط মুহিইত্ব নামেরই উপশাখা। পরিবেষ্টনকারী অর্থে ব্যবহৃত মুহিইত্ব নামও মহান আল্লাহর শক্তি বিষয়ক নামগুলোর শাখা। মহান আল্লাহর শক্তি সব কিছুকে ঘিরে রেখেছে। মহান আল্লাহ অন্য সব কিছুর চেয়েও মানুষের বেশি কাছেই রয়েছেন ও বেশি প্রকাশমান এবং দেখার দিক থেকে ও বোঝার দিক থেকে অন্য সব কিছুর চেয়ে বেশি রহস্যময় ও গোপন ।
মহান আল্লাহ অসংখ্য নিদর্শনের মাধ্যমে জাহির বা প্রকাশমান। গোটা সৃষ্টি-জগত মহান আল্লাহর প্রভাব ও প্রকাশের নিদর্শন। সমস্ত জীবিকা বা রিজিক মহান আল্লাহর রাজ্জাক তথা রিজিকদাতা নামের প্রকাশ। সব কিছুর জীবন মহান আল্লাহর হাইয়্যু তথা জীবন্তকারী বা জীবনদাতা নামের প্রকাশ। আর তাদের মৃত্যু মহান আল্লাহর মুমিত বা মৃত্যুদানকারী নামের প্রকাশ। এভাবে অনেক কিছুই মহান আল্লাহকে জাহির বা প্রকাশ করছে। আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী-আ. বলেছেন, এমন কিছুই দেখিনি যার আগে ও পরে এবং যার সঙ্গে আল্লাহকে দেখিনি!
মহান আল্লাহ সব কিছুর চেয়ে বেশি প্রকাশমান। আল্লাহর মাধ্যমে সব কিছু প্রকাশ পায়। সব কিছুতেই রয়েছে আল্লাহর ক্ষমতা, প্রজ্ঞা বা হিকমাত ও মহত্ত্বের প্রকাশ। মহান আল্লাহই সব কিছু প্রকাশ করেন। এইসব প্রকাশমান বিষয়ের অনেক কিছুই মানুষকে বোঝার ক্ষমতাও দিয়েছেন মহান আল্লাহ। মহান আল্লাহ এমন এক জাহিরকারী বা প্রকাশক যার প্রকাশ করা কিছুকে কেউ গোপন করতে পারে না।
মহান আল্লাহ যা চান তা-ই প্রকাশ করেন এবং কোনো কিছুই আল্লাহর কাছে গোপন নেই এবং পরিচালনা বিষয়ক সব কিছুই রয়েছে মহান আল্লাহর কর্তৃত্বে। তাই আল্লাহর চেয়ে কোনো কিছুই বেশি প্রকাশমান নয়। মানুষ যেখানেই যাক না কেন সেখানেই মহান আল্লাহর শিল্প-নৈপুণ্য ও সৃষ্টিকে দেখতে পায় এবং মানুষ নিজেই মহান আল্লাহর ক্ষমতাসহ অনেক কিছুর নিদর্শন।
মহান আল্লাহর বাত্বিন নামের অর্থ গোপন থাকা। আমরা যা কিছুই দেখি তার রয়েছে বাহ্যিক ও গোপন দিক। ভূমির ওপর বা পৃথিবীতে আমরা যা কিছু দেখি তা প্রকাশ্য। আর যা ভূমির ভেতরে রয়েছে তা গোপন বা বাত্বিন। মানুষ এক সময় মায়ের গর্ভে ভ্রূণ অবস্থায় গোপন থাকে। অন্য কথায় যা কিছু বোঝা যায় তা জাহির ও যা অনুভব করা যায় না তা গোপন বা বাত্বিন।
মহান আল্লাহ'র সত্ত্বা অসীম এক বিষয় যা সীমিত বুদ্ধি দিয়ে বোঝা যায় না। আর এ জন্য মহান আল্লাহকে বাত্বিন বলা হয়। মহান আল্লাহ তো দূরের কথা মানুষ তার প্রাণ ও আত্মার স্বরূপও জানতে পারেনি। মহান আল্লাহর সত্ত্বার স্বরূপকে বোঝা সম্ভব নয় বলেই তাঁকে বলা হয় বাত্বিন বা গোপন। অন্যদিকে মহান আল্লাহ বিশ্বের সব কিছু ও সব সৃষ্টির গোপন বিষয় সম্পর্কেও জানেন বলে এ কারণেও তাঁকে বাত্বিন বলা হয়। আমাদের অন্তরে যেসব কল্পনা ভেসে ওঠে সেসবও আল্লাহ জানেন। তিনি জানেন পাহাড়ের গভীরে ও সাগরের গভীরে কি কি আছে। মহান আল্লাহই এসব কিছুর পরিচালক।
মহান আল্লাহর জাহির নামের আলো দিয়ে মুমিন তার অন্তরের ও বাইরের চোখকে আলোকিত করেন। তিনি যা কিছুই দেখেন তাতেই মহান আল্লাহর একত্ববাদের নিদর্শন দেখেন। আর মহান আল্লাহর বাত্বিন নাম সম্পর্কে সচেতন মুমিন নিজ প্রবৃত্তিকে রাখেন বিনম্র ও খোদা-সচেতন। তিনি জানেন যে মহান আল্লাহ তার গোপনীয় সব কিছুই জানেন এবং মহান আল্লাহর অশেষ দয়ার কারণেই তার ভেতর ও বাইরের দিক সুস্থ এবং সুন্দর রয়েছে।
মানুষের বাইরের দিক যেমন মহান আল্লাহর আলোয় আলোকিত হয় তেমনি ভেতরটাও হয় মহান আল্লাহর রহস্যের অন্যতম খনি। মানুষ নিজেই আল্লাহর বাত্বিন নামের অন্যতম বড় প্রকাশ। কারণ মানুষের আত্মাসহ তার অজস্র বিষয় এখনও বিজ্ঞানীদের অজানা রয়ে গেছে। মানুষের শরীর বা দেহ মহান আল্লাহর জাহির নামের আলোর প্রকাশ আর তার আত্মা মহান আল্লাহর বাত্বিন নামের আলোর প্রকাশ।
পবিত্র কুরআনেরও রয়েছে বাহ্যিক ও গোপন নানা দিক। কুরআনের বাক্যগুলোর সরল অর্থ আরবি ভাষায় বিজ্ঞ সবাই বুঝতে পারে। কিন্তু কুরআনের আয়াতের বাত্বিন বা সুপ্ত বা গভীর অর্থগুলো জানার জন্য কেবল আরবি ভাষার জ্ঞানই যথেষ্ট নয়। এ জন্যই মরহুম ইমাম খোমেনি বলেছেন, কুরআনের জাহিরি ও বাত্বিনি দিক থাকার অর্থ হল কাউকে কুরআনের আয়াতের গভীর অর্থের মাধ্যমে ও কাউকে বাহ্যিক অর্থের মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে।#
পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ২৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।