জুলাই ১৭, ২০২২ ২১:১৬ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা বজনুর্দ্ শহরের কয়েকটি প্রাকৃতিক নিদর্শনের সঙ্গে খানিকটা পরিচিত হবার চেষ্টা করেছি। আজ আমরা যাবো এই প্রদেশেরই দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর জজরোমের দিকে।

পুরাতত্ত্ব গবেষকদের কাছে এই শহরটি পুরাতত্ত্বের বেহেশত হিসেবে পরিচিত। জজরোম শহরের কেন্দ্রিয় শহরটিও জজরোম নামেই বিখ্যাত। বজনোর্দ শহর থেকে এক শ তেত্রিশ কিলোমিটার দূরত্বে জজরোম শহরটি অবস্থিত। কাশানের সিয়াল্‌ক টিলা, দমগনের হেসর টিলা কিংবা ঐতিহাসিক ইয়াহিয়া টিলার মতোই প্রাচীন শহর এই জজরোম। তার মানে এই শহর কমপক্ষে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার বছরের পুরোণো শহর। শহরের আবহাওয়াও অত্যন্ত উপযোগী। এ কারণেই শহরের বিস্তার খুব দ্রুত লক্ষ্য করা গেছে।

সবচেয়ে প্রাচীন যে মৃৎশিল্পের নমুনা এই শহরের প্রাচীন টিলা কালাতে হাসান থেকে পাওয়া গেছে সেই মৃৎ শিল্পটি খ্রিষ্টপূর্ব চার হাজার বছর আগেকার। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দে এই এলাকায় এমন কিছু কওম বা গোত্র বসবাস করতো যারা ধূসর রঙের মৃৎ পাত্র ব্যবহার করতো। পুরাতাত্ত্বিক ইতিহাস এবং গবেষণায় দেখা গেছে ইসলাম-পূর্ব কাল থেকেই জজরোমের ইতহাস যথেষ্ট উজ্জ্বল। হিজরি পঞ্চম এবং সপ্তম শতাব্দির যেসব কবর কিংবা মসজিদ এখানে লক্ষ্য করা যায় সেসব থেকেও এই দাবির পক্ষে সমর্থন মেলে। হাবিবুস সায়ের নামক গ্রন্থে মাশহাদ, গোরগা, দমগন,ইস্ফাহান, রেই কিংবা কাজভিন শহরের পাশাপাশি জজরোম শহরের নামও বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। এই উল্লেখ থেকেই জজরোম শহরের গুরুত্ব ফুটে ওঠে।

জজরোম শহরটি কেন্দ্রিয় মরুভূমি অঞ্চলে অবস্থিত হবার কারণে কিংবা ঐতিহাসিক বাহার পাহাড়ের সঙ্গে লাগোয়া হবার কারণে সবুজের সমারোহে সমৃদ্ধি লাভ করেছে। বিচিত্র গাছ গাছালি আর উদ্ভিদে পরিপূর্ণ এই জজরোম শহর। আর এই সবুজ বন-বনানির সুবাদে এখানে একদিকে যেমন উদ্ভিদ বৈচিত্র লক্ষ্য করা যাবে তেমনি এসব বন হয়ে উঠেছে বিভিন্ন জাত ও প্রজাতির পশুদের নিরাপদ আবাসস্থল। যেসব জন্তু জানোয়ার এখানে দেখতে পাওয়া যায় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: এশিয় প্রজাতির ইরানি চিতাবাঘ, পাহাড়ি ছাগল, মেষ, রাম ছাগল, তিতির, বনবেড়াল ইথ্যাদি।

এখানে রয়েছে বিশাল শিকার নিষিদ্ধ এলাকা যাকে অভয়ারণ্য বলা যায়। মিয়নদাশ্‌ত নামের এই অভয়ারণ্যটির আয়তন পঁচাশি হাজার হেক্টর। জজরোম শহর থেকে পূর্বদিকে অবস্থিত এই অভয়ারণ্যটি ইরানি চিতাবাঘের সবচেয়ে প্রাচীন বনাঞ্চল। একইভাবে উত্তর খোরাসান প্রদেশের একমাত্র শহর জজরোম যে শহরটির সঙ্গে প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ শহরের রেল যোগাযোগের সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। আর যোগাযোগ ব্যবস্থার চমৎকৃতির কারণে জজরোম শহরের গুরুত্ব স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গেছে। জজরোম শহরে রয়েছে ঐতিহাসিক এবং পুরাতাত্ত্বিক অসংখ্য নিদর্শন। এগুলোর উপস্থিতির কারণে শহরটি পুরাতত্ত্ব গবেষকদের কাছে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়ে আসছে।

উত্তর খোরাসান প্রদেশের অন্যতম প্রধান শহরের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়ে উঠেছে এই জজরোম। প্রাচীন ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই এলাকায় মূল্যবান নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক পাহলাভন টিলা, হেইদারন টিলা। রয়েছে জজরোম জামে মসজিদের মতো মূল্যবান স্থাপনা। জজরোমের অন্তত তেপ্পান্নটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা জাতীয় ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়েছে। এদিক থেকে বিচার করলে জজরোম শহর ঐতিহাসিকভাবে যে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোধ হয় বলারই অপেক্ষা রাখে না। এছাড়াও এখানে রয়েছে গোত্রীয় ও কওমগত নানা বৈচিত্র্য। এখানে যেমন রয়েছে ফার্সদের বসবাস তেমনি রয়েছে কুর্দি, তুর্কিসহ আরও বহু গোত্রের আবাস। এইসব বৈচিত্র্যের সুবাদে জজরোমের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধিও উল্লেখযোগ্য রকমে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এখানকার রীতি-রেওয়াজ, আচার-প্রথা ইত্যাদির পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ কিছু ঐতিহ্য জজরোমের পর্যটন আকর্ষণ বৃদ্ধি করেছে।

এবারে যাওয়া যাক ভিন্ন প্রসঙ্গে। নরিন কেল্লা একটি নামকরা দূর্গ জজরোমের। কেবল যে ঐতিহাসিক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ তাই নয় বরং প্রাচীনত্ব এবং সৌন্দর্যের দিক থেকেও এই দূর্গটি দর্শনীয়। পাঁচ হাজার বছর আগেকার কেল্লা এটি। বলা যায় জজরোম শহরের গোড়াপত্তন ঘটেছে এই কেল্লাকে ঘিরেই। কত চড়াই উৎরাই পেরিয়ে কতরকমের বিপর্যয় আর উত্থান-পতনের নীরব সাক্ষী এই কেল্লা-তা বলাই বাহুল্য। এ যেন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জজরোমের প্রাচীন ফটকের পাশেই এই নরিন কেল্লা। পাশেই রয়েছে শহরের প্রাচীন হাম্মামখানা আর জামে মসজিদ।

সাম্প্রতিক শতকগুলোকে যেসব পর্যটক এই জজরোম শহর সফর করেছেন তাদের প্রায় সকলেই এই কেল্লাটি পরিদর্শন করেছেন এবং তাদের নিজস্ব ভ্রমণকাহিনীতে সেই গল্পের উল্লেখ করেছেন। কেল্লাটি গড়ে উঠেছে কৃত্রিম টিলার ওপর। প্রায় তিন শ ষাট বর্গমিটার আকৃতির ওই কেল্লাটির এখন ধ্বংসাবশেষই লক্ষ্য করা যাবে। ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনটি উনিশ শ সাতাত্তর সালের দিকে ইরানের জাতীয় ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ