ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩ ১৫:৫৬ Asia/Dhaka
  • সুন্দর জীবন-পর্ব ২৮ (স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক)

গত পর্বে আমরা কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতার অংশ হিসেবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সফল যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় এই পর্বে আমরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সফল যোগাযোগের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করব।

মনে রাখবেন দাম্পত্য জীবনে কখনোই স্বামী-স্ত্রীর কার্যকর পারস্পরিক যোগাযোগ ভেঙে পড়তে দেওয়া যাবে না। আর বাস্তবতা হলো, যোগাযোগ একটি দক্ষতার ব্যাপার। তাই সবাই এটি অর্জন করতে পারে। দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে পরস্পরের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খুঁত বা ত্রুটির দিকে দৃষ্টি না দিয়ে অপর পক্ষ কী বলতে চাচ্ছে, তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।  প্রথমে অন্য পক্ষের ক্ষোভ, অভিযোগ, নালিশ ধৈর্য সহকারে সহমর্মিতার সঙ্গে শুনতে হবে। পরে ঠাণ্ডা মাথায় ও সুকৌশলে ভিন্নমত থাকলে তা বুঝিয়ে বলতে হবে। কারো কথা থামিয়ে দেওয়া হলে ব্যক্তি অপমানবোধ করতে পারে এবং রেগে যেতে পারে। যিনি কথা বলছেন তিনি ভাবতে পারেন তাকে অবহেলা করা হচ্ছে। আর অবহেলা মানুষের গভীর সম্পর্ককে দুর্বল করে দেয়। তাকে অবহেলা করা হচ্ছে- জীবনসঙ্গীর মনে এমন ধারণা বদ্ধমূল হতে দেওয়া যাবে না। স্বামী-স্ত্রী যদি পরস্পরের কথা মনোযোগ দিয়ে না শোনেন তাহলে পরস্পরের প্রয়োজন ও চাহিদা তারা জানতে পারবেন না। এ কারণে আমরা যদি অপর পক্ষের কথা থামিয়ে দেই তাহলে সিদ্ধান্ত গ্রহণেও আমাদের ভুল হতে পারে।


কোনো কোনো মনোবিজ্ঞানীর মতে, স্বামী ও স্ত্রী যখন পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেন তখন তাদের উচিৎ কথা শোনার পর নিজের উপলব্ধি প্রকাশ করা। ধরুন আপনি আপনার স্ত্রীর কথা শুনছেন, তার কথা শেষ হলে আপনি তার কথার সারমর্ম তাকেই শোনানোর চেষ্টা করুন। এরপর জানতে চান আপনি ঠিক বুঝেছেন কিনা? এমনটি করা সম্ভব হলে আপনার স্ত্রী সারমর্ম শুনে বুঝতে পারবেন আপনি তার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছেন কিনা। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা ভুল ব্যাখ্যা করা হলে তিনি তা ধরিয়ে দিতে পারবেন এবং ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা কেটে যাবে। একইসঙ্গে আপনার স্ত্রী বুঝতে পারবেন আপনি তার কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন এবং আপনি তাকে সত্যিই গুরুত্ব দেন। (মিউজিক)


যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরেকটি ত্রুটি হলো ধারণা-ভিত্তিক বা অনুমান-নির্ভর কথা বলা। বিষয় যা-ই হোক না কেন, অনুমান করে কথা বলা উচিৎ নয়। এর ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হওয়া থেকে শুরু করে আশপাশের সবার সঙ্গেও দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে পরস্পরের বিষয়ে অনুমান-নির্ভর কথা বলা পরিহার করতে হবে। 'তুমি আমাকে পছন্দ করো না', 'তোমার কাছে আমার পরিবারের কোনো মূল্য নেই', 'তুমি মিথ্যা বলছ'- এ  ধরণের বাক্য সাধারণত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মাঝে-মধ্যেই আদান-প্রদান হয়। এগুলো একেবারেই অনুমান-নির্ভর কথাবার্তা। এসব বাক্য ব্যবহার না করে পরস্পরের প্রতি সুধারণা পোষণ করলে তা সুখ ও শান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। অনেক স্বামী-স্ত্রীই আছেন পরস্পরকে জীবন দিয়ে ভালোবাসেন, কিন্তু মুখে সেই ভালোবাসা প্রকাশ করেন না। কাজে-কর্মে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটানোর পাশাপাশি মুখেও কোমল কণ্ঠে ভালোবাসার কথা বলুন। 


এছাড়া প্রতিদিন কিছু ইতিবাচক উষ্ণতা ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করুন। আপনার জীবনসঙ্গীকে নানা কাজে সমর্থন দিন ও উৎসাহ যোগান। সুযোগ পেলেই একটু সেবাযত্ন করুন। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে কখনো প্রতারণার আশ্রয় নেবেন না। দুজন দুজনকে সম্মান করুন, সহযোগিতা করুন। আর যদি কখনো ভুল করে ফেলেন তাহলে অবশ্যই ক্ষমা চান। ক্ষমা চাওয়া ও ক্ষমা করার মাঝে সম্মান বাড়ে, কমে না। এতে আপনাদের ভালোবাসা আরো গাঢ় হবে। আপনি হয়তো কোথাও বেড়াতে গেছেন, আপনার স্বামী বা স্ত্রীর জন্য অবশ্যই কিছু আনবেন হোক তা কমদামী কিছু। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে দু'জনকে দু'জনার কথা ভাবতে হবে। কোনো বিষয়ে মতের মিল না হলে তা সোজা-সাপ্টা বলে দিন, আপনি কী চান। আর কেন চান তা যুক্তি দিয়ে তুলে ধরুন। মনে রাখতে হবে, আপনার যেমন চাওয়া আছে তেমনি আপনার সঙ্গীরও আছে। আপনার সঙ্গীর কোনো আচরণে আপনি আহত হয়েছেন, তাই বলে অন্যের কাছে তার সমালোচনা কখনোই করবেন না। এতে আপনার প্রতি তার আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ কমে যাবে। 

সংসার দুজনের, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের, এটা কারো একার নয়। তাই সংসারের দায়িত্ব দুই জনকেই সামলাতে হবে। নানা কাজে একে অপরকে সহায়তা করতে হবে। এতে দু’জনেরই সময় যেমন বাঁচবে, তেমনি বাড়বে দু’জনের সময় কাটানোর সুযোগ। বাড়িতে বা অফিসে কাজ করতে করতে একঘেয়েমি ধরে যায়। তাই প্রয়োজন খানিকটা অবকাশ। প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে সুযোগ পেলে একটু ঘুরে আসুন, বাইরে বেড়াতে যান তাহলে একঘেয়েমি কেটে যাবে, ভালো লাগবে। মনে রাখবেন, রাগ বা ক্রোধ মানুষের যুক্তি-বুদ্ধি ও জ্ঞানের দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়। এর ফলে রাগ বা ক্রোধের কারণে মানুষ অনেক উল্টাপাল্টা কাজ করে ফেলে, ভুল বুঝার আগেই বড় ক্ষতি হয়ে যায়। তাই দাম্পত্য জীবনসহ সব ক্ষেত্রেই রাগ নিয়ন্ত্রণের আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। তর্ক বা  বাগযুদ্ধে না গিয়ে যুক্তি দিয়ে পরস্পরের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরুন। অনেকের একটা বদভ্যাস হলো তারা রেগে গিয়ে অপর পক্ষকে বকাঝকা ও গালাগালি করেন। তারা গালাগালি করে অপর পক্ষকে দমন করতে চান। বকাঝকা বা গালাগালি সংসারে মারাত্মক তিক্ততা নিয়ে আসে এবং পারস্পরিক সম্মানবোধ নষ্ট করে দেয়। এর ফলে অন্যদের কাছেও নিজের সম্মানহানি ঘটে। গালাগালির অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। 


যোগাযোগ একটা দক্ষতার ব্যাপার। তাই সবাই এটা অর্জন করতে পারে। বাস্তবতা হচ্ছে, দাম্পত্যজীবনে সফল যোগাযোগের মাধ্যমে সুখী হওয়া সম্ভব।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ