জুন ১৮, ২০২২ ১৮:২৯ Asia/Dhaka

আজকের আসরে আমরা রামিয়ান শহরের দিকে যাবার চেষ্টা করবো। রমিয়ন শহর পূর্ব আলবোর্জের পাহাড়গুলোর অন্তরে অবস্থান করছে।

এতই মনোমুগ্ধকর এই শহরের দৃশ্যগুলো যে পর্যটকগণ রমিয়নের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে পারেন না। এখানকার প্রাকৃতিক ঝরনা ও ফোয়ারাসহ অসংখ্য প্রবহমান ধারার পাশাপাশি রয়েছে সবুজ জঙ্গল আর বন-বনানী। বেশ পুরণো এই শহরের পাশ দিয়ে কেউ গেলে নয়নাভিরাম ওইসব দৃশ্য তার মন কেড়ে নেয় নিমেষেই।

রামিয়ান ছিল অভিজাত আশকানি রাজবংশের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী। তাদের রাজা-বাদশাগণ অবকাশ যাপনের জন্য এই শহরকে বেছে নিয়েছিলেন। এখানকার বন-জঙ্গল ও পাহাড়-পর্বতে খননকাজ চালিয়ে যেসব নিদর্শন আবিষ্কার করা হয়েছে সেইসব নিদর্শনসহ শহরের অপরাপর ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো বিশ্লেষণ করলে ওই দাবির সত্যতা প্রামাণ্য হয়ে ওঠে।

রামিয়ান শহরটি বিস্ময়কর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় বহু স্থাপনার জন্য বিখ্যাত। এসবের কারণ ছাড়াও রমিয়ন শহরটির কেন্দ্রস্থল ভ্রমণের জন্য একটি ভাল জায়গা। রমিয়ন নামটির সঙ্গে রেশম বস্ত্রের বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। রমিয়নবাসীদের নিজস্ব হস্তশিল্পের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিশিষ্ট হল সিল্কের কাজ। এখানকার স্থানীয় সিল্ক সামগ্রী কেবল এই শহরের বা প্রদেশেই নয় বরং সমগ্র ইরানেও বিখ্যাত। মধু চাষও রমিয়নদের একটি প্রাচীন পেশা। রমিয়ন শহরের আশেপাশের সমভূমি ও বনভূমি মৌমাছি পালন এবং মধু উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। গুণ ও মানের দিক থেকেও এ অঞ্চলের মধুর বেশ সুনাম রয়েছে। তবে সবকিছুর উর্ধ্বে রমিয়ন প্রাকৃতিক আকর্ষণের জন্য বিখ্যাত। রমিয়ন শহরের পর্যটন আকর্ষণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির নাম করা যেতে পারে। মিরান দুর্গের কথা প্রথমেই আসতে পারে। তারপরই আসবে স্বপ্নময় ছবির মতো গোলে রমিয়ন প্রাকৃতিক পুলের কথা এবং কয়েকটি জলপ্রপাতের নাম।

অন্তত বারোটি উঁচু জলপ্রপাত রয়েছে এই রমিয়ন শহরে। সবচেয়ে উঁচু জলপ্রপাতটির উচ্চতা বত্রিশ মিটার। আর সবচেয়ে ছোট্ট প্রপাতটির উচ্চতা আট মিটার। পাশমাকি জলপ্রপাত কমপ্লেক্স, নীলবার্গ ঝরনা, আনজির ঝরনা, আলাং দাররেহ পার্বত্য অঞ্চল, পাকেল্লা পর্যটন গ্রাম, মালা উপত্যকা জঙ্গল, নাকারেখানা ঐতিহাসিক টীলা, দেলান্দ ফরেস্ট পার্ক, সার্ভ জারবিন আন্তর্জাতিক অভয়ারণ্য, বিবি হালিমা খাতুনের পবিত্র সমাধি এবং রমিয়ন নৃতাত্ত্বিক যাদুঘরের নাম না বললেই নয়।

নি:সন্দেহে গোলেস্তান প্রদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় এবং নজিরবিহীন একটি নিদর্শন হলো 'চেশমে গোলে রমিয়ন' ফোয়ারা বা ঝরনা। রমিয়ন শহরের পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে 'পেনহান খনে' পার্বত্য উপত্যকায় চেশমে গোল অবস্থিত। চেশমে গোলের তিন দিকেই রয়েছে সবুজ বন-বনানী আর একদিকে কৃষি খামার। তুর্কি ভাষায় 'গোল' শব্দের অর্থ গভীর গর্তময় এলাকা যেখানে পানি জমে থাকে। বলা হয়ে থাকে যে একইভাবে গোল শব্দের মাধ্যমে প্রশান্ত এবং ফুটন্ত ফোয়ারাও বোঝানো হয়। গোলে রমিয়ন ফোয়ারাটি চুনাপাথরের। এর সুনির্দিষ্ট গভীরতা প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে মনে করা হয়। তবে এর আনুমানিক আয়তন প্রায় পাঁচ হাজার ছয় শ আটান্ন বর্গ মিটার। এই ফোয়ারার জল মাটি ফুঁড়ে বের হয়। অনেক  গভীরতার কারণে এর রঙ গাঢ় সবুজ।

এই ফোয়ারাটি একটি প্রাকৃতিক পুকুরের মতো এবং ডিম্বাকৃতি। পুকুরটির দৈর্ঘ্য নব্বুই মিটার এবং প্রস্থে আশি মিটার। ঐতিহাসিক বিভিন্ন তথ্যানুসারে এর গভীরতা চুয়াল্লিশ মিটার। আরেকটি বর্ণনা অনুসারে আশি মিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই ফোয়ারাটি তিন শ বিশ মিটার উপরে অবস্থিত। চেশমে গোল ফোয়ারার চারপাশ বিচিত্র গাছপালা আর লতা গুল্মে ভরা। গোলে রমিয়ন ফোয়ারার স্বচ্ছ পানি নিরন্তর পতিত হয়ে 'কোররেচয়ি' নদীতে গিয়ে মিলিত হয়। ওই নদীর পানি দিয়েই আশেপাশের কৃষি জমিতে সেচ কাজ করা হয়। রমিয়ন ফোয়ারার পানি যে খালের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় সেখানে  রয়েছে নানা জাতের মাছ। 'সেফিদ মহি' মানে বাংলাদেশের মৃগেল মাছের মতো দেখতে এক ধরনের সুস্বাদু মাছ এলাকার মানুষের খুবই প্রিয়। ওই শ্রেণীর মাছ এখানে প্রচুর পাওয়া যায়। স্থানীয়া ব্যক্তিগতভাবে এই মাছ ব্যাপকভাবে শিকার করে নিজেদের প্রয়োজন মেটায়।

এখানে মোরান দূর্গ বা "মিরান দুর্গ" নামে আরেকটি অনন্য স্থাপনা রয়েছে। এর সৌন্দর্য প্রত্যেক দর্শককে অবাক করে। মিরান দুর্গ রমিয়ন শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে দুই হাজার চার শ মিটার উচ্চতায় একটি পর্বত চূড়ায় অবস্থিত। কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন এই দুর্গটি তিন বর্গকিলোমিটার ভূমির উপর নির্মিত হয়েছে। কেউ কেউ দাবি করেন যে মিরান দুর্গ ছিল আশকানিয়ানদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী। তিরদাদ এটি নির্মাণ করেছেন এবং গ্রীক দারিয়ুন দারাকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল।

এই দূর্গের উপরে এবং এর ঢালে রয়েছে বিচিত্র গাছপালা। জঙ্গলের মতো এই বনানীতে বসবাস করে বুনো ঘোড়া, বাঘ, হরিণ, ভাল্লুক, নেকড়ে, বাজপাখি, ঈগল এবং পেঁচার মতো বহু পশুপাখি। মোরান দুর্গের কাছে প'কেল্লা নামে একটি পাহাড়ি গ্রামও রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বারো শ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ওই গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে বছরের বিভিন্ন ঋতুতে বহু পর্যটক ভীড় করেন।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ০৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ