জুন ২১, ২০২২ ১৭:৫৬ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা! আজ ২১ জুন মঙ্গলবারের কথাবার্তার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ দুটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • ভেতর-বাহির-কুসিক নির্বাচনে ব্যর্থ হলো সরকারের ‘ইভ্যালি কৌশল’-মানবজমিন
  • ‘মানুষের বিপদে দাম বাড়ানো ভালা না, কে বুঝাইত তারারে?’-প্রথম আলো
  • নাসিরনগরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র-ইত্তেফাক
  • ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি বিএনপিসহ যেসব রাজনৈতিক দল-যুগান্তর
  • ত্রাণপণ্যের আকাশছোঁয়া দাম, সিলেটে ‘সুযোগে অসৎ ব্যবহার’-কালের কণ্ঠ
  • যবিপ্রবিতে ওমিক্রনের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত-বাংলাদেশ প্রতিদিন

ভারতের শিরোনাম:

  • ৪-৫ বছর পর বদলে যাবে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পে নিয়োগ প্রক্রিয়া! ইঙ্গিত সেনার উপপ্রধানের-সংবাদ প্রতিদিন
  • অসমের বন্যায় মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৮০, ভারী বৃষ্টির সতর্কতা গুয়াহাটিতে -আজকাল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে যশবন্ত বিরোধী জোটের সর্বসম্মত প্রার্থী, সিদ্ধান্ত ১৮ দলের বৈঠকে-আনন্দবাজার পত্রিকা

শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু'টি খবরের বিশ্লেষণে যাচ্ছি- 

জনাব সিরাজুল ইসলাম কথাবার্তার বিশ্লেষণে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

১. সেনাবাহিনীকে দিয়ে ত্রাণ তৎপরতা চালাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়েছেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কেন এই আহ্বান?

২. ইহুদিবাদী ইসরাইল কিছু আরব দেশকে নিয়ে একটি সামরিক জোট গঠনের চেষ্টা করছে- এমন একটি খবর গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর:

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণের বিষয়ে মতামত নিতে দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চালিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি। তারই অংশ হিসেবে আজ (মঙ্গলবার) দ্বিতীয় ধাপে ৮টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে কমিশন।

রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ইসির সম্মেলন কক্ষে বিকাল ৩টায় এ বৈঠক শুরু হয়। তবে এতে অংশ নেয়নি বিএনপিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দল।

আজকের সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলো হলা- ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।  

সংলাপে যায়নি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল।

ভেতর-বাহির-কুসিক নির্বাচনে ব্যর্থ হলো সরকারের ‘ইভ্যালি কৌশল’-মানবজমিন

এখন কুমিল্লায় যেভাবে প্রশ্ন উঠে গেল নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে, যেভাবে প্রশ্ন আসলো মাত্র একজন সংসদ সদস্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা নিয়ে, সরকারের প্রতিও প্রশ্ন উঠলো কেন একজন দলীয় এমপিকে তারা সামলালো না, তারপর কি সরকারের দিক থেকে আর কোনোভাবে বলা সম্ভব দলীয় সরকারের অধীনে একটা জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে?

কুমিল্লার নির্বাচনের ফলাফলে সরকারের প্রতি কুমিল্লা শহরের জনগণের এক বিরাট অনাস্থা প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলে খুব স্পষ্টভাবেই দেখা যায় দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রায় একই সমান ভোট পেয়েছেন কিন্তু তৃতীয় হওয়া প্রার্থী প্রায় ৩০ হাজার ভোট পেয়েছেন যিনি বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দুই প্রার্থীর মোট ভোট সরকারি দলের প্রার্থীর চেয়ে ৩০ হাজারের মতো বেশি। সত্যি বলতে পার্থক্যটা আরও অনেক বড়। বিএনপি’র বহিষ্কৃত দুই প্রার্থী স্বভাবতই ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেননি। যদি একজন মনোনয়ন পেয়ে সেটা করতেন, তাহলে সেটার সাড়া আরও অনেক বেশি হতো। শুধু সেটাই নয়, বিএনপি’র এই দুই জনকে বহিষ্কার করার পর দলের হাইকমান্ড খুব শক্ত হুমকি দিয়ে বলেছিল এই দু’জনের পক্ষে যেন বিএনপি’র কোনো নেতাকর্মী প্রচারণা এবং অন্যান্য নির্বাচনী কাজে অংশগ্রহণ না করেন। অথচ বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে স্থানীয় তো বটেই কেন্দ্রীয় নেতারাও সেখানে প্রচারণায় যেতে পারতেন। তাহলে ফল আরও কতোটা ধানের শীষের পক্ষে আসতো সেটা নিশ্চয়ই বুঝি আমরা।

ওদিকে সরকারি দলের ক্ষেত্রে একজন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা এবং সংসদ সদস্য জনাব বাহাউদ্দিন বাহারসহ আওয়ামী লীগের সকলের মরিয়া চেষ্টার পরও তাদের প্রার্থী খুব ভালো কিছু করেননি। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর একটি তুলনামূলক সুবিধাও ছিল। জনাব সাক্কু পরপর দুইবার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পর পর দুইবার দায়িত্বে থাকা তার বিরুদ্ধে এন্টি-ইনকাম্বেন্সি ফ্যাক্টর উস্কে দেয়ার কথা। মজার ব্যাপার সেই হিসাবও আওয়ামী লীগের পক্ষে যায়নি।

অনেকে বলেন- স্থানীয় নির্বাচনে স্থানীয় নানা বিষয় প্রধান চালিকাশক্তি, জাতীয় ফ্যাক্টর নয়। আমি বরং বলতে চাই, বাংলাদেশে এখন ঘটে ঠিক উল্টোটা- দীর্ঘদিন জাতীয় পর্যায়ে সত্যিকার নির্বাচনের স্বাদ না পাওয়া মানুষ নির্বাচনের স্বাদ মেটানোর চেষ্টা করেন স্থানীয় নির্বাচনে। জাতীয় পর্যায়ে সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধতার প্রতিক্রিয়া এসে পড়ে স্থানীয় নির্বাচনে। আমি তাই, নিশ্চিতভাবে মনে করি এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারকে লালকার্ড দেখিয়েছে কুমিল্লার মানুষ।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোটাদাগে দুইটি খুঁত পাওয়া গেছে। এর একটি হলো নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার শেষ পর্যায়ে ৪৫ মিনিটের জন্য ফলাফল ঘোষণা বন্ধ রাখা এবং তারপর সরকারদলীয় প্রার্থী খুব ন্যূনতম ব্যবধানে জয়ী হওয়া। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী জনাব মনিরুল হক সাক্কুর অভিযোগ মতে কোনো একটা ফোন পেয়ে রিটার্নিং অফিসার এ কাজটি করেছেন। রিটার্নিং অফিসার এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন তবে আমরা এর বিস্তারিত আলোচনায় ঢুকছি না। 

এই নির্বাচনে সবচেয়ে বড় যে খুঁতটি তৈরি হয়েছে সেটি হলো নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কিছু করতে একেবারেই ব্যর্থ হওয়া। জনাব সাক্কুর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে প্রমাণ পায় জনাব বাহার নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন। তাই তারা সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী তাকে সেখান থেকে চলে আসতে বলেন। 

জনাব বাহার এই চিঠির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট সেটার কারণ দর্শানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে বলেন। কিন্তু হাইকোর্ট সেই চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করেননি। হাইকোর্টের রায়ের পর নির্বাচন কমিশনের প্রধান আইনজীবী স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন বাহারকে দেয়া চিঠির কার্যকারিতা ঠিক আছে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যাবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেই ব্যবস্থা নেয়নি। কেন সেই ব্যবস্থা নেয়নি শেখার জন্য বরং উদ্ভট সব বক্তব্য আমাদের সামনে এসেছে।

নির্বাচন কমিশনের পিছু হটা নিয়ে এক কমিশনার রাশেদা সুলতানা কুমিল্লায় গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আইনি কাঠামো যেভাবে আছে, সেভাবে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। উনি (বাহাউদ্দিন) আইন মানেন না, আইনপ্রণেতা। আমাদের ব্যর্থ বলেন কেন আপনারা? একজন সম্মানিত লোককে টেনেহিঁচড়ে নামানো কমিশনের কাজ নয়।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জনাব বাহারের এলাকায় থেকে যাওয়া নিয়ে বলেন, ‘ইসির নির্দেশনা পাওয়ার পর একজন সংসদ সদস্য এটাকে অনার না করলে কমিশনের তেমন কিছু করার নেই। আমাদের এমন কোনো ক্ষমতা নেই যে, কাউকে জোর করতে পারি। আমরা তো আর কাউকে কোলে করে নিয়ে যেতে পারি না।’

একেবারে সাম্প্রতিক বিষয় বলে ইভ্যালি নিয়েই আলোচনা করা যাক। এই প্রতিষ্ঠানটি মানুষকে অবিশ্বাস্য কম দামে নানা পণ্য দিতে শুরু করেছিল। বাজার মূল্যের তুলনায় দুই-তৃতীয়াংশ, এমনকি অর্ধেক দামে মানুষ ফ্রিজ, টিভি, মোবাইল ফোন, মোটরসাইকেলসহ নানা পণ্য কিনতে পারছিল। বাস্তবেই বেশ কিছু মানুষ এমন পণ্য হাতে পেয়েছিল। এভাবে পাওয়া পণ্য একটা সময়ে শুধু ব্যক্তিগত ব্যবহার না, পরিণত হয়েছিল ব্যবসায়। মানুষ ইভ্যালি থেকে পণ্য পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বিক্রি করে দিলেই বেশ কিছু নগদ টাকার লাভ পেয়ে যাচ্ছিল।

এভাবে পণ্য পাওয়া নতুন নতুন মানুষকে ইভ্যালির কাছে অগ্রিম টাকা দিয়ে পণ্য পেতে আগ্রহী করেছিল। শুধু নতুন মানুষ নয়, একবার যারা পণ্য পেয়েছিলেন, তারা আরও পণ্য কিনতে আগ্রহী হয়েছেন। আগেই যেমন বলেছি এভাবে পণ্য কেনা একটা বেশ লাভজনক ব্যবসার হাতছানি হয়েছিল অনেকের কাছে। সেসব মানুষ কষ্টের সঞ্চয় এনে, ঋণ করে, স্বর্ণালঙ্কার এমনকি জমি বিক্রি করে ইভ্যালির হাতে টাকা তুলে দিয়েছিলেন অবিশ্বাস্য কম মূল্যে পণ্য পাবার জন্য। এরপর কোম্পানিটি বন্ধ হওয়া এবং মালিক গ্রেপ্তারের অনেক আগেই শুরু হয়েছিল পণ্য সরবরাহ করা নিয়ে অবিশ্বাস্য গড়িমসি। শুধু সেটাই না, মানুষ পণ্য পাবার আশা বাদ দিয়ে টাকা ফেরত চাইলে সেটাও দেয়া হচ্ছিল না।

মানুষকে শুরুতে ভীষণ বড় টোপ দিয়ে, শুরুতে সেই টোপ গ্রহণকারীর আস্থা অর্জন করে তার এবং আরও অনেকের কাছ থেকে কিছুদিন পরেই বিরাট দাঁও মেরে কেটে পড়াÑ সারা পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতিটা পঞ্জি স্কীম তাদের প্রতারণাটি করে ঠিক এই নীতিতে। পন্থার কিছুটা ভিন্নতা থাকে মাত্র।

দলীয় সরকারের অধীনে সব দলকে নির্বাচনে আনার জন্য বর্তমান সরকার এই ‘ইভ্যালি কৌশল’ নিয়েছিল এই দফায় প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। নির্বাচন কমিশন গঠন করে জাতীয় নির্বাচনের আগে সেই কমিশনের অধীনে কিছু স্থানীয় সরকার নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলকভাবে করে দেখানোর চেষ্টা করা যে দলীয় সরকারের অধীনেও নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম আওয়ামী সরকারের সময় নির্বাচন কমিশন ছিল জনাব রকিব উদ্দিনের নেতৃত্বে। দলীয় সরকারের অধীনেই সেই কমিশন দেশের অনেকগুলো সিটি করপোরেশন নির্বাচন করে। ভালোভাবে হওয়া সেই নির্বাচনগুলোর প্রত্যেকটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা হেরে যায়। ফলে সরকারের পক্ষে জোর গলায় দাবি করা সম্ভব ছিল যে, দলীয় সরকারের অধীনেই এতই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া সম্ভব যে, তাতে একের পর এক সিটি করপোরেশনে সরকারসমর্থিত প্রার্থীরা হেরে যায়। উদ্দেশ্য স্পষ্ট, এমন নির্বাচন দেখে প্রলুব্ধ হয়ে বিএনপি সহ বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনে যাবে। এরপর ইভ্যালি এবং ডেসটিনি’র মতো প্রতিষ্ঠান যা করে, বড় দাঁও মারার সুযোগ আসার পর, (এই ক্ষেত্রে সংসদ নির্বাচন) সেটা মেরে দেবেন।

আমি খুব অবাক হয়ে দেখি দেশের মিডিয়া এবারকার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে ‘নির্বাচন কমিশনের প্রথম পরীক্ষা’ জাতীয় শিরোনাম করছিল। এটা অবিশ্বাস্য। প্রথম শ্রেণির প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে কি এসএসসি পাস করা যায়? প্রথম শ্রেণির প্রশ্নে ১০০ পরীক্ষা দিয়ে তাতে অসাধারণ ফল করা কেউ এসএসসি পাস করবেনই, সেই নিশ্চয়তা কীভাবে দেয়া যায়?

নির্বাচন কমিশনকে সরকার যদি অনেকগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিনা বাধায় করতে দেয়, এমনকি সরকার যদি চাপ দেয় সঠিকভাবে করার জন্য, তাতেও কি এই নিশ্চয়তা কোনোভাবে দেয়া যায় যে, সরকার জাতীয় নির্বাচনটি সঠিকভাবে করতে দেবেন? নূরুল হুদা কমিশনের মতো একটি নির্বাচন মিশন যারা বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে একেবারে তছনছ করে ফেলেছে, তাদের অধীনেও তো কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কু আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন। সেই নির্বাচন দিয়ে কি বোঝা গিয়েছিল ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে কী হতে যাচ্ছে? এত কিছুর পরও এই নির্বাচন কমিশনের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার আলাপ সরকারের দিক থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং আমরা অনেকেই সেটা বুঝে, কিংবা না বুঝে এই অর্থহীন আলাপে যুক্ত হয়েছি। 

২০১৮ সালে নির্বাচনের নামে যা হয়েছে সেই পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে এবারকার সংসদ নির্বাচনের প্রতি নানা আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের কঠোর দৃষ্টি থাকার কথা। র‌্যাব এবং এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর সরকারের ভেতরেও নিশ্চয়ই কিছুটা নড়চড় হয়েছে। আমেরিকা চরম প্রশ্নবোধক নির্বাচনের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। নিকারাগুয়ার চরম কারচুপিপূর্ণ নির্বাচনের কারণে কয়েক মাস আগে অনেকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমেরিকা।

সরকারের কৌশল হওয়ার কথা সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভালো হলে সেটা বিদেশিদের দেখিয়ে তাদের আশ্বস্ত করে তাদের দিয়ে সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসার জন্য বিরোধীদের চাপ দেয়ানোর চেষ্টা করতে পারতেন। আর বিএনপি সহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে আসলে ২০১৮ সালের মতো এত বড় ‘ডাকাতি’ না করে তুলনামূলকভাবে সহনীয় কিছু করে ফেলতে পারতো সরকার।

এখন কুমিল্লায় যেভাবে প্রশ্ন উঠে গেল নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে, যেভাবে প্রশ্ন আসলো মাত্র একজন সংসদ সদস্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা নিয়ে, সরকারের প্রতিও প্রশ্ন উঠলো কেন একজন দলীয় এমপিকে তারা সামলালো না, তারপর কি সরকারের দিক থেকে আর কোনোভাবে বলা সম্ভব দলীয় সরকারের অধীনে একটা জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে? 

ইভ্যালি কৌশল’ এবার সরাসরি কাজ করার কথা ছিল না। বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ছাড়া তারা কোনোভাবেই নির্বাচনে যাবে না। তারা সঠিক। ২০১৮ সালের পর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রশ্ন আসার কি আর কোনো প্রশ্ন আসে? তবে এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, বিদেশিদের কথা মাথায় রেখে সরকার এগিয়ে যাচ্ছিল ‘ইভ্যালি কৌশল’ নিয়েই। কিন্তু কুমিল্লায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যা ঘটলো, তাতে এই কৌশল যে মাঠে মারা গেল, সেটা বলাই বাহুল্য। 

এবার ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

জল্পনায় সিলমোহর, মমতার প্রস্তাবিত যশবন্ত সিনহাকেই রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করল বিরোধীরা-আনন্দবাজার পত্রিকা/সংবাদ প্রতিদিন

সর্বসম্মতিক্রমে বিরোধী শিবিরের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হলেন যশবন্ত সিনহা। মঙ্গলবার দিল্লিতে ১৮ বিরোধী দলের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে যশবন্তের নামে সিলমোহর দেওয়া হয়েছে। এদিন সকালেই ‘বৃহত্তর বিরোধী স্বার্থে কাজ করার লক্ষ্যে’ তৃণমূল ছাড়েন যশবন্ত। তখন থেকেই জল্পনা ছিল তিনিই রাষ্ট্রপতি পদে বিরোধীদের প্রার্থী হবেন। সেই জল্পনাতেই সিলমোহর পড়ল।বস্তুত, রাষ্ট্রপতি পদে বিরোধীদের প্রার্থী হিসাবে এর আগে শরদ পওয়ার, ফারুখ আবদুল্লাহ, গোপালকৃষ্ণ গান্ধীদের নাম ভেসে আসছিল। তবে বিভিন্ন কারণে এরা লড়াই থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন। সূত্রের দাবি, এরপরই এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হিসাবে যশবন্ত সিনহার নাম প্রস্তাব করেন। মঙ্গলবার ১৮টি বিরোধী দল বৈঠকে বসার আগেই মোটামুটি যশবন্তের নাম চূড়ান্ত হয়েই গিয়েছিল। বৈঠকে শুধু সরকারি সিলমোহরটুকু পড়ল। কংগ্রেস এবং বামেরাও মমতার ঠিক করে দেওয়া প্রার্থীকে মেনে নিতে একপ্রকার বাধ্য হল।

৪-৫ বছর পর বদলে যাবে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পে নিয়োগ প্রক্রিয়া! ইঙ্গিত সেনার উপপ্রধানের-সংবাদ প্রতিদিন

অগ্নিপথ নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভের মধ্যে বড়সড় ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন ভারতীয় সেনার (Indian Army) ভাইস চিফ বা উপপ্রধান বি এস রাজু। তাঁর দাবি, অগ্নিপথের মাধ্যমে নিয়োগের এই প্রক্রিয়া অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করা। এবং যদি প্রয়োজন পড়ে তাহলে ৪-৫ বছর পর এটা বদলানো হতে পারে।বস্তুত দেশজুড়ে যতই বিক্ষোভ হোক, সরকার যে এই অগ্নিপথ প্রকল্প প্রত্যাহার করবে না, সেটা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছে। মঙ্গলবারও প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভিকে সিং (VK Singh) তথা কেন্দ্রীয় সরকারের অসামরিক বিমান পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী ভিকে সিং বলে দিয়েছেন, যদি কারও ইচ্ছা না হয়, তাহলে সে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে না। তার জন্য এইভাবে প্রতিবাদ জানানোর কোনও অর্থ নেই।বস্তুত সব ধরনের বিক্ষোভ উপেক্ষা করেই অগ্নিবীরদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে দেবে সেনা।

আরও লেখা হয়েছে, অগ্নিপথ বিক্ষোভে বাতিল ট্রেন, অথচ নিয়মের জটিলতায় ফেরত মিলছে না টিকিটের দাম, বাড়ছে ক্ষোভ। অগ্নিপথ (Agnipath) বিক্ষোভের জেরে ট্রেন বাতিলের রেশ চলেছে সোমবারও। তবে এদিন পূর্ব রেলের ১২টি ট্রেন বাতিল ও ১১টি দূরপাল্লার সময়ের পরিবর্তন করা হয়েছে। পূর্ব রেল জানিয়েছে, বাতিলের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমছে। রবিবার বাতিল ছিল ২৭টি ট্রেন। গত শুক্রবার বাতিল ছিল ৩২টি, শনিবার ২৯টি। পরিস্থিতি ক্রমে স্বাভাবিকতার দিকে বলে রেলের দাবি।

এদিকে বেশ কয়েকটি ট্রেন একেবারে প্রথম দিন থেকে বাতিলে সেই ট্রেনের যাত্রীদের দুর্দশা চরমে। মোকামা প্যাসেঞ্জার প্রথম থেকেই বাতিলে বহু সাধারণ যাত্রী পড়ে রয়েছেন হাওড়া স্টেশনে। তাদের পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত সংকটজনক। পয়সায় টানও পড়েছে। সোমবার এইসব প্রায় সাড়ে চারশো যাত্রীকে হাওড়া স্টেশনে খিচুড়ি খাওয়ার ব্যবস্থা করে জিআরপি (GRP)।

অসমের বন্যায় মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৮০, ভারী বৃষ্টির সতর্কতা গুয়াহাটিতে-আজকাল

অসমের বন্যা পরিস্থিতি শোধরানো দূরের কথা, ক্রমশ আরও ভয়াবহ হচ্ছে। মঙ্গলবার মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৮০। রাজ্যের ৩৪টি জেলায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪৭,৭২,১৪০ জন। ২,৩১,৮১৯ জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলেও ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিসংখ্যান দিয়েছে অসমের বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ। বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধার করতে গিয়ে কপিলি নদীর জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছেন এক পুলিশ আধিকারিক এবং কনস্টেবল। ব্রহ্মপুত্র, কপিলি, বেকি, পাগলাদিয়া এবং পুথিমারি নদীর জল বহু জায়গায় বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২১

 

ট্যাগ