ডিসেম্বর ১৬, ২০২২ ২০:০০ Asia/Dhaka

রংধনু আসরের কাছের ও দূরের শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? বাংলাদেশ, ভারতসহ পৃথিবীর যে প্রান্তে বসেই এ আসর শুনছো- সবার প্রতি রইল রংধনুর সাত রং শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশাকরি পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো ও সুস্থ আছো। আজকের আসরে তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আব্দুর রশীদ এবং আমি আকতার জাহান।

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই স্বীকার করবে যে, কখনো কখনো কোনো কাজ করব করব বলে আর করা হয়ে ওঠে না। এভাবেই দিনের পর দিন অনেক কাজ জমে যায়। এর নামই ‘অলসতা’।

অলসতা মানে কর্মবিমূখতা। নিষ্ক্রিয় অথবা কর্মবিমূখ কিংবা উদ্যমহীন ব্যক্তিকে অলস বলা হয়। আলসেমি নিজের ও সমাজের অবক্ষয় ডেকে আনে। অলসতা একটি জাতির উন্নতির পথে হুমকিস্বরূপ। অলসতা মানুষের শিরাগুলো এমন ভাবে খেয়ে নেয়, যেভাবে লোহাকে মরিচা খেয়ে নেয়।

বন্ধুরা, অলসতা নিয়ে আজকের আসরে কয়েকটি মজার গল্প শোনাব। এরপর থাকবে অলসতা দূর করার কয়েকটি টিপস। আর সবশেষে থাকবে একটি গান। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানটিও তৈরি করেছেন আশরাফুর রহমান। তাহলে প্রথমেই গল্প শোনা যাক।

কৃষক ও তার দুই ছেলে

এক কৃষকের দুই ছেলে। ছেলে দুটি যেমন অলস, হাবা ও অকম্মার ধাড়ি ছিল। কৃষক বড় ছেলেকে কোনো কাজের হুকুম দিলে সে বলে, ‘আমি পারব না।’ ছোটকে দেখিয়ে বলত ওকে বলো। ছোট ছেলেকে বললে সেও বলত, ‘আমি পারব না।’ বড়কে দেখিয়ে দিত।

ছেলেদের আলসেমি দেখে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে কৃষক বলল, ‘ঠিক আছে, আমি যে কাজ করতে বলব, তোরা দুজনাই মিলে তা করবি।’

সেই থেকে কৃষক যে কাজ করতে বলে, দুই ছেলেই মিলে তা করে। মাঝেমধ্যে উল্টাপাল্টা কাজও করে। কৃষক অবশ্য সে জন্য বিশেষ কিছু বলে না। কারণ, সে জানে ওরা দুটোই হাবা গোছের।

একদিন কৃষক বাজার থেকে একটি সুই আনতে বলল। দুই ছেলেই বাজারে গিয়ে একটি সুই কিনল। এখন এই সুই কে বহন করে নেবে, তা নিয়ে ওরা ভীষণ তর্কাতর্কি শুরু করে দিল। বড় বলল ছোটকে ‘তুই নে’। ছোট বলে, ‘আমি কেন নেব? তুই নে।’ ) অবশেষে স্থির করল সুইটি দুজনেই বহন করে নেবে। কিন্তু এতটুকু সুই দুজনে কীভাবে বয়ে নেবে, তা ভেবে ভেবে দুজনাই ভারি মুশকিলে পড়ে গেল।

এদিকে এক ভদ্রলোক অনেকক্ষণ ধরে ওদের তর্কাতর্কি শুনে কাছে এসে ব্যাপার কী জানতে চাইলেন। সব শুনে ভদ্রলোকটি বললেন, ‘এ আর এমন কঠিন ব্যাপার কী? তোমরা আমার সঙ্গে চলো, এক্ষুনি এর সমাধান করে দিচ্ছি।’

ভদ্রলোকটি ছিলেন খুবই চালাক-চতুর। অচিরেই তিনি বুঝতে পারলেন, ওরা দুজনই হাবা ও বেকুব। তিনি মনে মনে হাসতে হাসতে ওদের দুজনকে তাঁর বাড়ি নিয়ে এলেন।

তাঁর বাড়িটি বাজারের কাছাকাছিই ছিল। ভদ্রলোক তাঁর বাড়ি এনে একটি কুড়াল ওদের হাতে দিয়ে বড়সড় মোটা ও লম্বা একটি কলাগাছ কাটতে বললেন।

ওরা কয়েকটি কোপ দিয়ে অত বড় মোটা ও লম্বা কলাগাছটি কেটে ফেলল। অবশ্য কলাগাছটি গোড়া থেকেই কেটেছিল। ভদ্রলোক তখন সুইটি কলাগাছটির ঠিক মাঝখানে গেঁথে ওদের বললেন, যাও, এবার গাছটি দুজনে কাঁধে করে নিয়ে যাও। তাতে তোমাদের দুজনারই সুইটি নেওয়া হবে।

অতঃপর ওরা দুজনে তখন কলাগাছটি কাঁধে করে অনেক কষ্টে হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়ি নিয়ে এল। ঘামে ওদের শরীর জর্জরিত এবং ভীষণ ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। কলাগাছটি বাড়ির উঠোনে ধপাস করে ফেলে দিয়ে ওরা উঠোনেই বসে পড়ল।

কৃষক এ অবস্থা দেখে ভারি অবাক হয়ে ওদের বলল, একি কাণ্ড। তোরা এ কলাগাছটি কোথা থেকে নিয়ে এলি। তোদের কে বলেছে কলাগাছ আনতে?

ওরা বলল, ‘সাধে কী আর এ কলাগাছ এনেছি। দেখো ওই গাছের মাঝামাঝি সুইটা গাঁথা রয়েছে। এক ভদ্রলোক আমাদের এই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। নতুবা আমরা তো ভেবেই পাচ্ছিলাম না, কেমন করে, কী করে এমন ছোট্ট সুই দুজনে বয়ে নিয়ে যাব?’

কৃষক তখন কলাগাছ থেকে সুইটি বের করে এনে ওদের বলল, ‘ওরে আহাম্মকের দল, তোরা কবে মানুষ হবি? আর কবে তোদের বুদ্ধিশুদ্ধি হবে।

এ অবস্থায় বাড়ির কিছু লোক এসে ঘটনা শুনে কৃষককে বলল, তোমার এ ছেলে দুটি চিরকালই এমন হাবা ও বেয়াক্কেল থাকবে। ওদের কোনো দিনই আর জ্ঞানবুদ্ধি হবে না। 

সেরা অলস

এক দেশে দিন দিন অলসের সংখ্যা বাড়তে লাগলো। কেউ কাজ করতে চায় না।

শুধু বসে বসে খাওয়ার চিন্তা। সেই দেশের রাজা এই নিয়ে মহা চিন্তায় পড়ে গেল। এভাবে চলতে থাকলে দেশতো রসাতলে যাবে। কিছু একটা করতে হবে।

ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে রাজার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। রাজা তাড়াতাড়ি মন্ত্রীকে ডেকে পাঠালেন। মন্ত্রী আসলে রাজা বললেন, মন্ত্রী মশাই আপনি সারা দেশে ঢোল পিটিয়ে দিন, রাজা দেশের যত অলস আছে সবাইকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে। তিনদিন পর সকলকে রাজদরবারে নিমন্ত্রণ।

মন্ত্রী রাজার নির্দেশমত সারা দেশে ঢোল পিটিয়ে দিল। এই খবর শুনে সব অলস নির্দিষ্ট দিনে রাজদরবারে হাজির হলো। রাজা বললেন, তোমরা সবাই যে অলস আমি তা কিভাবে বুঝবো। এজন্য তোমাদের একটা পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষায় যে ফেল করবে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। সবাই এ শর্তে রাজি হলো।

রাজা মন্ত্রীকে ডেকে বললেন, এদের সবাইকে একটা ঘরে নিয়ে যাও। মন্ত্রী সবাইকে নিয়ে একটা ঘরে ঢুকিয়ে দিল। তারপর রাজার নির্দেশমত ঘরের সমস্ত দরজা জানালা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়া হলো। আস্তে আস্তে আগুন বাড়তে লাগলো। ভেতরে অলসেরা যে যার মত শুয়ে বসে থাকলো।

একসময় সারা ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়লো। ছাদের কাঠ ভেঙ্গে পড়লো। তখন অলসদের টনক নড়লো। এভাবে থাকলে নির্ঘাত মারা পড়বে। তখন যে যার মত দরজা ভেঙ্গে পালাতে শুরু করলো। যে যার মত পালিয়ে বাঁচলো, শুধু দুজন অলস রয়ে গেল। তারা বেরও হলো না।

এক অলস আরেক অলসকে বললো, গরম হাওয়া ছাড়ে কে? একটু বাতাস করতো।

দ্বিতীয় অলস বলল: নড়তে পারবো না তুই কর।

প্রথম অলস বলল: আমি পারলে তোকে বলতাম নাকি?

এমন সময় একটা জ্বলন্ত কাঠ পাশে এসে পড়লো। তা দেখে প্রথম অলস বলল: ঢিল মারে কে রে দেখতো।

দ্বিতীয় অলস : তুই দেখ আমি পারবো না।

প্রথম অলস : তুই পারিসটা কি?

দ্বিতীয় অলস : কেন, ঘুমাতে পারি।

প্রথম অলস : তাহলে ঘুমা, আমিও ঘুমাইলাম। পরিবেশটা অনেক সুন্দর।

দ্বিতীয় অলস : ঠিক কইছস। এক্কেবারে মনোরম পরিবেশ!

এ দৃশ্য দেখে রাজা মন্ত্রীকে বলতে লাগল, ওই দুইজনকে তাড়াতাড়ি বের করো। নইলে কাবাব হয়ে যাবে। এই দুজনই অলসদের সেরা। এদের কোন কাজ করতে হবে না।

তিন অলস

একবার তিন অলস বন্ধু খেতে বসেছিল। কিন্তু খাওয়ারে লবন কম হয়েছিল। তখন প্রশ্ন উঠল কে লবন আনতে যাবে ??

তিন বন্ধুর কেউই চেয়ার ছেড়ে উঠতে রাজি হলো না। এসময় এক অলস প্রস্তাব দিল, "যে আগে কথা বলবে সেই লবন আনবে।" বাকি দুই বন্ধুই রাজি হয়ে গেল।

সময় যায়... কেউই কথা কথা বলে না... আরো সময় যায়... কেউই কথা বলে না...তিন দিন হয়ে গেলো কেউই আর কথা বলে না...শেষে ক্ষুধার জ্বালায় তারা আধমরার মত হয়ে পড়ল।  

প্রতিবেশীরা এসে দেখে তাদেরকে মৃত ভেবে শ্মশানে নিয়ে যায় শেষকৃত্য করার জন্যতিনজনকে চিতায় চড়ানো হলো।

প্রথম অলসের চিতায় যেই মাত্র আগুন দেওয়া হবে, সে চেচিয়ে ওঠে "আমি মরিনি, আমি জীবিত.. আমি জীবিত ."

এসময় পাশের চিতা থেকে বাকি দুই অলস বলে উঠল: "যা, এবার লবন নিয়ে আয়"

বন্ধুরা, অলস ব্যক্তিদের নিয়ে প্রচলিত কয়েকটি গল্প শুনলে। তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, অলস ব্যক্তিরা আজকের কাজ আগামীকালের জন্য রেখে দেয়। কিন্তু এই আগামীকাল আর আসে না। সে কারণে তোমরা নিশ্চয়ই অলসতা পরিহার করে কর্মোদ্যমী হতে চাও! দিনের কাজ দিনই শেষ করে জীবনে সফল হতে চাও! তাহলে আলস্য দূর করতে হবে। আসরের এ পর্যায়ে অলসতা দূর করার কয়েকটি উপায় জানিয়ে দিচ্ছি।

একজন মানুষের একাধিক কাজ করার ইচ্ছা প্রবণতা রয়েছে। এ রকমভাবে কাজ করলে শরীরের অলসতা না আসলেও অনেক সহজে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে সকল প্রকার কাজেগুলো করার ক্ষেত্রে আগ্রহ পুরোপুরীভাবে হারিয়ে যায়। এতে আরো বেশি অলসতা সৃষ্টি হয়। তাই একাধিক কাজ না করে একটি করে কাজ শেষ করার পর পরবর্তী যে কাজগুলো থাকবে ঠিক একইরকমভাবে এক এক করে চালিয়ে যেতে হবে।

যখন কারো কাঁধে বড় কোনো কাজের দায়িত্ব এসে পড়ে তখন অনেকের মাথায় অলসতা বিরাজ করে। সেজন্য কাজটিকে অবশ্যই ভাগ করে নেওয়ার প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে অনেকগুলো ছোট ছোট কাজের মধ্যে দিয়ে সেই বড় কাজটি সহজে সম্পন্ন হবে। এভাবেই ছোট ছোট কাজগুলোর মাধ্যমে সহজে করে ফেলা সম্ভব হবে এত খুব বেশি পরিশ্রম হবে না।

নিজেকে বোঝানোর জন্য নিজের মনের সাথে কথা বলা প্রয়োজন, নিজেকে ভালোভাবে বোঝানোর বিশেষে অনেক ভালো কাজ করে। অলসতা বেড়ে যাওয়া কারণে যে সমস্ত কাজগুলো পড়ে রয়েছে, সে সব কাজগুলো নিজেকে নিজের মন এবং মস্তিষ্কে বোঝাতে হবে। নিজের সাথে নিজের কাজের বিষয়ে কথা বলতে হবে।

সারাদিনে বা সপ্তাহে কোন কোন কাজটি করা জরুরি তার একটি তালিকা করে ফেলা যেতে পারে। সেই তালিকা অনুযায়ী কাজগুলো কিছুটা এগিয়ে রাখলে জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে।

যে বিষয়গুলো অলসতা তৈরি করে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। অলস সময়গুলোর সঙ্গী হয়ে থাকে স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ বা টেলিভিশন। এসব থেকে কিছু সময়ের জন্য হলেও দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে।

বন্ধুরা, অলসতা দূর করার কয়েকটি উপায় জানলে। এবার তোমাদের জন্য রয়েছে একটি প্রেরণামূলক গান। গানের কথা লিখেছেন জাকারিয়া আল হোসাইন, সুর করেছেন আবু রাইহান। আর গেয়েছে শিশুশিল্পী সুরাইয়া আক্তার সাইফা। (গান)

জীবনকে অপরূপ করে গড়ে তোলার জন্য পৃথিবীর জ্ঞান সাগরে ডুব দেওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়েছে এই গানে। তো বন্ধুরা, তোমরা সবাই ভালোভাবে পড়াশোনা করবে- এ কামনাই গুটিয়ে নিচ্ছি রংধনুর আজকের আসর থেকে। কথা হবে আবারো আগামী আসরে।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৬